‘সারা দিন মানষের কেনা মুরগি কাটি, হামার ভাগ্যোত জোটে না’
Published: 9th, February 2025 GMT
গাইবান্ধা শহরের হকার্স মার্কেটে মুরগি কাটেন সাজু মিয়া (৬২)। প্রায় দুই দশক ধরে ক্রেতাদের কেনা মুরগি জবাই করে টুকরা করে কেটে দেন তিনি। এ জন্য মুরগিপ্রতি পারিশ্রমিক পান ২০ টাকা। সারা দিনে মুরগি কেটে তাঁর দৈনিক ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সেই আয় দিয়ে নিজে মাংস কিনে খেতে পারেন না তিনি।
সাজু মিয়া বললেন, ‘পোত্তেক দিন খরোচ বাদে যেকনা ট্যাকা থাকে, তাক দিয়া সোংসার চলব্যার পাচ্চিনে। অসুখ-বিসুখ হলে বিপদোত পড়া নাগে। বাজারোত জিনিসপাতির দাম বাড়ি গ্যাচে। ভাগ্যো ভালো একন সবজির দাম কমি গ্যাচে।’ আক্ষেপ করে বলেন, ‘সারা দিন মানষের কেনা মুরগি কাটি, কিন্তু হামাগরে ভাগ্যোত মুরগির গোশত জোটে না। মাঝেমধ্যে ছোলপোলগুলে মুরগির গোশত খাবার চায়, কিন্তু কিনি খাবার পারিনে।’
সাজু মিয়ার বাড়ি হকার্স মার্কেট-সংলগ্ন শহরের সরকারপাড়া এলাকায়। তিন শতক বসতবাড়ি ছাড়া কোনো সহায়সম্পত্তি নেই। টিনশেড ঘরে বসবাস করেন। বিকেলে হকার্স মার্কেটের মুরগির বাজারে গিয়ে সাজু মিয়াকে মুরগি কাটতে দেখা যায়। মুরগি বিক্রির দোকানে রাখা বঁটি দিয়ে মুরগি কাটছেন। প্রতিদিন সকাল ৭টায় দোকানে আসেন, রাত ১০টা পর্যন্ত চলে কাজকর্ম।
হকার্স মার্কেটে বাজার করতে আসা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘আগে দেখতাম, অন্য জেলার যারা গাইবান্ধায় চাকরি করতেন, তাঁরা সাজু মিয়ার কাছ থেকে মুরগি কেটে নিতেন। এখন স্থানীয়সহ সবাই মুরগি কেনার পর কেটে নিয়ে যান। সাজুর দেখাদেখি মার্কেটে আরও দুই-একজন মুরগি কেটে দিচ্ছেন।
শহরের পলাশপাড়ার চাকরিজীবী বিপাশা খাতুন জানান, প্রায় সাত-আট বছর ধরে সাজু মিয়ার কাছ থেকে মুরগি কেটে নিচ্ছেন। বাসায় গিয়ে পরিষ্কারের পর শুধু রান্না করা। এতে তাঁদের মতো কর্মজীবী নারীদের একটু সুবিধা হয়।
সাজু মিয়ার পাঁচ সদস্যের সংসার। তিন মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে শারমিন খাতুনের বিয়ে হয়েছে। দ্বিতীয় মেয়ে আদরি খাতুন চতুর্থ শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে সানজিদা খাতুন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সবার বড় ছেলে। তাঁর নাম সাহিদুল ইসলাম (২০)। তিনিও সামান্য বেতনে অন্যের মুরগির দোকানে মুরগি কেনাবেচার কাজ করেন।
সাজু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাটা যেকনা কামাই করে, তাক দিয়া ছোট ব্যাটি দুইটের নেকাপড়ার খরোচ চলে। সোংসারোত দিব্যার পায় না। কামাইয়ের চাইতে খরচ বেশি। পোত্তেক দিন বাকিতে খরচ করা নাগে। ছয় মাসোত ম্যালা ট্যাকা দেনা হচে। একন দেনা শোদ করমু, নাকি সোংসারের খরচ করমু চিন্তাত আচি। সরকারি কোনো ভাতা পাইনে।’
গাইবান্ধা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন শাহ বলেন, ইউনিয়ন বা পৌরসভার মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা প্রদানের জন্য সমাজসেবা কার্যালয়ে তালিকা পাঠানো হয়। সেই তালিকা পাওয়ার পর ভাতা পাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। ওই ব্যক্তির ভাতা না পাওয়ার কারণ খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হক র স ম র ক ট
এছাড়াও পড়ুন:
সকালের সবচেয়ে বরকতময় সময় ব্যবহারের ৭ কৌশল
সকাল মানুষের জীবনের একটি মূল্যবান সময়, যা দিনের বাকি অংশের জন্য সুর নির্ধারণ করে। সকাল আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার, শরীর ও মনকে প্রস্তুত করার এবং দিনের লক্ষ্য অর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ।
সামাজিক মাধ্যম, কাজের চাপ এবং পারিবারিক দায়িত্ব আমাদের অনেক সময় কেড়ে নেয়, তাই সকালকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমরা জীবনকে আরও উৎপাদনশীল করতে পারি।
১. আল্লাহর সঙ্গে দিনের শুরুফজরের নামাজের ১৫-২০ মিনিট আগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং দোয়া করা জীবনকে আমূল বদলে দিতে পারে। এই সময়টি শান্ত ও পবিত্র, যখন আল্লাহর সঙ্গে কোনো বাধা থাকে না।
কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি রাতে, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আমাদের রব নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?”’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫)।
তাহাজ্জুদের সময় আপনার হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করুন। এতে মানসিক শান্তি বাড়বে এবং দিনের জন্য ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। যদি আপনি নতুন হন, সপ্তাহে এক দিন থেকে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে এটি অভ্যাসে পরিণত করুন।
ফজরের আগে অবশিষ্ট সময়ে কোরআন তিলাওয়াত করুন, কারণ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ভোরে কোরআন পড়া (ফেরেশতাদের) দ্বারা প্রত্যক্ষ করা হয়।’ (সুরা ইসরা. আয়াত: ৭৮)।
আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫২. ফজরের পর ঘুম থেকে দূরে থাকুনফজরের নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়া অনেকের অভ্যাস, কিন্তু এটি সকালের বরকতময় সময় নষ্ট করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১)।
এই সময়ে বড় বড় কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়, কারণ এতে আল্লাহর বিশেষ বরকত রয়েছে।
আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন। মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১ফজরের পর ঘুমের প্রলোভন এড়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এই সময়ে পড়াশোনা, কোরআন মুখস্থ করা বা কোনো ব্যক্তিগত প্রকল্পে কাজ করা যায়। এটি দিনের বাকি সময়ে অবসরের জন্য সময় বাঁচায় এবং আগামী দিনে আরও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করে।
বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।
৩. করণীয় তালিকা তৈরি করুনএকটি করণীয় তালিকা তৈরি করা দিনের পরিকল্পনাকে সুসংগঠিত করে। আমরা প্রায়ই মনে মনে কাজের পরিকল্পনা করি, কিন্তু মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা সীমিত। একটি ডায়েরি বা ফোনের নোট অ্যাপে কাজের তালিকা লিখে রাখলে সময় ও শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। সম্পন্ন হওয়া কাজগুলো তালিকা থেকে কেটে দেওয়ার একটা আলাদা আনন্দ আছে।
এই তালিকায় দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যও অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন কোরআনের একটি নির্দিষ্ট অংশ মুখস্থ করা বা একটি নতুন দক্ষতা শেখার পরিকল্পনা। এটি আপনাকে দিনের শুরুতে ফোকাসড রাখবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।৪. সকালে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুনসকালের মূল্যবান সময় সামাজিক মাধ্যমে বা ফোনে অযথা স্ক্রল করে নষ্ট করা উচিত নয়। অনেকে সকালে ফোন হাতে নিয়ে ‘শুধু একটু দেখে নিই’ ভেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারিয়ে ফেলেন। এটি মানসিক চাপ বাড়ায় এবং সকালের শান্তি নষ্ট করে।
নিয়ম করুন, সকালের নাশতা বা কিছু কাজ শুরু না করা পর্যন্ত ফোন বা সামাজিক মাধ্যমে যাবেন না। সকালে খবর পড়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, এটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে। যখন ফোন ব্যবহার করবেন, তখন ইতিবাচক ও প্রেরণাদায়ক কনটেন্ট দেখুন, যা আপনার দিনকে উজ্জ্বল করবে।
৫. শরীরচর্চা করুনশরীরচর্চার উপকারিতা আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন অনেকে বাড়ি থেকে কাজ করছেন, শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বাড়িতে কাজ করার ফলে ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা, পেশির সমস্যা বাড়ছে।
সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।
ইউটিউবে হাজারো ধরনের ব্যায়ামের ভিডিও পাওয়া যায়, যা বাড়িতে সামান্য জায়গায় করা যায়। যদি বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে, তবে সকালে ৩০ মিনিট হাঁটুন। লক্ষ্য হলো শরীরকে সচল রাখা এবং শক্তি বৃদ্ধি করা।
আরও পড়ুনসুস্থ জীবন যাপনে মহানবী (সা.)-এর ৯ অভ্যাস২৪ জুলাই ২০২৫সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।৬. পুষ্টিকর নাশতা গ্রহণব্যস্ততার কারণে অনেকে সকালের নাশতা বাদ দেন, কিন্তু গবেষণা বলছে, পুষ্টিকর নাশতা দিনভর মনোযোগ বাড়ায়, অপ্রয়োজনীয় চিনির লোভ কমায় এবং শক্তি জোগায়। নাশতায় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ওটস বা মাল্টিগ্রেইন রুটি, স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অ্যাভোকাডো বা বাদাম, গ্রিক ইয়োগার্ট এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করুন।
সময় কম থাকলে একটি স্মুদি তৈরি করুন—পালংশাক, আপেল এবং হিমায়িত কলা ব্লেন্ড করে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর নাশতা তৈরি করা যায়। এটি দিনের শুরুতে সবুজ শাকসবজি গ্রহণের একটি সহজ উপায়।
৭. নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনবাড়ি থেকে কাজ করার সময় অনেকে ক্যাজুয়াল পোশাকে থাকেন। বরং সকালে সুন্দর পোশাক পরুন, যা আপনার মেজাজ উজ্জ্বল করবে। একটু পছন্দের সুগন্ধি ব্যবহার করলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১নবীজি (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং এটি আপনার মানসিক প্রস্তুতি ও দিনের জন্য উৎসাহ বাড়ায়।
সকাল আমাদের দিনের ভিত্তি। ইসলাম আমাদের শেখায় যে সকাল আল্লাহর বরকত নিয়ে আসে। তাহাজ্জুদ, ফজরের পর জাগ্রত থাকা, করণীয় তালিকা তৈরি, স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, শরীরচর্চা, পুষ্টিকর নাশতা এবং নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন—এই সাতটি অভ্যাস আমাদের সকালকে উৎপাদনশীল করবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সূত্র: দ্য মুসলিম ভাইব ডট কম
আরও পড়ুনরহমতের দুয়ারে হাজিরা১৫ জুন ২০২৪