মান্দায় ইউএনও কার্যালয়ের সামনে সবজির দোকান দিয়ে কৃষকদের অভিনব প্রতিবাদ
Published: 9th, February 2025 GMT
নওগাঁর মান্দা উপজেলা সদরের প্রসাদপুর বাজারে নির্ধারিত স্থানে দোকান বসাতে না পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে দোকান বসিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন কৃষকেরা। আজ রোববার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কৃষকেরা নিজেদের খেতে উৎপাদিত সবজি নিয়ে এই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এদিকে প্রসাদপুর বাজারে কৃষকদের দোকান উচ্ছেদের ঘটনায় কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন। এক কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবাদ জানানো কৃষকদের অভিযোগ, প্রসাদপুর বাজারে সবজি বিক্রির জন্য নির্ধারিত স্থান দখল করে রেখেছে একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। ‘প্রসাদপুর তরকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতি’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে। সমিতির সদস্যরা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে সবজি কিনে প্রতিটি পণ্যের অভিন্ন দাম নির্ধারণ করে ভোক্তাদের কাছে চড়া দামে বিক্রয় করেন। এতে জিম্মি হয়ে পড়েন ভোক্তারা।
কৃষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিভিন্ন ধরনের সবজি খেত থেকে তুলে এনে প্রসাদপুর হাটে নিয়ে এসে কৃষকেরা সরাসরি ভোক্তাদের কাছে খুচরা বিক্রি করতেন। ব্যবসায়ীদের চেয়ে অনেক কম দামে ক্রেতাদের কাছে সবজি বিক্রি করা হতো। কৃষকের সবজি হাটে থাকায় ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা কমে যায়। এ কারণে তরকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে তাঁদের হাটের নির্ধারিত স্থানে দোকান করতে দীর্ঘদিন ধরে বাধা দিয়ে আসছেন। আজ বিকেলে কৃষকেরা হাটে দোকান বসাতে চাইলে তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়।
কৃষক মাজেদ আলী মোল্লা বলেন, ‘তরকারি বাজার থেকে দফায় দফায় আমাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় এত দিন দোকান করে আসছি। আজ সেই জায়গা আর নেই। খেতের পণ্য বিক্রি করার জন্য প্রশাসনের কাছে আমরা স্থায়ী জায়গার দাবি করছি।’
প্রসাদপুর বাজার বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আখতারুজ্জামান আল মনসুর বলেন, ‘প্রসাদপুর হাটে সিন্ডিকেট করে সবজি বিক্রি করেন কিছু ব্যবসায়ী। প্রান্তিক চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় হাটে দোকান বসানোর জায়গা বন্দোবস্তের জন্য উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে, এটাই প্রত্যাশা করছি।’
কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে প্রসাদপুর তরকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, ‘তরকারি বাজারে জায়গার সংকট রয়েছে। সবাইকে দোকান বসানোর জায়গা করে দেওয়া সম্ভব হয় না। কৃষকদের উচ্ছেদ করার অভিযোগ সঠিক নয়।’
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আলম মিয়া বলেন, কৃষকদের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এক কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষকদের দোকান বসাতে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় ক ষকদ র র জন য উপজ ল তরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।
এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।
মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।
পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।
পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’
জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।