শেষ বলে ৪ মেরে ফাইনালে চিটাগং, খুলনার বিদায়
Published: 5th, February 2025 GMT
প্রথম ১৬ ওভারে ৪ উইকেটে ৯২। কিন্তু শেষ ৪ ওভারে আর ২ উইকেট হারিয়েই আরও ৭১ রান। মাত্র ২৪ বলের ভোজবাজিতে পাল্টে গেল খুলনা টাইগার্সের ইনিংস। ভোজবাজি বলাটা ঠিক হলো না বোধ হয়। এটাই তো টি-টোয়েন্টি!
খুলনা টাইগার্সের ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমায়ার আরেকবার দেখালেন, সেটা তিনি খুব ভালোভাবেই জানেন। তবে এরপর তা দেখিয়েছেন চিটাগং কিংসের দুই পাকিস্তানি খাজা নাফি আর হোসেন তালাতও। খুলনার ১৬৩ রানের জবাব দিতে নেমে ৩৫ রানে ২ উইকেট হারানোর পর জুটি বাঁধেন দুই স্বদেশি। ১৩তম ওভারে ২৫ বলে ৪০ রান করে তালাত আউট হওয়ার আগেই ৪২ বলের জুটিতে ৭০ রান। পরে নাফিও ফিরে যান ৪৬ বলে ৩ ছক্কা ও ৪ চারে ৫৭ রান করে। নাফি-তালাত জুটি ভাঙার পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে চিটাগং। ১১৩/২ থেকে ১৩০/৭ হয়ে যায় চিটাগংয়ের স্কোর।
আলিস আল ইসলাম আর আরাফাত সানি অবশ্য এরপরও হাল ছাড়েননি। শেষ ওভারে ১৫ রানের সমীকরণ মিলিয়ে চিটাগংকে দারুণ এক জয় এনে দেন তাঁরা। খুলনাকে ২ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় মোহাম্মদ মিঠুনের দল।
এর আগে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কাল খুলনার শুরুটা হয়েছিল কাঁপতে কাঁপতে। ৪ ওভার আর দলের ১১ রানের মধ্যে ফিরে যান ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও অ্যালেক্স রস। তার মধ্যেই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম বরাবরের মতো বাউন্ডারিনির্ভর ইনিংস খেলতে চেয়েছিলেন। ১৯ রানের মধ্যে ১৬-ই করেছেন চার চারে। তাঁর বাউন্ডারির অপেক্ষায় বল অপচয় হয়েছে। পাওয়ারপ্লেতে ওই ২ উইকেট হারিয়েই তাই খুলনার রান ছিল ৩০। অষ্টম ও নবম পরপর দুই ওভারে ফিরে যান নাঈম আর আফিফ হোসেন। ৪২ রানে ৪ উইকেট হারানো খুলনা যেন শেষ চারে আরও একটি ম্যাড়মেড়ে ম্যাচেরই সম্ভাবনা জাগাচ্ছিল।
খুলনার এমন কম্পমান শুরুর সঙ্গে তাল মিলিয়েই কিনা প্রথম ২১ বলে হেটমায়ার করেছিলেন মাত্র ২২ রান। কিন্তু তাঁর ৩৩ বলে ৬৬ রানের ইনিংসে পরের ৪১ আসে মাত্র ১০ বলে। বুঝতেই পারছেন, শেষ ৪ ওভারের তাণ্ডবটাও মূলত তাঁর ব্যাটেই। খালেদ আহমেদের করা ১৭তম ওভারে এল ২৩ রান। শেষ ২ বলে হেটমায়ার মেরেছেন দুই ছক্কা, যার একটি মিড অনের ওপর দিয়ে গিয়ে আছড়ে পড়ে গ্যালারিতে।
জাতীয় দলের আরেক পেসার বাঁহাতি শরীফুল ইসলামের করা ১৮তম ওভারটা বেশ ভালো। এমন ঝড়ের মধ্যেও মাত্র ১০ রান দিয়েছেন, নিয়েছেন মাহিদুলের উইকেটও।
বিনুরা ফার্নান্ডোর করা ১৯তম ওভারে আবারও টি-টোয়েন্টির বিনোদনে ভেসেছেন খুলনার দর্শকেরা। ২১ রান আসা পুরো ওভারটা একাই খেললেন হেটমায়ার। প্রথম চার বলের হিসাব—৪, ৬, ৬ ও ৪। এর মধ্যে প্রথম ছক্কায় ফিফটি পেয়ে যান মাত্র ২৯ বলে। পরের বলে রান হয়নি, শেষ বলে হেটমায়ার আউট।
হেটমায়ারের বিদায়ে চিটাগং কিংস হাঁপ ছেড়ে বাঁচার স্বস্তি পেয়েছিল নিশ্চয়ই। শেষ ওভারে যদি রানটা আটকে রাখা যায়। যদিও হেটমায়ার থাকলে যা হতো, না থেকেও তার চেয়ে কম হয়নি শরীফুলের করা শেষ ওভারে। মোহাম্মদ নেওয়াজ আর জেসন হোল্ডার মিলে যেন তাঁর অসমাপ্ত কাজটাই শেষ করতে লাগলেন। দ্বিতীয় বলে নেওয়াজের বাউন্ডারি। চতুর্থ ও শেষ বলে হোল্ডারের ছক্কা আর চার। শেষ পর্যন্ত নেওয়াজ অপরাজিত ২ বলে ৫ রান করে আর হোল্ডার ৫ বলে ১২ রানে।
জিতলেই ফাইনাল—এমন ম্যাচ আগেও খেলেছিল চিটাগং কিংস। কিন্তু রংপুর রাইডার্সের কাছে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে তাদের অপেক্ষা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আফসোস। পুরো বিপিএলটাই যে একটা ভুল টিম কম্বিনেশন নিয়ে খেলতে হচ্ছে! কাল শুরুর দিকে সেই আফসোস কিছুটা হলেও কমিয়েছিলেন বোলাররা। তবে হেটমায়ার তাদের ব্যাটসম্যানদের কাজটাও বাড়িয়েছেন। সেই বাড়তি কাজটা চিটাগংয়ের ব্যাটসম্যানরা করেছেন খুব নাটকীয়ভাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উইক ট হ র ২ উইক ট প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।