অনশনে থাকা তিতুমীর কলেজের ৩ শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক
Published: 2nd, February 2025 GMT
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে অনশনে থাকা তিন শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। রোববার দুপুরে মহাখালীতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাসেল।
তিনি বলেন, অনশনে থাকা তিন শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের প্রসাব তৈরি হচ্ছে না। তিনজনের মধ্যে একজনের প্রসাব হচ্ছে না। কিডনি প্রসাব তৈরি করার জন্য যে প্রক্রিয়া থাকে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সাত দফা দাবিতে টানা পাঁচ দিন ধরে অনশন কর্মসূচি পালন করে আসছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে চলছে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের কর্মসূচি। আজও সড়ক অররোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুরে বাঁশ দিয়ে তিতুমীর কলেজের সামনের দুই পাশের রাস্তা আটকে দেন তারা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে গত ২৯ জানুয়ারি থেকে তিতুমীর কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শনিবার দু’জনসহ এখন পর্যন্ত সাতজনকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি দুই শিক্ষার্থী হলেন– উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের মফিজুল ইসলাম ও বাংলা বিভাগের আবু নাঈম। এ ছাড়া অনশনরত ৯ শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করেছে। তাদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। একজন চিকিৎসক ও দু’জন নার্সকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধের কারণে ওই দিন মহাখালী থেকে গুলশান এবং গুলশান থেকে মহাখালী পর্যন্ত রাস্তার যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা দাবি পক্ষে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছেন তারা। এর আগে শুক্রবারও তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কটি অবরোধ করেন। সেদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে বিকেল ৪টার মধ্যে দাবি মানা না হলে আবার সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
আজ রোববারও আমরণ অনশনের পাশাপাশি ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি পালন করার কথা জানান তারা। এই কর্মসূচির আওতায় ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করা হবে। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিশ্ব ইজতেমা ও আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি শিথিলের কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবিগুলো হলো—
১.
২. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২০২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
৩. শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করতে হবে।
৪. ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুইটি বিষয় 'আইন' এবং 'জার্নালিজম' বিষয় সংযোজন করতে হবে।
৫. একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
৬. শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিত করতে হবে।
৭. আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ করতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ত ম র কল জ অনশন ত ত ম র কল জ র চ ক ৎসক অবর ধ অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
সাহেবগঞ্জ এলাকায় ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণ–অনশন
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকার ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণ–অনশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ–দিনাজপুর সড়কের কাটামোড় এলাকায় এ কর্মসূচিতে অংশ নেন শতাধিক সাঁওতাল ও বাঙালি নারী–পুরুষ। পরে বিকেল চারটার দিকে কয়েকজনকে শরবত পান করিয়ে অনশন ভাঙান আমন্ত্রিত অতিথিরা।
সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির এ কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির, বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক, ফারুক কবীর, সাঁওতাল নেতা স্বপন শেখ, প্রিসিলা মুর্মু, তৃষ্ণা মুর্মু, বিটিশ সরেন, গৌড় পাহাড়ি, রাফায়েল হাসদা, অলিভিয়া হেমব্রম, বার্নাবাস টুডু, লুইস মুর্মু, খিলন রবিদাস প্রমুখ। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে।
গণ–অনশনে বক্তারা বলেন, গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড নির্মাণ করার মতো সরকারের অনেক জমি পতিত আছে। কিন্তু বিরোধপূর্ণ সাঁওতালদের রক্তভেজা তিন ফসলি জমিতেই কেন ইপিজেড করতে হবে? এ আন্দোলন ইপিজেডের বিরুদ্ধে নয়; বরং বাপ–দাদার জমি উদ্ধারের জন্য তাঁরা আন্দোলন করছেন। এসব জমি উদ্ধার করতে গিয়ে তিন সাঁওতালকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের আজও গ্রেপ্তার করা হয়নি। দোষী ব্যক্তিদের বিচার হয়নি।
বক্তারা বিরোধপূর্ণ জমিতে ইপিজেড নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ, তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, সাঁওতাল–বাঙালিদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও পৈতৃক জমি ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
রংপুর চিনিকল সূত্রে জানা যায়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ হলে সাঁওতালরা দফায় দফায় এই জমি দখল করেন। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এসব জমিতে উচ্ছেদে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে শ্যামল হেমব্রম, রমেশ টুডু ও মঙ্গল মার্ডি নামে তিন সাঁওতাল নিহত হন। সেই সঙ্গে অন্তত ২০ জন আহত হন।
এ পরিস্থিতিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রংপুর চিনিকলের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেপজা) ইপিজেড বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে চিনিকলের জমিতে ইপিজেড নির্মাণের বিরোধিতা করে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি।