শেরপুরে নাচগানের আসর ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা
Published: 19th, October 2025 GMT
শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নে নাচগানের আসর বন্ধকে কেন্দ্র করে একদল ব্যক্তির সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে ‘ইত্তেফাকুল উলামা’ নামের একটি সংগঠনের নেতা মামলাটি করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে ২৫ জনকে। অজ্ঞাতনামা আসামি অর্ধশতাধিক। এসব তথ্য নিশ্চিত করে শেরপুর সদর থানার ওসি জুবায়দুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।
পুলিশ স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের কয়েকজন যুবক গত শুক্রবার রাতে জারিগানের আয়োজন করেন। এর আগে এলাকার মাওলানা আজিজুর রহমান ওই আসর না বসানোর অনুরোধ জানান। কিন্তু আয়োজকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলেমদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যেকোনো মূল্যে অনুষ্ঠান করার ঘোষণা দেন। রাত ৯টার দিকে শতাধিক ব্যক্তি কামারেরচর বাজারে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে আসরে গেলে আয়োজকেরা পালিয়ে যান। গানের মঞ্চ খুলে দেওয়ার পর ফেরার পথে তাঁদের ওপর অজ্ঞাতনামা একদল দুবৃত্ত ইটপাটকেল ছোড়ে এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে মাওলানা আজিজুর রহমান, হাফেজ শাহীনুর রহমান (শাহীন) ও মোকলেছুর রহমান আহত হন।
আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর মুসল্লিরা রাতেই চরভাবনা কান্দাপাড়া মোড়ে বিক্ষোভ করেন। পরদিন শনিবার সকালে চরাঞ্চলের কওমি মাদ্রাসায় পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নন্দীরবাজার এলাকার ঝগড়ারচর-বকশীগঞ্জ সড়ক প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। তাঁরা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে বিচারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন মুসল্লিরা।
রাতেই ইত্তেফাকুল উলামার প্রচার সম্পাদক মাওলানা ফকুরুজ্জামান বাদী হয়ে শেরপুর থানায় মামলা করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.
গানের আয়োজকদের একজন মো. মিস্টার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, জারিগানে কোনো অশ্লীলতা হয়নি। কয়েকজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে নিয়ে এসে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। হামলার ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা কাউকে মারিনি এবং কারও ওপর হামলাও করিনি।’
চরমোচারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘এসব আসরে নাচগানের নামে মেয়েদের এনে অশ্লীলতা করা হয়। এই অশ্লীলতা বন্ধের প্রতিবাদ করায় মুসল্লিদের ওপর হামলা করা ঠিক হয়নি। আমরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাই। তবে এ নিয়ে গ্রামবাসী আতঙ্কে আছেন।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা-১ আসনে জামায়াতের চমক, চূড়ান্ত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী
প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে খুলনা-১ আসনে বড় চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। প্রাথমিক পর্যায়ে মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন করে সংগঠনটির হিন্দু শাখার নেতা কৃষ্ণ নন্দীকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
খুলনা জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা এমরান হোসাইন বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রার্থী পরিবর্তনের এ কৌশলের মধ্যে দিয়ে আসনটিতে নিজেদের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী দলটি।
আরো পড়ুন:
‘আমি রাজমিস্ত্রির ছেলে, খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছি’
লটারির মাধ্যমে ৫২৭ থানার ওসি পদে রদবদল
এর আগে বুধবার বিকেলে খুলনা মহানগর জামায়াতের কার্যালয়ে জেলার কর্মী সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি জেনারেল ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক।
জামায়াতের হয়ে প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কৃষ্ণ নন্দীও। জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাসে এবারই প্রথম অন্য ধর্মের কোনো ব্যক্তিকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলো, যা স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এক মাস ধরে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কৃষ্ণ নন্দীর নাম রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে অবশেষে তাকে প্রার্থী করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকায়। তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার ‘জামায়াতে ইসলাম সনাতনী‘র সভাপতি। এ উপজেলা ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। প্রায় এক বছর ধরে গোলাম পরওয়ারের ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় বিভিন্ন সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীর সক্রিয় উপস্থিতি দেখা গেছে। তার নেতৃত্বে হিন্দু নারী-পুরুষের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো।
মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কৃষ্ণ নন্দী বলেছেন, ‘আমাকে কেন্দ্রে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে জামায়াতের আমিরসহ উচ্চ পর্যায়ের নেতারা ছিলেন। তারা আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। আমি তাদের নির্দেশনা পেয়েছি। এলাকায় গিয়ে কাজ শুরু করব।”
এর আগে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন মাওলানা আবু ইউসুফ। তাকে নিয়ে প্রশ্ন করলে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, “বুধবার জামায়াতের আমির আমাদের দুজনকে বুকে বুক মিলিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি নিজেই আমার জন্য প্রচারণায় নেমেছেন। জামায়াতের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।”
ডুমুরিয়ার চুকনগর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ নন্দী ২০০৫ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার সভাপতি এবং স্থানীয় সনাতন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “কঠোরভাবে আদর্শভিত্তিক জামায়াত হলো ন্যায় ও সততার দল। এখানে দুর্নীতি নেই, চাঁদাবাজি নেই, মাদক নেই। শান্তি-সমৃদ্ধি আনার দল বলে আমি জামায়াতকে বেছে নিয়েছি। ২০০৫ সাল থেকে এটি করছি, হঠাৎ নয়।”
আগের সরকারের আমলে কোণঠাসা ছিলেন বলে অভিযোগ তার। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দাপটে থাকা এই এলাকায় তিনি জামায়াত করার কারণে বিভিন্নভাবে চাপের মুখে ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন।
এর আগে খুলনা-১ আসনে মাওলানা মো. আবু ইউসুফকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল জামায়াত।
কৃষ্ণ নন্দী বলেন, “গত ১ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান খুলনায় এলে আমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। পরে আগের প্রার্থী মাওলানা ইউসুফকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে আমাকে প্রার্থী হিসেবে কাজ করতে বলা হয়। মাওলানা ইউসুফও আমার সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।”
খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুন্সী মঈনুল ইসলাম বলেন, “খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। বাবু কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্তে সবাই দাঁড়িপাল্লার হয়ে কাজ করবেন।”
সাবেক প্রার্থী মাওলানা আবু ইউসুফ বলেছেন, “দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমাকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক করা হয়েছে। আমি কৃষ্ণ নন্দীর বিজয়ের জন্য সর্বাত্মক কাজ করব। তার পক্ষে আমি প্রচারণা শুরু করেছি। যেহেতু আমাকেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক করা হয়েছে, সেহেতু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি যথাসম্ভব কাজ করব, ইনশাআল্লাহ।”
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক