ভারতের উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে কমপক্ষে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৬০ জন। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বুধবার ভারতীয় পুলিশের তিনটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে মৌনী অমাবস্যা উপলক্ষে পবিত্র স্নানের জন্য নদীতীরে জড়ো হন লাখ লাখ মানুষ। প্রচণ্ড ভিড়ে সামনে এগোতে না পেরে ব্যারিকেড ভেঙে পায়ের নিচে চাপা পড়ে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোরের আলো ফোটার আগেই লাখ লাখ ভক্ত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মহাকুম্ভমেলার সবচেয়ে শুভদিনটি উপলক্ষে পবিত্র স্নান করতে জড়ো হন সেখানে। এ সময় প্রচণ্ড মানুষের ভিড়ে ঠেলাঠেলিতে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করেন পুণ্যার্থীরা। সেই ভিড়ে পড়ে গিয়ে চাপা পড়েন অনেকে।

পুলিশ সূত্রগুলো জানায়, মর্গে এ পর্যন্ত ৪০টি লাশ এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সংখ্যা আরও বাড়বে। জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বৈভব কৃষ্ণা বলেন, কতজন মারা গেছেন তা এখনও নিশ্চিতভাবে বলে যাচ্ছে না। মানুষের ভিড় ব্যবস্থাপনায় আমরা কাজ করছি। ড্রোন ফুটেজে দেখা যায়, লাখ লাখ পুণ্যার্থী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই মহাকুম্ভমেলার সবচেয়ে শুভদিনটি উপলক্ষে স্নানের জন্য আসছে।
ঘটনা সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন, কমপক্ষে ৪০টি মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এদিকে এ ঘটনায় ভারতের বিরোধী নেতারা সরকারের সমালোচনা করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন, অব্যবস্থাপনার কারণে কুম্ভমেলা ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। 

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব সমাবেশ এই হিন্দু উৎসবে গত দুই সপ্তাহে ইতোমধ্যে প্রায় ১৪৮ মিলিয়ন মানুষ অংশ নিয়েছেন। কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, এবার প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ এই পবিত্র স্নান করতে আসবেন। যেহেতু এটি একটি বিরল আকাশ গঙ্গা অ্যালাইনমেন্টের কারণে সবচেয়ে শুভদিন, যা ১৪৪ বছর ধরে চলে আসছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

চেনা রূপে বরিশাল নদীবন্দর, ঈদফেরত যাত্রীদের ভিড়

ঈদের পর কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপে বরিশাল নদীবন্দরে সেই চিরচেনা রূপ ফিরে পেয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর থেকেই বরিশাল নদীবন্দরে যাত্রীদের ঢল নামে। কে কার আগে এসে লঞ্চে জায়গা নেবেন, এ নিয়ে শুরু হয় জোর তৎপরতা। শুক্রবার বরিশাল নদীবন্দর থেকে সরাসরি ১২টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। এ ছাড়া ভায়া পথে আরেকটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।

বিকেলে বরিশাল নদীবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল পরিসরের পন্টুনে যাত্রীদের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাই নেই। ঘাটে ১২টি লঞ্চ নোঙর করা। লঞ্চগুলোর নিচতলা, দোতলা, তিনতলা এমনকি ছাদের ডেকে বিছানার চাদর বিছিয়ে অবস্থান নিয়েছেন অসংখ্য যাত্রী।

আরিফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আজ যে অবস্থা তাতে লঞ্চে জায়গা পাব বলে মনে হচ্ছিল না। তাই দুপুরের মধ্যে ঘাটে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি, তখনই সব লঞ্চের ডেক প্রায় পরিপূর্ণ। ভাগ্য ভালো যে একটু জায়গা পেয়েছি। কিছু পরে এলে হয়তো তা-ও পেতাম না।’

ঈদ উপলক্ষে এবার ঢাকা-বরিশাল নৌপথে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়েছিল ৩ জুন রাত থেকে। লঞ্চমালিকদের সূত্র বলছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশেষ সার্ভিসের জন্য তাঁরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। এর অংশ হিসেবে এ সার্ভিসে যুক্ত করা হয় অন্তত ১৬টি লঞ্চ। ঈদের এ বিশেষ যাত্রা চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত।

সূত্র জানায়, এবার ঈদের দীর্ঘ ছুটি হওয়ায় প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী গ্রামে ফেরেন। ঈদের পর দুই দিন যাত্রীদের তেমন ভিড় ছিল না। এ সময় চার থেকে ছয়টি লঞ্চ চলাচল করেছে, কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার বন্দর থেকে ১১টি লঞ্চ সরাসরি ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করেছে। আজ যাত্রীদের চাপ আরও বেড়ে গেলে লঞ্চের সংখ্যা বাড়িয়ে ১২টি করা হয়।

অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর নদীপথে যাত্রী সংখ্যা তলানিতে নামে। এ জন্য প্রতিদিন চার থেকে ছয়টি লঞ্চের বদলে দুটিতে নামিয়ে এনে রোটেশন প্রথা চালু করা হয়। তবে ঈদের যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায় বলে অতিরিক্ত লঞ্চ দিয়ে বিশেষ সার্ভিস চালু করা হয়েছে।

তবে ঈদযাত্রায় ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১ হাজারের জায়গায় এখন ১ হাজার ২০০ টাকা, ডাবল কেবিনের ভাড়া ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকার স্থলে ২ হাজার ২০০ টাকা এবং ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকার জায়গায় ৪০০ নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হলেও কেবিনের টিকিট মিলছে না। লঞ্চে গেলে কেবিন নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হলেও কালোবাজারে সিঙ্গেল কেবিন তিন হাজার এবং ডাবল কেবিন ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাকিবুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, শুক্রবার ঢাকায় যাওয়ার জন্য তিনি কোনো লঞ্চের কেবিন পাননি। কিন্তু কালোবাজারে তাঁর কাছে একটি সিঙ্গেল কেবিন তিন হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। দুই হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললেও তা পাননি।

জানতে চাইলে সুরভী শিপিং লাইনসের পরিচালক রেজিন উল কবির বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে আমরা সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার কম নিয়েই যাত্রী পরিবহন করি। এতে অনেক সময় আমাদের লোকসানে থাকতে হয়। কিন্তু ঈদের সময় সরকার-নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে তা কিছুটা পোষাতে হয়।’ কালোবাজারে টিকিট বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে মালিক বা লঞ্চের স্টাফদের সংশ্লিষ্টতা নেই। হয়তো বাইরের কেউ আগে নিজেদের নামে বুকিং দিয়ে এসব করতে পারে। বাইরের কেউ এমন করলে তো আমাদের কিছু করার থাকে না।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, দেশে নৌপথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বেশি যাত্রী চলাচল করে ঢাকা-বরিশাল পথে। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এই নৌপথে যাত্রীসংখ্যা কমে যায়। আগে যেখানে প্রতিদিন ছয় থেকে আটটি লঞ্চ চলাচল করত, এখন প্রতিদিন দুটি লঞ্চ চলাচল করে। তবে ঈদের সময় যাত্রীদের বাড়তি চাপ থাকে বরাবরই। এবার তা অনেক বেশি।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, এবার ঈদ উপলক্ষে ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় আগের চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী গ্রামে ফিরেছেন। তাই এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রী পাওয়া পাচ্ছে লঞ্চগুলোয়। বিশেষ করে ঈদের তিন দিন আগে এবং ঈদের দুই দিন পর থেকে যাত্রীদের এত চাপ যে তাঁদের দম ফেলার সময় নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় বন্ধ নেই ইসরায়েলের হামলা, ২৪ ঘন্টায় ৪১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা
  • আইআরজিসির বিমান শাখার প্রধানসহ ৭ কমান্ডার নিহত, নিশ্চিত করল ইরান
  • ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে ১০
  • ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা, এখন পর্যন্ত যা জানা গেল
  • ঈদের ছুটি শেষে ব্যাংক খুলেছে, ভিড় নেই তেমন
  • বাউবিতে কমনওয়েলথ এমবিএ, আবেদন করুন দ্রুত
  • ছুটি শেষে ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হচ্ছে কাল
  • টানা ১০ দিনের ছুটি শেষ, রবিবার খুলছে সরকারি অফিস
  • চেনা রূপে বরিশাল নদীবন্দর, ঈদফেরত যাত্রীদের ভিড়
  • টিভিতে দেখা যাবে ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস’