৫ নারীর নেপালের ল্যাংটাং উপত্যকা জয়
Published: 23rd, January 2025 GMT
বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণি হিমালয়ের ল্যাংটাং উপত্যকা জয় করেছে বাংলাদেশের পাঁচ নারী। আট হাজার মিটার উচু এ পর্বতশৃঙ্গ নেপালের বাগমতি প্রদেশের রাসুওয়া জেলায় অবস্থিত। ল্যাংটাংয়ের প্রতিটি চূড়ায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়েছেন তারা।
এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদারের নেতৃত্বে এই নারীরা গত ২১ ডিসেম্বর থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত নেপালের লাংটাং হিমালয়ে শীতকালীন এ অভিযানে অংশ নেন। ১০৫ বছর আগে বাঙালি মুসলিম জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের লেখা ‘সুলতানাজ ড্রিম’ গত বছরের মে মাসে স্থান পায় জাতিসংঘের ইউনেস্কোর বিশ্বস্মৃতি বা মোমোরির তালিকায়। সেই অনুপ্রেরণায় পর্বত অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সুলতানাজ ড্রিম অনবাউন্ড’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন অবারিত।’
এ উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজন করা হয় ‘ফ্ল্যাগ ইন সেরিমনি: উইমেনস উইন্টার এক্সপিডিশন’ শীর্ষক প্রেস মিট। পর্বতারোহী সংগঠন অভিযাত্রী আয়োজিত এই বিশেষ পর্বত অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড মাস্টারকার্ড ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। অভিযানে ৫ হাজার ৫০০ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন ইয়ালা শৃঙ্গ, পাঁচ হাজার ১৪৫ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন সুরিয়া শৃঙ্গ এবং চার হাজার ৭৪৭ মিটার উঁচু গাঁসাইকুণ্ড শৃঙ্গ জয় করেন নারী অভিযাত্রীরা।
নাট্যব্যক্তিত্ব ত্রপা মজুমদারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে সুলতানাজ ড্রিম অনবাউন্ডের স্বীকৃতি আমাদের বড় অনুপ্রেরণা। এখন পঞ্চকন্যা হিমালয় জয় করেছে, সুলতানার স্বপ্ন পল্লবিত হচ্ছে। বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নানা কর্মসূচি বাংলাদেশ ও এর বাইরেও বিস্তৃত হয়েছে। প্রতি বছর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তার স্বপ্ন আরও প্রসারিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে সুলতানার স্বপ্ন শীর্ষক ‘পায়রাবন্দ থেকে উলানবাটোর’ ও সুলতানার স্বপ্ন শীর্ষক গ্রন্থপাঠ নিয়ে ভিডিও প্রদর্শনী হয়। পরে নিশাত মজুমদার মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, ইউনেস্কো ও মাস্টারকার্ড প্রতিনিধির হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন। এরপর পাচ নারীর দূর্গম পর্বতযাত্রার বিভিন্ন মূহুর্ত নিয়ে তৈরি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে পবর্তারোহী নারীরা শীতের সময়ে অভিযানে গিয়ে নানা ধরনের সঙ্কটে পরার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
নিশাত মজুমদার বলেন, ‘ইয়ালাপিতে আমরা যেদিন গেলাম, আমাদের কাছে কোনো পানি ছিল না। চারদিকে পানি কিন্তু আমার কাছে খাওয়ার মত কোনো পানি নেই। সব বরফ হয়ে ছিল। আমাদের কাছে যত গ্যাস ছিল, সব গ্যাস দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম বরফগুলোকে পানি করে খাওয়ার। অনেক মেয়ে আমাদেরকে বলছে, আমিওতো এখানে থাকতে পারতাম; আমিওতো একজন সুলতানা হতে পারতাম। এই মেসেজটাই জরুরি।’
দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য অর্পিতা দেবনাথ বলেন, ‘এই অভিযানের আগে তিনি তার সব লক্ষ্য একটা সীমানার মধ্যে ঠিক করতেন। আমি এটার বাইরে কোনোভাবে যেতে পারব না, এমন মনে হত। আমার মনে হয়েছে, এবার আমি আমার লিমিটেশনটা অতিক্রম করতে পারছি।’
পর্বতারোহী ইয়াসমিন লিসা বলেন, ‘আমরা যে বিমানে গিয়েছি, তার পাইলটও ছিলেন নারী। অর্থাৎ যাত্রার শুরুতে উপলব্ধি হয়, সুলতানা স্বপ্ন এভাবেই বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইয়ালা পিকে উপলব্ধি হয় বাতাসে মানুষ উড়ে যেতে পারে। প্রচণ্ড বাতাস ছিল। কিন্তু আমরা সব প্রতিবন্ধকতা দূরে সরিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছেছি। এটাই সুলতারা স্বপ্ন।’
তহুরা সুলতানা রেখা বলেন, ‘প্রকৃতিগতভাবে নারীদের যে সমস্যা হয় সেই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় পবর্তযাত্রার শুরুতেই। পুরোটা পথ তলপেটের ব্যাথা নিয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে। তবুও থেমে থাকিনি।’
দলের আরেক সদস্য মৌসুমি আক্তার এপি ওরফে এপি তালুকদার বলেন, ‘আজকে এখানে দাঁড়িয়ে আমি স্বপ্ন দেখছি; পাঁচজন সুলতানার জায়গায় একদিন ৫ হাজার বা ৫ লাখ এরকম সামিট করে আসবে এবং আমরা উল্লাস করব।’
স্বাগত বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অপর ট্রাস্টি সারা যাকের বলেন, ১০৫ বছর আগে বেগম রোকেয়া সুলতানার লেখাটি এ সময়েও অত্যন্ত জরুরি। কারণ, নারীরা এখনো পিছিয়ে আছে। তাই বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নও প্রাসঙ্গিক। তার লেখা আমাদের সাহস জোগায়। এটাকে মাথায় রেখে এই নারীদের পর্বতযাত্রা। এটি ভীষণভাবে সিম্বোলিক। নারীদের আলাদাভাবে উদ্যোগী হতে হবে যাতে পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়।
ইউনেস্কোর ঢাকার হেড অব কমিউসনিকেশন অ্যান্ড পাললিক এনগেইজমেন্টের নুসরাত আমিন বলেন, ‘পাঁচজন ‘সুলতানা’ পর্বত জয় করে দেশে ফিরেছেন। অর্থাৎ বেগম রোকেয়া সুলতানার স্বপ্ন এখনও অবারিত। সারাদেশে এই স্বপ্ন আরও ছড়িয়ে যাবে। ইউনেস্কো এ ধরনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সব সময় এ ধরনের উদ্যোগে ছিল এবং থাকবে।’
মাস্টারকার্ডের বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘এই পাঁচ নারী অসাধারণ কাজ করে এসেছেন। মাস্টার কার্ড পৃথিবীর কোনো দেশে এবারই প্রথম এমন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। আমরা এই কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পেরে আনন্দিত। আগামীতে কর্মসূচি ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখা থাকবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ক ত য দ ধ জ দ ঘর ইউন স ক
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল
ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।
বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।
প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সাড়ে চারটায় জামায়াতআজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলনজোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসআসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।