সেনাবাহিনী নেবে চিকিৎসক, আবেদন শেষ কাল
Published: 7th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অফিসার পদে চিকিৎসক নিয়োগের আবেদন শেষ হচ্ছে আগামীকাল শনিবার। সেনাবাহিনীর ৮৫তম বিএমএ স্পেশাল (এএমসি) এবং ৭০তম বিএমএ স্পেশাল (এডিসি) কোর্সে অফিসার পদে পুরুষ ও নারী নিয়োগ দেওয়া হবে।
আবেদনের যোগ্যতা
আর্মি মেডিকেল কোর (নারী/পুরুষ): এমবিবিএস ডিগ্রিসহ ইন্টার্নশিপ সম্পন্নকারী হতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সর্বমোট জিপিএ-৯ থাকতে হবে (তবে যেকোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৪.
আর্মি ডেন্টাল কোর (নারী/পুরুষ): বিডিএস ডিগ্রিসহ ইন্টার্নশিপ সম্পন্নকারী হতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সর্বমোট জিপিএ-৯ থাকতে হবে (তবে যেকোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫-এর কম নয়।
আরও পড়ুনবিজিবি নেবে সিপাহি, বয়সসীমা ১৮ থেকে ২৩ বছর০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বয়স১ জুলাই ২০২৫ তারিখে অনূর্ধ্ব ২৮ বছর (অ্যাফিডেভিট গ্রহণযোগ্য নয়)।
শারীরিক যোগ্যতাপুরুষ প্রার্থীদের জন্য উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, বুকের মাপ স্বাভাবিক ৩০ ও প্রসারণে ৩২ ইঞ্চি, ওজন ৫৭ কেজি। নারী প্রার্থীদের জন্য উচ্চতা ৫ ফুট, বুকের মাপ স্বাভাবিক ২৮ ও প্রসারণে ৩০ ইঞ্চি, ওজন ৪৮ কেজি।
যেভাবে আবেদনআগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে হোমপেজের ওপরে ডান কোনায় APPLY NOW বাটনে ক্লিক করে বর্ণিত কোর্সে APPLY করতে হবে। আবেদনকারী প্রার্থীদের টেলিটক, ভিসা/মাস্টারকার্ড, ট্যাপ, বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদির মাধ্যমে ১,০০০ টাকা আবেদন ফি ও ১,০০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ মোট ২,০০০ টাকা প্রদান করতে হবে। আবেদনপ্রক্রিয়াতেই ওয়েবসাইটে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে আবেদন ফি প্রদান করা যাবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে লিখিত পরীক্ষার জন্য কল–আপ লেটার পাওয়া যাবে। অনলাইনে আবেদন করতে কোনো অসুবিধা হলে ওয়েবসাইটে দেখানো কাস্টমার সাপোর্ট নম্বরে (০১৭১৩১৬১৯৭৯) সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখা যাবে এই লিংকে ।
আরও পড়ুনসেনাবাহিনী নেবে সৈনিক, আবেদন চলবে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫নির্বাচনপদ্ধতিলিখিত পরীক্ষা: লিখিত পরীক্ষা (পেশাগত বিষয়ে ১০০ নম্বর) আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ সকাল ৯টায় শহীদ বীর বিক্রম রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত হবে। আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রার্থীরা কল-আপ লেটার প্রিন্ট করে নেবেন এবং পরীক্ষার সময় কল-আপ লেটার সঙ্গে নিয়ে আসবেন। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল আগামী মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ওয়েবসাইট ও এসএমএস/টেলিফোনের মাধ্যমে জানানো হবে।
প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও মৌখিক পরীক্ষা: লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও মৌখিক পরীক্ষা আগামী ১৬ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ডিজিএমএস অফিস, ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত হবে। মৌখিক পরীক্ষার সময় সব পরীক্ষা সার্টিফিকেট ও মার্কশিটের মূলকপি (এসএসসি/ও লেভেল, এইচএসসি/এ লেভেল, এমবিবিএস/বিডিএস, ইন্টার্নশিপ, বিএমঅ্যান্ডডিসি রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এফসিপিএস পার্ট-১ যদি থাকে এবং কল-আপ লেটার) প্রদর্শন করতে হবে, অন্যথায় অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
আইএসএসবি পরীক্ষা: লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত আইএসএসবির কাছে পরীক্ষা/সাক্ষাৎকারের জন্য নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত হতে হবে। পরীক্ষা/সাক্ষাৎকারের তারিখ আইএসএসবির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এই পরীক্ষা চার দিনে সম্পন্ন হবে এবং যাবতীয় ব্যয় সরকার কর্তৃক বহন করা হবে।
চূড়ান্ত নির্বাচন এবং যোগদান নির্দেশনা: সব পরীক্ষায় যোগ্যতা অর্জন সাপেক্ষে শূন্য আসনের অনুকূলে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থীদের সেনাবাহিনী সদর দপ্তর, অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল শাখা, পার্সোনেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পরিদপ্তর কর্তৃক চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ঘোষণা এবং যোগদান নির্দেশিকা প্রদান করা হবে। আইএসএসবি গ্রিন কার্ডের মেয়াদ এক বছর বলবৎ থাকবে।
আরও পড়ুনবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে বড় নিয়োগ, পদ ১৫২০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সুযোগ–সুবিধাসরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য সুবিধাসহ সশস্ত্র বাহিনীর বেতনক্রম অনুযায়ী অফিসার ক্যাডেটরা বেতন ও ভাতা পাবেন। এ ছাড়া কমিশনপ্রাপ্ত অফিসাররা ব্যক্তিগত যোগ্যতার ভিত্তিতে উচ্চতর শিক্ষা ও বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। নিরাপদ ও মনোরম পরিবেশে মানসম্পন্ন সুসজ্জিত বাসস্থান প্রাপ্তির সুযোগ পাবেন।
সামরিক হাসপাতালগুলোতে উন্নত মানের চিকিৎসা–সুবিধা ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বিধিমোতাবেক নগদ অর্থ প্রদানসহ বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ পাবেন। নিজ সন্তানদের জন্য ক্যাডেট কলেজ, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিউইপি) এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত স্কুল বা কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে।
আবেদনের শেষ সময়: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫।
আরও পড়ুনবিমানবাহিনী নেবে অফিসার ক্যাডেট, আবেদন শুরু ১ ফেব্রুয়ারি১৮ জানুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ খ ক পর ক ষ পর ক ষ য় পর ক ষ র অফ স র র জন য য গ যত ন করত
এছাড়াও পড়ুন:
মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন
মানুষের হৃদয়ে ঈমানের আগুন জ্বালানোর প্রয়াসে শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী (১৮৮৫-১৯৪৪) গড়ে তুলেছিলেন জামায়াতে তাবলিগ, যা বিশ্বব্যাপী দাওয়াতের এক অপূর্ব নজির। তাঁর বাণী ও উপদেশের সংকলন ‘মালফুজাত’ নামে আরবি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে, যা তাঁর দাওয়াতি দর্শন ও তরবিয়তি পদ্ধতির এক জীবন্ত দলিল। দামেস্কের দারুল কলম থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থ, শায়খ আদিল হাররাজি আল-ইয়ামানি আন-নাদভির তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত, তাবলিগ জামায়াতে মূল দর্শনের প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু মুহাম্মদ ইলিয়াসের বাণীর সংকলন নয় বরং একটি ঐতিহাসিক ও দাওয়াতি দলিল, যা আধুনিক ইসলামি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্মূল্যায়নের দাবি রাখে।
‘মালফুজাত’-এর শিক্ষা
শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াসের মজলিস মালফুজাত সংরক্ষণ করেছেন তাঁর শিষ্য মুহাম্মদ মানজুর। তাবলিগ জামায়াতে ছয়টি মূলনীতি—কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকর, ইকরামুল মুসলিমিন, ইখলাস ও নিয়ত এবং আল্লাহর পথে বের হওয়ার ভিত্তিতে গ্রন্থটি রচিত। তিনি তাওহিদকে (আল্লাহর একত্ব) নাজাতের মূল ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তাওহিদের দুর্বলতা মুসলিমদের অধঃপতনের কারণ’। তিনি ফরজ ইবাদতের প্রাধান্য, জিকিরের প্রাচুর্য এবং তাকওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ফরজগুলোর মর্যাদা নফলের চেয়ে অনেক উঁচুতে। নফলের উদ্দেশ্য ফরজগুলোর ঘাটতি পূরণ করা’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
