তুর্কিয়ে বুরস্লারি বৃত্তি: টিউশন ফি, উপবৃত্তি, বিমান টিকিটসহ মিলবে নানা সুবিধা
Published: 19th, February 2025 GMT
তুরস্কের সরকারি বৃত্তির কেতাবী নাম তুর্কিয়ে বুরস্লারি। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য দেওয়া হয় এ বৃত্তি। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। তুরস্ক বিশ্ববাসীর কাছে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বের জন্য অন্যতম পরিচিত একটি দেশ। ইউরোপ ও এশিয়ায় অবস্থিত সমৃদ্ধ দেশটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নানা ধরণের বৃত্তি দেয়।
বায়োটেকনোলজি, বিভিন্ন প্রকৌশল ক্ষেত্র (কম্পিউটার, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ), বায়োকেমিস্ট্রি, জীববিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, খাদ্য প্রকৌশল, গণিত, মেডিসিনসহ হাজারের বেশি প্রোগ্রামে পড়ার সুযোগ মেলে তুরস্ক সরকারের এই বৃত্তিতে। ২০২৫–২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য তুরস্ক সরকারের এই বৃত্তিটি মেধাবী বিদেশি শিক্ষার্থীদের দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়। এই বৃত্তির আওতায় মাসিক উপবৃত্তি, ফ্রি টিউশন ফি, যাতায়াতের বিমান টিকিট, স্বাস্থ্যবিমা, বাসস্থানসহ বিভিন্ন খরচ বহন করে তুরস্ক সরকার।
আরও পড়ুনরোমানিয়ায় বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা, সুযোগ-সুবিধা ও আবেদনের পদ্ধতি জেনে নিন১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বৃত্তির সুবিধা—ফ্রি টিউশন ফি
মাসিক উপবৃত্তি
স্বাস্থ্যবিমা
বাসস্থান
যাওয়াতের বিমান টিকিট
এক বছরের তুর্কি ভাষাশিক্ষা কোর্স
মাসিক উপবৃত্তির পরিমাণ—আন্ডারগ্র্যাজুয়েট: প্রতি মাসে ৭০০ তুর্কি লিরা
মাস্টার্স: প্রতি মাসে ৯৫০ তুর্কি লিরা
পিএইচডি: প্রতি মাসে ১ হাজার ৪০০ তুর্কি লিরা
গবেষণার জন্য: প্রতি মাসে ৩ হাজার তুর্কি লিরা
আরও পড়ুনবাংলাদেশিদের হার্ভার্ডে বৃত্তি নিয়ে এমবিএ করার সুযোগ২৮ মার্চ ২০২১বৃত্তিতে আবেদনের যোগ্যতা—ভাষা: ইংরেজি বা তুর্কি ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে
জাতীয়তা: তুর্কি নাগরিক বা যাঁরা তুর্কি নাগরিকত্ব হারিয়েছেন, তাঁরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন না। এ ছাড়া অন্য যেকোনো দেশের নাগরিকেরা আবেদন করতে পারবেন। তুরস্কের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কোনো শিক্ষার্থী এই বৃত্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
আরও পড়ুনবাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যে ১০ দেশে অল্প খরচে পড়তে পারেন০৭ এপ্রিল ২০২৪প্রোগ্রামের সময়কালআন্ডারগ্র্যাজুয়েট: ৪–৬ বছর
মাস্টার্স: ২ বছর
পিএইচডি: ৪ বছর
একাডেমিক স্কোরস্নাতক: ন্যূনতম ৭০%
মাস্টার্স এবং ডক্টরেট: ন্যূনতম ৭৫%
স্বাস্থ্যবিজ্ঞান (মেডিসিন, ডেন্টিস্ট্রি ও ফার্মেসি): ন্যূনতম ৯০%
আবেদনের বয়সসীমা—আন্ডারগ্র্যাজুয়েট: ২১ বছরের কম
মাস্টার্স: ৩০ বছরের কম
ডক্টরেট: ৩৫ বছরের কম
রিসার্চ: ৪৫ বছরের কম
আরও পড়ুনউচ্চশিক্ষায় বিদেশে যেতে প্রস্তুতি কেমন, জেনে নিন ধাপগুলো১৪ এপ্রিল ২০২৪আবেদনে যা যা লাগবে—বৈধ পাসপোর্ট
সাম্প্রতিক সময়ে তোলা আবেদনকারীর একটি ছবি
জাতীয় পরীক্ষার ফলাফল (যদি থাকে)
ডিপ্লোমা অথবা অস্থায়ী পরীক্ষার সার্টিফিকেট
ট্রান্সক্রিপ্ট
*আন্তর্জাতিক পরীক্ষার ফলাফল (GRE, GMAT, SAT ইত্যাদি) যুক্ত করতে হবে যদি নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চেয়ে থাকে।
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার (TOEFL, DELF) সনদ।
পিএইচডি প্রার্থীদের ক্ষেত্রে একটি গবেষণার প্রপোজাল এবং প্রার্থী ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন, এমন একটি গবেষণার প্রমাণ দাখিল করতে হবে।
বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি যেভাবে প্রস্তুতি নিলে—সময়ের আগেই শুরু করুন: আবেদনের সময়সীমার অপেক্ষায় না থেকে আগেভাগেই আপনার আবেদনপত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা শুরু করুন। আপনি যে বিষয়ে পড়তে চান, তার জন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভালো হবে, কী কী লাগবে, এসব আগেই তৈরি করতে থাকুন।
যথার্থ কাগজপত্র: নিশ্চিত করুন যে আপনার সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপ-টু-ডেট আছে এবং সেগুলো এমনভাবে সাজান, যাতে আপনার একাডেমিক সাফল্যগুলো সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়।
শক্তিশালী স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP): একটি শক্তিশালী এসওপি (SOP) বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
শারীরিক যোগ্যতা: তুরস্কের সরকারি বৃত্তির জন্য সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেভাবেই প্রস্তুতি নিন।
আবেদনের শেষ তারিখ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আবেদনের বিস্তারিত তথ্যে ও আবেদনের পদ্ধতি জানতে ক্লিক করুন এখানে
