পাবনার সাঁথিয়ায় গ্রাহকদের হিসাব থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জনতা ব্যাংক পিএলসির বনগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক ও মুখ্য কর্মকর্তা হেমায়েত করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাটি জানাজানির পর আজ রোববার সকাল থেকে ব্যাংকে গ্রাহকদের ভিড় জমে যায়।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানা গেছে, গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি জানার পর হেমায়েত করিমকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় শাখার নতুন ব্যবস্থাপক মো.

ফরিদুজ্জামান বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার আতাইকুলা থানায় একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ সেই মামলায় হেমায়েত করিমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। ওই কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নতুন ব্যবস্থাপক মো. ফরিদুজ্জামান।

ব্যাংক ও গ্রাহকদের সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হেমায়েত করিম কৌশলে গ্রাহকদের আমানত ব্যাংকে জমা না করে আত্মসাৎ করতেন। বিষয়টি প্রথম ধরা পড়ে গত বুধবার। ওই দিন সাগরদাড়ি গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুস সালাম ব্যাপারী টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন, তাঁর হিসাবে থাকা ৪১ লাখ টাকা নেই। বিষয়টি জানাজানি হলে অন্য গ্রাহকেরাও হিসাব পরীক্ষা করে একই অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। বিষয়টি ব্যাংকের পাবনার জেলা কার্যালয়কে জানানো হলে কর্মকর্তারা এসে ঘটনার সত্যতা পান। এ নিয়ে রাতভর যাচাই-বাছাই শেষে বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আর নতুন ব্যবস্থাপক হিসেবে মো. ফরিদুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, ‘অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ গ্রহণ করা হচ্ছে এবং বিভাগীয় তদন্ত চলছে। অভিযোগ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

টাকা খোয়ানো ব্যবসায়ী আবদুস সালাম ব্যাপারী বলেন, গরুর ব্যবসার জন্য তাঁর সব টাকা জনতা ব্যাংকের বনগ্রাম শাখায় রেখেছিলেন। গত বুধবার দুপুরে ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন, তাঁর হিসাব থেকে ৪১ লাখ টাকা উধাও হয়ে গেছে।

ভুক্তভোগী আরেক ব্যবসায়ী তনয় সাহা বলেন, তাঁর সিসি লোনের হিসাবে প্রায় ৪৯ লাখ টাকা নেই। এমনকি টাকা উত্তোলনের আগে তাঁর মোবাইলে ব্যাংকের লেনদেনের মেসেজ আসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান।

জনতা ব্যাংকের পাবনা শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মঞ্জুরুল হক জানান, বিষয়টি বিভাগীয় ও ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষে আসল ঘটনা জানা যাবে। অভিযুক্ত ব্যবস্থাপক বর্তমানে কারাগারে আছেন।

আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আলমগীর হোসেন বলেন, ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে হেমায়েত করিমকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবারই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফর দ জ জ ম ন হ ম য় ত কর ম গ র হকদ র কর মকর ত র ব যবস ব ষয়ট তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই, নারীসহ দুই যুবককে গণপিটুনি

ফতুল্লায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক তরুন ও এক  তরুনীকে ভুইগড় থেকে ফতুল্লার দাপা বালুর মাঠ এলাকায় নিয়ে এসে মোবাইল  ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় শামীমা খানম নামের  এক নারীসহ দুই  যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী।

এ সময় আটককৃতদের নিকট থেকে পুলিশ বিশেষ পেশার (সাংবাদিক) কার্ড উদ্ধার সহ ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাত নয়টার দিকে ফতুল্লা থানার দাপা ইদ্রাকপুর সাহারা সিটি বালুর মাঠে।

এঘটনায় ভুক্তভুগী যুবক ইব্রাহিম নিঝুম বাদী  হয়ে শামিমা খানুলম সনিয়া (৪০), তৌছিফ আহম্মেদ (২০) ও  সিয়াম আহম্মেদ (২০)  ও  সোহাগ (২৫)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। অভিযুক্ত  অপর আসামী সোহাগ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

মামলায় উল্লেখ্য করা হয়, মামলার বাদী শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তার বান্ধবী (১৮) কে নিয়ে একটি রিকশা যোগে ভূইগড় রুপায়ন টাউন এর সামনে থেকে চাষাড়া যাওয়ার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডস্থ ভূইগড় রুপায়ন টাউনের সামনের রাস্তায় পৌছামাত্র অভিযুক্ত আসামীরা  রিক্সার গতিরোধ করে নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অফিসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে একটি অটোতে উঠিয়ে ফতুল্লা থানা সীমান্তের দাপা ইদ্রাকপুরস্থ সাহারা সিটি বালুর মাঠে নিয়ে  আসে। 

পরবর্তীতে অভিযুক্তরা বাদী সহ তার বান্ধবীকে ছেড়ে দেওয়ার শর্ত স্বাপেক্ষ ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। টাকা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করলে অভিযুক্ত আসামীরা তাদের কে মারধর করে এবং তাদের সাথে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়।

এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা বাদী ও তার বান্ধবীর বাবার নিকট থেকে মোবাইল ফোনে পৃথক পৃথক ভাবে মুক্তিপণ হিসেবে ১ লাখ টাকা করে দাবী করে এবং তাদের সাথে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

মোবাইল ফোনে সংবাদ পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্তলে ছুটে আসে। বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তরুন-তরুনীর নিকট বিস্তারিত জানতে পেরে আটককৃতদের তল্লাশি করে লুটে নেওয়া মোবাইল ফোন, আইডি কার্ড উদ্ধার করে গণপিটুনি দিয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয়দানকারী কথিত সাংবাদিক শামীমা খানম সোনিয়া তৌছিফ আহম্মেদ ও  সিয়াম আহম্মেদ কে পুলিশে সোপর্দ করে। তবে এ সময় কৌশলে পালিয়ে যায়  অভিযুক্ত অপরজন সোহাগ। 

তথ্যমতে, এক মাস পূর্বে পঞ্চবটী রুসেন হাউজিং ভিতরের একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে পতিতা ব্যবসার অভিযোগ তুলে চাঁদা দাবী করে। সে সময় স্থানীয়রা তাদের আটক করে গণপিটুনি দেয়। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়।

এরপর এই চক্রটি পাগলার চিতাশাল, তল্লা কোর্টের পেছনে, পোস্ট অফিস রোডের দারোগার বিল্ডিংয়ে  গিয়ে একই কায়দায় চাঁদা দাবী করে। সে সকল ঘটনাতেও তারা স্থানীয়বাসীর প্রতিরোধের স্বিকার হয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসে।

অপর একটি সূত্র জানায় ১৫/২০ দিন পূর্বে পঞ্চবটী হরিহর পাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে এক দম্পত্তিকে মারধর এক ভরি ওজনের স্বর্ণালংকারসহ নগদ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। 

স্থানীয় সাংবাদিক মহল শামীমা ও তার সহোযোগিদের কর্মকান্ড নিয়ে ব্যাপক ভাবে ক্ষুদ্ধ। তারা ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসনকে শামীমা ও তার সহোযোগিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানালেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি।

শামীমা খানম সোনিয়া ও তার সহোযোগিদের আটকের সংবাদে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা থানায় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতেই পুলিশ কর্মকর্তা কে রগ কাটার এবং  মামলা দিয়ে হয়রানী করার হুমকি প্রদান করার পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের কে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এ সময় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা হতবিহ্বল হয়ে পরে।

ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, এ বিষয়ে ইব্রাহিম নিঝুম একজন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