ছিলেন টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান। ছিলেন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ী দলের খেলোয়াড়। সাড়ে তিনশর বেশি স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। ৩৭ পেরিয়ে যাওয়ার ডেভিড মালান অভিজ্ঞতার মূল্য কতটা বেশি সেটার প্রমাণ দিলেন চট্টগ্রামের ২২ গজে। 
ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল ভুলবোঝাবুঝিতে রান তাড়ার শুরুতেই রান আউট। যে গ্যালারিতে তামিম তামিম ধ্বনিতে মুখরিত ছিল সেখানে বিষাদের ছায়া। চিটাগং কিংসের দেওয়া ১২২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় চতুর্থ ওভারে ঘরের ছেলে ৮ রানে রান আউট হন। সিঙ্গেল নেওয়ার ডাক দিয়েও তামিমকে মাঝপথে ফিরিয়ে দেন ইংলিশ ওপেনার। 
ভুল বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে হাত উঠিয়ে সরির ইঙ্গিত দেন। এরপর রান তাড়ার দায়িত্বটা মালান নিজ কাঁধে নিয়ে নেন। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে হাল ছাড়েননি। ফিফটি তুলে নেন। আগের ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন ৪৯ রানে। আজ ৪১ বলে ৫৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। তার ফিফটির পর তামিমকে ডাগআউট থেকে দাঁড়িয়ে করতালি দিতে দেখা গেছে। 

মালান ও মোহাম্মদ নবীর অবিচ্ছিন্ন ৪৪ বলে ৬৯ রানের জুটিতে চিটাগং কিংসকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বরিশাল। ১৯ বল আগে জয় তুলে নিয়ে পূর্ণ ২ পয়েন্ট নিশ্চিত করে বিপিএলের বর্তমান শিরোপা ধারীরা। ২১ বলে ৩ চারে ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন নবী। 
রান পাননি তাওহীদ হৃদয় (১)। মুশফিকুর রহিম (১১) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১৬) ভালো শুরুর পর থেমে যান। ৫৩ রানে ৪ উইকেট হারানো বরিশালকে সেখান থেকে জয়ের পথে নিয়ে যান মালান ও নবী। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৫৬ রান তুলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান মালান।

উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য সহায়ক ছিল না, পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে জানিয়েছেন মালান। একটু ধীর গতির ও বল স্কিড করায় উইকেটে সময় দিতে হয়েছে তাকে। 
যেই ভুলটা করেছেন চিটাগংয়ের ব্যাটসম্যানরা। চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে চিটাগং কিংস করতে পারে মাত্র ১২১ রান।  ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারে চিটাগং ১৫ রান পায়। স্বদেশি পেসার জাহানদাদের ওভার থেকে দুই চার ও এক ছক্কা আদায় করে নেন উসমান খান। ডানহাতি ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় ওভারেও স্পিনার তানভীরকে দুই চার হাঁকান। এমন উড়ন্ত শুরুতে চিটাগংয়ের দর্শকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। কিন্তু কে জানত তৃতীয় ওভার থেকে তাদের ইনিংসে নেমে আসবে বিপর্যয়?

আরো পড়ুন:

২০ বলে এলোমেলো চিটাগং, স্কোরবোর্ডে পুঁজি কেবল ১২১

প্রথমবার বিপিএলের ট্রফি রাজশাহীতে

তৃতীয় ওভারে দ্বিতীয় বলে উসমান নিজের উইকেট উপহার দিয়ে আসেন রিপন মন্ডলকে। পরের ১৯ বলেই স্রেফ এলোমেলো চিটাগং। একে একে সাজঘরের পথ ধরেন গ্রাহাম ক্লার্ক, পারভেজ হোসেন ইমন, হায়দার আলী ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী। শেষ ৩ উইকেট পেয়েছেন ফাহিম আশরাফ। রিপন ও আশরাফের ২০ বলের দাপটে পাওয়ার প্লে’তে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে চিটাগং।

সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টায় সপ্তম উইকেটে আরাফাত সানীকে নিয়ে ৩৭ বলে ৩১ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন। মনে হচ্ছিল তাদের জুটিতে চিটাগংয়ের পুঁজি বাড়বে। কিন্তু ধারাবাহিক রান না আসায় বড় শট খেলতে গিয়ে ভাঙে এই জুটি। সর্বোচ্চ ৩৫ রান করে মিঠুন সাজঘরে ফেরেন তানভীরের বলে সীমানায় মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে। আউট হওয়ার আগে ২১ বলে কোনো বাউন্ডারি পায়নি চিটাগং। চাপ বাড়ায় বড় শট খেলার বিকল্প ছিল না। কিন্তু টাইমিং না মেলায় গড়বড় হয়।

চিটাগংয়ের শেষ ভরসা ছিলেন আরাফাত সানী। তার ব্যাটেই শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়। ৩৪ বলে ২৭ রান করা সানী হাঁকান ২ বাউন্ডারি। এছাড়া খালেদ ৯ ও শরিফুল ৫ রান তুলে রাখেন অবদান।

প্রথম ম্যাচ হারের পর টানা তিন ম্যাচ জিতে ঘরের মাঠে এসেছিল চিটাগং কিংস। এসেও জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু টানা দুই ম্যাচ হেরে একটু ব্যাকফুটে চলে গেলে তারা। সব মিলিয়ে সাত ম্যাচে এটি তাদের তৃতীয় পরাজয়। অন্যদিকে টানা দ্বিতীয় জয়ে বরিশাল দারুণ ছন্দে রয়েছে। সাত ম্যাচে পাঁচ জয়ে প্লে অফ নিশ্চিতের পথে তামিমের দল। 

ঢাকা/ইয়াসিন/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল ত ম ম ইকব ল উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।

আরো পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।

যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।

লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।

বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