আরও পড়ুনচীনে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপের সঙ্গে আছে পড়ার শেষে চাকরি ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ২৬ আগস্ট ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ত ত র জন য এই ব ত ত উপব ত ত প এইচড সরক র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষার যৌক্তিকতা কতটুকু
বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্ভবত দেশের সবচেয়ে সহজ কোনো ‘নিয়োগপ্রক্রিয়া’, যা বছরের পর বছর ধরে চর্চিত হয়ে আসছে। আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মাত্র কয়েক মিনিটের এক মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াচ্ছেন।
অথচ এই দেশে প্রাথমিক শিক্ষক হতে গেলেও কয়েকটি ধাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ফলে ‘ত্রুটিযুক্ত’ শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াকে যুগোপযোগী কিংবা বিশ্বমানদণ্ডের পরিসরে আনার আহ্বান সব সময় ছিল।
সমাজে এসব আলাপের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২০১৬ সালের দিকে একটি কমিটি গঠন করে, যাঁরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য একটি ‘অভিন্ন নীতিমালা’ করার সুযোগ মিলে।
এই কমিটি কয়েকবার খসড়া করে ২০১৯ সালের দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নতির একটি ‘অভিন্ন’ নীতিমালা বা নির্দেশিকা চূড়ান্ত করে। যদিও এই নীতিমালার নানা অসংগতি ছিল, যা নিয়ে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে।
এই নীতিমালার ৩ ধারায় বিভিন্ন অনুষদের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ এবং স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের সিজিপিএকে যোগ্যতা পরিমাপের মানদণ্ড ধরে বিশেষ দ্রষ্টব্যে বলা হচ্ছে, এক. এমফিল–সমমান বা পিএইচডি অতিরিক্ত ডিগ্রি হিসেবে গণ্য হবে, দুই. বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রভাষক নিয়োগের জন্য ‘প্রয়োজনে’ লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে একটি শর্টলিস্ট করে সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে।
এই যে দুই নম্বর শর্তের বিষয়ে আমরা অনেকে প্রতিবাদ করে আসছি। এটা নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছে অনেক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ‘নয়া অধ্যায়’ শুরু করছে।
আগে যেখানে কেবল মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক’ হওয়া যেত, সেই জায়গায় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষা হওয়ায় অনেকেই ভাবছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের এই নিয়ম যৌক্তিক এবং সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। যাঁরা যৌক্তিক মনে করছেন, তাঁরা আমার এই আলোচনার শেষে নিজের উত্তর খুঁজে পাবেন।
একজন শিক্ষক হওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতা বাইরে বিবেচনা করা হয়, তা আমাদের দেশে অতিরিক্ত যোগ্যতা কিংবা যোগ্যতার শিথিলতায় আনা হয়েছে, সেসবকে কখনোই মুখ্য করেননি। ফলে মাস্টার্স পাস করা শিক্ষার্থীদের সহকর্মী করা হচ্ছে, রাজনৈতিক সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, আবার তাঁদেরকেই সবেতনে পিএইচডি করার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো হচ্ছে। অথচ সেই যোগ্যতার ডক্টরেট ডিগ্রিধারীকে এসে হতাশা নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। লিখিত পরীক্ষার ফলে সেটিই হওয়ার কথা।দেখুন, বাংলাদেশে প্রচলিত এসব নিয়োগে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরের পর বছর ধরে নিয়োগপ্রক্রিয়া চালু আছে, বিশ্বাস করুন, এ ধরনের শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া উন্নত কিংবা পার্শ্ববর্তী ভারতেও নেই। এমনকি এত সহজে বাইরের দেশে কখনো বাচ্চাদের স্কুলের শিক্ষকও হতে পারবে না।
গণ-অভ্যুত্থানের পরও সেই একই ধারায় নিয়োগপ্রক্রিয়া চলে আসছে। লিখিত পরীক্ষা নিয়ে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা কীভাবে ভালো কিংবা যোগ্য প্রার্থীদের বেছে নেওয়ার উত্তম প্রক্রিয়া নয়, তার উদাহরণ হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক প্রার্থীর পাঠানো এক বার্তাকে কেস স্টাডি হিসেবে দেখা যাক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী আমাকে জানিয়েছেন, এই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় আসা এক শিক্ষার্থী জাপান থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি করে এসেছিলেন শিক্ষক হওয়ার জন্য, কিন্তু ওই লিখিত পরীক্ষার কারণে তিনি বাদ পড়েছেন। এ ছাড়া সেখানে বেশ কিছু প্রার্থী ছিলেন, যাঁরা স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে প্রথম বা দ্বিতীয় এবং গবেষণা প্রবন্ধ আছে। ওই প্রার্থীর অভিযোগ, সবারই বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী রাজনৈতিক সুপারিশ আছে।
তাহলে প্রশ্ন উঠে লিখিত পরীক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পিএইচডিধারী, প্রকাশনাধারীদের শর্টলিস্ট থেকে বাদ দেওয়া হলো, এই লিখিত পরীক্ষায় ভালো করা প্রার্থীই–বা কেন ভালো?
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়