ইটনায় বিএনপির সভামঞ্চ ভাঙলেন দলীয় কর্মীরা
Published: 2nd, February 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের নির্দেশে তারেক রহমানের ৩১ দফা প্রচারের মঞ্চ ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার বিকেলে উপজেলার এলংজুরী বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার কোনো লোক নাই। তারা সবাই দলের লোক।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে ইটনার এলংজুরী বাজারে ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত ৩১ দফার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি নেতা আবদুর রহিম মোল্লা। তিনি সেখানে পৌঁছানোর আগেই মঞ্চ ভেঙে ফেলেন দলের কিছু নেতাকর্মী। পরে ভাঙা মঞ্চেই আবদুর রহিম মোল্লা সভা করেন। গতকাল রোববার তাঁর পক্ষের লোকজন মঞ্চ ভাঙচুরের প্রতিবাদে এলংজুরী বাজারে মিছিল করেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতা মো.
বিএনপির প্রবীণ কর্মী আবদুল খালেক বলেন, ‘এটা তো বিএনপির মঞ্চ, তারেক জিয়ার মঞ্চ– এই মঞ্চটাই ভেঙে দিল নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে আর এই উচ্ছৃঙ্খলতাই আবার শুরু হয়েছে।’
একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির আরেক নেতা জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনোদিন এদের বিএনপি করতে দেখিনি। তারা সবাই ৫ আগস্টের পরের বিএনপি এবং ফজলুর রহমানের গ্রুপ করে।’
বিএনপির জন্মের পর থেকে এমন ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী ঘটনা এখানে কোনোদিন ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূঞা। তিনি বলেন, ‘আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
ঘটনার বিষয়ে সাবেক জেলা প্রশাসক ও বিএনপি নেতা আবদুর রহিম মোল্লা বলেন, ফজলুর রহমান এ অঞ্চলে একটি বিতর্কিত নাম। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে অনুরোধ, বিএনপির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী বাকশালির লোক ফজলুর রহমানকে বহিষ্কার করা হোক।
এ বিষয়ে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার কোনো লোক নাই। তারা সবাই দলের লোক। আমি এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারব না। থানা কমিটিকে জিজ্ঞেস করেন।’
৩১ দফার আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফজলুর রহমান শিকদার ও জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সালাহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফজল র রহম ন র ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।