তাঁর দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল সরল কিন্তু গভীর। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে দেখতেন, যা তাবলিগের একটি বৈশিষ্ট্য। তিনি রিয়া (লোকদেখানো) ও বিতর্ক এড়ানোর পরামর্শ দেন, বলেন, ‘ইখলাস (খাঁটি আল্লাহর জন্য) ছাড়া কোনো কাজ কবুল হয় না।’ তাঁর দৃষ্টিতে, দাওয়াতের লক্ষ্য হলো আল্লাহর আদেশকে মানুষের স্বভাবে পরিণত করা, যাতে নিষিদ্ধ কাজ তার কাছে অপছন্দনীয় হয়। তিনি জিকিরকে এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করতেন।
শায়খ ইলিয়াসের দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল তাওয়াজ্জুহ বা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের পরিবর্তে তাজকিয়া (আত্মশুদ্ধি) ও ইখলাসের ওপর কেন্দ্রীভূত। তিনি জটিল তাত্ত্বিক আলোচনার পরিবর্তে সরল নসিহতের ওপর জোর দিতেন। তাঁর মতে, দাওয়াত হবে এমন, যেন ‘আল্লাহর আদেশ মানুষের স্বভাব হয়ে যায়’। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে তুলনা করতেন সাহাবিদের ত্যাগের সঙ্গে, যা দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি আনে। তিনি বলেন, ‘দাওয়াতে আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার ফরজ, কিন্তু কতজন এই ফরজ পালন করে?’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
আরও পড়ুনসুরা হুমাজাতে চারটি পাপের শাস্তির বর্ণনা০৬ মে ২০২৫ঐতিহাসিক পটভূমি
মুহাম্মদ ইলিয়াস ভারতের কান্ধলায় একটি আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দেওবন্দি সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে তাঁর শৈশব কাটে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন, সাধারণ মুসলিমদের ধর্মীয় অজ্ঞতা এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ তাঁর দাওয়াতি চিন্তার পটভূমি। তিনি বিশ্বাস করতেন, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মুসলিমদের সংস্কার করতে পারবে না। তাই তিনি একটি জনগণভিত্তিক, বিকেন্দ্রীকৃত আন্দোলন শুরু করেন, যেখানে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা দাওয়াতে অংশ নেয়। তিনি নবীর (সা.) মক্কার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হন, যেখানে তিনি ঘুরে ঘুরে মানুষকে দাওয়াত দিতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মক্কায় তাওয়াফ করে মানুষকে হকের দাওয়াত দিতেন’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
গ্রন্থের গঠন ও সম্পাদনা
মালফুজাত তাঁর মজলিসের সংকলন হলেও এটি একটি সুশৃঙ্খল দাওয়াতি দলিল। সম্পাদনা করেছেন আবুল হাসান আলী নাদভি (রহ.)-এর শিষ্য শেখ আদিল হাররাজি। মুফতি মুহাম্মদ তকী উসমানী, ড. খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি ও নূরুল হাসান রাশিদ কান্ধলভী প্রমুখের মতো পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষস্থানীয় ইসলামবেত্তাদের ভূমিকা গ্রন্থটিকে মহামূল্য করে তুলেছে। তাদের ভূমিকাগুলো গ্রন্থের দাওয়াতি ও ঐতিহাসিক পটভূমি বুঝতে সাহায্য করবে। আলী নাদভির সঙ্গে মুহাম্মাদ ইলিয়াসের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক এবং তাবলিগের বিশ্বব্যাপী প্রভাবও এতে তুলে ধরা হয়েছে।
আজ যখন মুসলিম বিশ্ব নানা সংকটের মুখোমুখি, এই গ্রন্থ আমাদের তাওহিদ, ইখলাস ও তাজকিয়ার প্রতি ফিরে যেতে আহ্বান জানায়। এটি প্রতিটি দাঈ ও মুসলিমের জন্য একটি পাঠ্য, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ‘দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে জীবন্ত করে তুলতে হবে।’
সূত্র: আল-জাজিরা ডটনেট
আরও পড়ুন সুরা ইউসুফের সারকথা১৫ জুলাই ২০২৪