জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, চব্বিশের গণহত্যার বিচার অবশ্যই আগে করতে হবে, পরে অন্যকাজ। তা না হলে শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করা হবে।

শনিবার দুপুরে কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

রাজনীতির সঙ্গে চাঁদাবাজি, দুর্বৃত্তের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এ ধরনের অপকর্ম থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, আগে যেমন চাঁদাবাজি ছিল, এখনও আছে। এ চাঁদাবাজি কারা করছে, তা বন্ধ করতে হবে।

‘জামায়াত বাংলাদেশের সবচেয়ে মজলুম দল’ উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনও নিবন্ধন ফিরে পাইনি। জামায়াত একমাত্র দল যার নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এই দল আল্লাহর আইন চায়। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে কোনো অপকর্ম জামায়াতে ইসলামীকে স্পর্শ করেনি। কিন্তু যে দলই অতীতে ক্ষমতায় এসেছে তারা দুর্নীতি, লুটপাট করেছে। জামায়াতের কারও বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ নেই।’

এ সময় জামায়াত আমির বলেন, ‘যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি, শুরু হয়েছে। কারও উস্কানিতে আমরা কারও ক্ষতি করতে দেবো না। পলাতক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর এখন দেশের বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করছে। নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।’ দেশবাসীসহ দলীয় নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির।

কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারীর সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি জহেদুল ইসলাম ও শহর সেক্রেটারি রিয়াজ মোহাম্মদ সাকিলের যৌথ সঞ্চালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহহাজান, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, চট্টগ্রাম মহানগর আমির সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি পরিমল কান্তি শীল, সাবেক জেলা আমির মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, মুফতি হাবিব উল্লাহ, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আব্দুল্লাহ আল ফারুক, অ্যাড.

ফরিদ উদ্দিন ফারুকী ও অ্যাড. শাহজালাল চৌধুরী।

কর্মী সম্মেলন ঘিরে সকাল থেকে সম্মেলনস্থলে জড়ো হতে থাকেন দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। সকাল ৯টার মধ্যেই হাজারো মানুষে কানায় কানায় পূর্ণ হয় সম্মেলনস্থল।

এবারের কর্মী সম্মেলনে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশগ্রহণ করেন। তবে নারীরা কলেজের মাঠের বিপরীতের অবস্থিত ইলিয়াস মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসে নেতৃবৃন্দের কথা শোনেন।

বিপুল লোকের সমাগমকে শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সরকারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জামায়াতের নিজস্ব প্রায় এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম গণহত য জ ম য় ত র আম র র রহম ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ

নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা বিএনপি সমর্থন করে না। দলের এই অবস্থান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা চাচ্ছে, তাদের বক্তব্য যদি সত্য হয় তাহলে তারা সেই অভিযোগটা আদালতে উত্থাপন করতে পারে।

আদালতের মাধ্যমেই এ বিষয়ে ফয়সালা হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি দল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রসঙ্গে দলের অবস্থান তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা নির্বাহী আদেশে, সেটা আমরা সমর্থন করি না। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি অনেক আগে যে বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার যে বিষয়টি সেটা নির্ধারিত হোক। লেট দ্য কোর্ট ডিসাইড (আদালতকে নির্ধারণ করতে দিন)।’

আইনি প্রক্রিয়ায় যদি কোনো দলের বিরুদ্ধে গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে আদালত সেই দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি নির্ধারিত হয়, সেটা নির্বাচন কমিশন মানতে বাধ্য। এ ছাড়া অন্য যেকোনো প্রক্রিয়ায় নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে যদি আমরা রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ চাই তাহলে সেটা হবে একটা ভয়ংকর চর্চা। কারণ, এখন যাঁরা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা চাচ্ছেন, তাঁদের বক্তব্য যদি সত্য হয় তাহলে তাঁরা সেই অভিযোগটা আদালতে উত্থাপন করতে পারে, আইন তো আছে, বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেটা নিশ্চিত হোক।’

তবে আওয়ামী লীগের বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘তারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী। তারা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য দায়ী। সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের যারা প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মামলা দায়ের হয়েছে, আরও হবে, বিচার চলছে।’

রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিই সর্বপ্রথম আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি তুলেছিল বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। আদালত নির্ধারণ করবে তারা এ দেশে রাজনীতি এবং নির্বাচন করতে পারবে কি পারবে না। সেই প্রক্রিয়ায় যদি আরও কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ থাকে, সেটা আদালতে উত্থাপন করা যেতে পারে।’

আরও পড়ুনকয়েকটি অভিন্ন দাবিতে একযোগে বিক্ষোভে নামছে ৭টি দল১০ ঘণ্টা আগে

আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক হস্তক্ষেপের ঝুঁকির বিষয়েও সতর্ক করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে দেশে একটা সাংবিধানিক শূন্যতা বিরাজ করতে পারে। সেই শূন্যতার মধ্যে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে। ঐক্য বিনষ্ট হলে সেটার সূত্র ধরে কথিত ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে এবং তাদের হাত ধরে আঞ্চলিক শক্তিগুলো এখানে জড়িত হয়ে যেতে পারে পরস্পরের বিরুদ্ধে এবং একটি বৈশ্বিক শক্তিও সেই সুযোগটা নিতে পারে। স্থিতিশীল রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে এই আশঙ্কাগুলো একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, যারা এই ব্যবস্থার পক্ষে, তারা যেন নির্বাচনী ইশতেহারে তা তুলে ধরে জনগণের ম্যান্ডেট নেয়। জনগণের ইচ্ছা ছাড়া পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।

নির্বাচন বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো রাজনৈতিক কৌশল জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এ দেশের মানুষ ১৬-১৭ বছর ধরে রক্ত দিয়েছে, শহীদ হয়েছে। সুতরাং এই পথে যারাই বাধা সৃষ্টি করতে চাইবে কৌশলে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য, দলীয় হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য, সেটা জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এখন শেষবিচারে জনগণই হচ্ছে বিচারক।’

আরও পড়ুনজামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের ‘কঠোরতম ভাষায়’ নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব
  • ‘স্বৈরাচারের পতন হলেও ষড়যন্ত্রের অবসান হয়নি’
  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন
  • কারিগরি শিক্ষার্থীদের অবরোধের ঘোষণা সহিংস আন্দোলনের উসকানি: সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
  • ‘গাজায় গণহত্যা চলছে, আমি সেই গণহত্যার নিন্দা করছি’