ঊরুর মেদ কি খারাপ?

সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, মেদ বা চর্বি মানেই তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আদতে বিষয়টা এমন নয়। ত্বকের নিচে মেদ জমা হলেই যে আপনার রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি থাকবে বা অন্যান্য জটিল সমস্যার ঝুঁকি থাকবে, তা নয়।

ঊরুতে যে মেদ থাকে, তা জমা হয় ত্বকের নিচেই। আর ত্বকের নিচে যে মেদ জমা হয়, তা থেকে ‘অ্যাডিপোনেকটিন’ নামের একধরনের রাসায়নিক নিঃসরণ হয়। এই রাসায়নিক প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ফলে হৃদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। বুঝতেই পারছেন, ঊরুর মেদ খুব একটা খারাপ নয়, যদি অন্যান্য খারাপ মেদ না থাকে।

অন্যদিকে পেটের ভেতরে থাকা বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আশপাশে জমা হওয়া মেদ হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যাঁদের এ ধরনের মেদ থাকে, তাঁদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেশি। হাত, পা কিংবা ঊরুতে তেমন মেদ না থাকলেও যদি কারও কেবল পেটের ভেতর এমন মেদ থাকে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি রোগের আশঙ্কা বেশি থাকে।

আরও পড়ুনস্থূলতা রোধ করবেন যেভাবে২৮ মার্চ ২০২২গবেষণায় যা পাওয়া গেছে

কিছু গবেষণার ফলাফল বলছে, যাঁদের ঊরুর মাপ ৬০ সেন্টিমিটার বা এর কম, তাঁদের আয়ু তুলনামূলক কম। আর তাঁদের অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে হৃদ্‌রোগে, অন্যদের তুলনায় তাঁদের হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। ঊরুর মাপ কম হওয়ার অর্থ হলো, সেখানে মেদ এবং পেশি দুটির পরিমাণই কম।

এ থেকে বোঝা যায়, তাঁদের ঊরুর পেশি আদতে খুব একটা সুগঠিত ছিল না। আরও ধারণা করা যায়, স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চার দিক থেকে তাঁরা বেশ খানিকটা পিছিয়ে ছিলেন। অর্থাৎ ব্যায়ামের প্রতি সম্ভবত খুব একটা যত্নশীল ছিলেন না তাঁরা।

তবে এসব গবেষণা থেকে এমনটাও বলা যায় না যে ঊরুর মাপ দীর্ঘায়ু বা সুস্থতার জন্য নিশ্চিত কোনো নির্দেশক।

আরও পড়ুনকোমরের মাপ দেখে যেভাবে স্বাস্থ্য বোঝা যায়১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১যেভাবে বোঝা যায় ঊরুর মাপ

ঊরুর মাপ নিতে হয় দাঁড়ানো অবস্থায়। ঊরুর মাঝামাঝি অংশ, অর্থাৎ যে অংশটি সবচেয়ে চওড়া, সেখানে ধরতে হয় মাপের ফিতা। খুব আঁটসাঁট করেও নয়, আবার ঢিলেভাবেও নয়। খেয়াল রাখতে হয়, ফিতাটি যেন উল্টে না যায়।

ঊরুর মাপ বাড়ানোর চেষ্টা করলেই যে কেউ সুস্থ থাকবেন, এমনটাও নয়.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গর্ভে একই সঙ্গে একাধিক সন্তান কেন আসে? এর ঝুঁকি কী?

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে যত নারী মা হন, তাঁদের মধ্যে প্রতি ২৫০ জনের মধ্যে একজনের যমজ সন্তান হয়। অর্থাৎ দুটি সন্তান গর্ভে আসে। একই সঙ্গে তিন সন্তান গর্ভে আসার ঘটনা ঘটে আরও কম, প্রতি ১০ হাজার জনে একজন।

একই সঙ্গে চার সন্তান জন্মের ঘটনা বিরল। প্রতি সাত লাখ মায়ের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। একবারে এর বেশি সন্তান জন্মের হার আরও কম। তবে একটির বেশি সন্তান গর্ভে থাকলেই তা মা ও সন্তানদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

কেন হয়

স্বাভাবিক নিয়মে একজন নারীর মাসিক চক্রে একটিমাত্র ডিম্বাণুই পূর্ণতা পায়। এই ডিম্বাণু একটি শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ফলে একটি ভ্রুণ সৃষ্টি হয়। এটিই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ব্যতিক্রম হতে পারে দুইভাবে।

১. একাধিক ডিম্বাণু পূর্ণতা পেলে সে ক্ষেত্রে সেগুলো একাধিক শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে একাধিক ভ্রুণ সৃষ্টি হতে পারে। প্রকৃতির নিয়মেই অল্প কিছু নারীর গর্ভে এভাবে একাধিক সন্তান আসে। আবার বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের প্রভাবেও একাধিক ডিম্বাণু পূর্ণতা পেতে পারে এবং ঘটতে পারে এমন ঘটনা।

২. একটি ডিম্বাণুর সঙ্গে একটি শুক্রাণু মিলিত হয়ে যে ভ্রুণ তৈরি হয়েছে, প্রাকৃতিকভাবেই তা বিভাজিত হয়ে দুটি ভ্রুণ তৈরি হতে পারে। তখন যমজ সন্তান হয়। এ ক্ষেত্রে সন্তানদের চেহারা ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থাকে একই রকম।

আরও পড়ুনপ্রসব–পরবর্তী মানসিক সমস্যার কারণ, ঝুঁকি ও করণীয়০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫গর্ভের সন্তানদের ঝুঁকি

একাধিক সন্তান গর্ভে এলে গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

গর্ভকাল পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রসববেদনা শুরু হয়ে যেতে পারে, পানি ভাঙতে পারে।

প্রসবের সময় আগে মাথা না বেরিয়ে শরীরের অন্য অংশ, এমনকি নাড়িও বেরিয়ে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসব হয় না।

অপরিণত অবস্থায় জন্মানো শিশুর ওজনও থাকে কম, শ্বাসপ্রশ্বাসও ব্যাহত হতে পারে।

দীর্ঘদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হতে পারে এই শিশুদের, হতে পারে মৃত্যুও।

জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকিও থাকে এসব শিশুর।

গর্ভে থাকার সময়েও মারা যেতে পারে এই শিশুরা।

গর্ভফুলজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন‘ব্রেন ডেড’ নারী যেভাবে যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন০৫ জানুয়ারি ২০২৩মায়ের জটিলতা

একাধিক সন্তান গর্ভে থাকলে বমি বমি ভাব, বমি, দুর্বলতা, রক্তস্বল্পতা, ওজন বৃদ্ধি—সবই হয় অতিরিক্ত মাত্রায়।

তাই স্বাভাবিক চলাফেরা, এমনকি ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

হতে পারে শ্বাসকষ্ট।

রক্তচাপজনিত মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।

প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেশি থাকে এই মায়েদের।

একাধিক সন্তান গর্ভে এলে করণীয়

একাধিক সন্তান গর্ভে আসা মানেই উচ্চ ঝুঁকি। তাই এমনটা হলে হবু মায়ের চাই বাড়তি যত্ন। অবশ্যই বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে মাকে। পরিবারের সদস্যদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে তাঁর প্রতি। পর্যাপ্ত পুষ্টি, পানি, বিশ্রাম ও হালকা ব্যায়াম—রোজকার জীবনে এসব বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। মায়ের মনেরও যত্ন নিতে হবে। প্রসবের পরিকল্পনা করা উচিত এমন হাসপাতালে, যেখানে প্রয়োজন হলে নবজাতকদেরকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখার সুযোগ আছে।

আরও পড়ুনযে ভাষায় কথা বলেন কেবল ‍দুই যমজ ভাই০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্পের ওপর কেন হামাস এতটা আস্থা রাখছে
  • গর্ভে একই সঙ্গে একাধিক সন্তান কেন আসে? এর ঝুঁকি কী?