গোপালগঞ্জে মা-বাবার পা ধোয়ালো ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী
Published: 19th, February 2025 GMT
গোপালগঞ্জে ব্যতিক্রমী ‘গুরুজনে কর নতি’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মা-বাবার পা-ধোয়ালো তিন শতাধিক শিক্ষার্থী।
কোটালীপাড়া উপজেলার এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয় এ ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মা-বাবাসহ গুরুজনদের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা বাড়ার পাশাপাশি আলোকিত জীবন গড়ে উঠবে বলে মনে করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখাগেছে, স্কুল মাঠে চেয়ারে বসে আছে মা-বাবা আর গুরুজন। তার পাশেই পানি, ফুল, ধুপকাঠি আর মোবমাতি নিয়ে বসে আছে সন্তান। কিছুক্ষণ পরই এক সাথে মা-বাবা আর গুরুজনদের পা ধুয়ে মুছে দিয়ে মোববাতি আর আগরবাতি জ্বালিয়ে ফুল ছিটিয়ে আশির্বাদ নেয় সন্তানেরা। সন্তানদের এমন ভক্তি দেখে মা-বাবার দু’চোখে পানি চলে আসতে দেখা যায়। মা-বাবাকে জড়িয়ে আবেআপ্লুত হয় সন্তানরাও।
এ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে মাতা-পিতা, শিক্ষক ও গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তির প্রায়োগিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি নিবেদনের শপথ গ্রহণ করে। আর এমন ব্যতিক্রমি ‘গুরুজনে কর নতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কোটালীপাড়া উপজেলার এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয়।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয় প্রঙ্গণে অনুষ্ঠিত ‘গুরুজনে কর নতি’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, কোটালীপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.
এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃত কুমার বাড়ৈর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিদ্যানুরাগী খগেন্দ্র নাথ গাইন, ম্যানেজিং কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রবীন্দ্র নাথ বৈদ্য, ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সভাপতি যতীন্দ্র নাথ বল্লভ, প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক পঙ্কজ কুমার বৈদ্য, ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সভাপতি সুনিল চন্দ্র বিশ্বাস বক্তব্য রাখেন।
নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কোয়েল বাইন বলেন, ‘‘গুরুজনে কর নতি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয় আমাদের গুরুজনদের শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম জীবনে বড় হতে গেলে গুরুজনদের আশির্বাদ ও দোয়া প্রয়োজন। তাদের আশির্বাদ ও দোয়া ছাড়া কোন কিছুই করা সম্ভব নয়।”
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী গৌরি বল্লভ বলেন, “এবারই প্রথম এমন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা-বাবা ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারলাম। এখন মনে হচ্ছে আমি আমার মা-বাবা ও শিক্ষকদের কতটা ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি।”
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী পূজা বাড়ৈ বলেন, “শুধু আজ নয় প্রতিটি দিন মা-বাবা ও গুরুজনদের শ্রদ্ধা জানাতে চাই। এমন আয়োজন করায় আমরা খুশি। আগামীতেও এমন আয়োজন করার দাবি জানাই।”
অভিভাবক দীলিপ কুমার বাইন বলেন, “গুরুজনদের প্রতি সম্মান দেখাতে শিক্ষার্থীদের মাঝে নীতি-নৈতিকতা, গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা গড়ে উঠবে। সেই সাথে এই ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনন ও মেধার উন্নতি হবে।”
অপর অভিভাবক মল্লিকা গাইন বলেন, “এমন আয়োজনে অংশ নিতে পারায় খুশি। এতে করে শিক্ষার্থীরা মাদক, জঙ্গি তৎপরতা ও ইভটিজিং থেকে দূরে থাকবে।”
এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃত কুমার বাড়ৈ বলেন, “শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতা শেখাতে এমন আয়োজনের কথা চিন্তা করি। তারই ধারাবাহিকতায় ‘গুরুজনে কর নতি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীদের মাঝে নীতি-নৈতিকতা গড়ে তুলতে আগামীতেও এমন আয়োজন করা হবে।”
কোটালীপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিক নুর আলম বলেন, “গুরুজনে কর নতি অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থী মানবিক গুণাবলি নিয়ে সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এতে বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখবে না সন্তানরা। শিক্ষার্থীদের মানবিক হিসাবে গড়ে তুলতে উপজেলার প্রতিটি স্কুলে এমন আয়োজন করা হবে।”
ঢাকা/বাদল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন র ম গ র জনদ র প গ র জন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনার ফুটপাত পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে
খুলনা নগরের প্রধান সড়ক ও ফুটপাত এখন পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে। ডাকবাংলা থেকে বড়বাজার পর্যন্ত নগরের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্রজুড়ে ফুটপাতের ওপর চলছে অস্থায়ী দোকানপাট, পণ্যের পসরা আর ক্রেতাদের ভিড়। ফলে পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই, স্থায়ী দোকানের ব্যবসায়ীরা হারাচ্ছেন ক্রেতা, হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত।
ডাকবাংলা এলাকা খুলনা নগরের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র। এখানে ডাকবাংলা সুপারমার্কেট, রেলওয়ে মার্কেট, খুলনা বিপণিবিতান, দরবেশ চেম্বার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিপণিবিতান, কাজী নজরুল ইসলাম মার্কেট, মশিউর রহমান মার্কেটসহ বড় শপিং কমপ্লেক্স আছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম বাজার এটি। কিন্তু এখন এর পুরো এলাকার ফুটপাত দখল হয়ে গেছে ভাসমান ব্যবসায়ীদের হাতে।
হকারদের ভিড়ে দোকান দেখা যায় নাসম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাকবাংলা মোড় থেকে ক্লে রোড পর্যন্ত ফুটপাতে মালামাল সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। স্থায়ী দোকানদাররাও নিজেদের দোকানের সামনের জায়গা দখল করে ব্যবসা করছেন। ভ্যানে করে জামাকাপড়, ফল, গৃহস্থালির পণ্য বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের পর এখন রাস্তার অর্ধেকজুড়ে। পুরোনো যশোর রোড, সদর থানা মোড়, কেডি ঘোষ রোড থেকে হেলাতলা পর্যন্ত একই চিত্র। খালিশপুর চিত্রালি বাজার ও দৌলতপুর বাজারেও ফুটপাতের ওপর খাট বসিয়ে চালা তুলে ব্যবসা চলছে। ফলে পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন।
খালিশপুর চিত্রালি বাজারের দোকান ব্যবস্থাপক মো. আসাদ বলেন, ‘হকারদের কারণে বাইরে থেকে আমাদের দোকান দেখা যায় না। তাদের ব্যবসা জমজমাট, কিন্তু আমাদের বিক্রি কমে গেছে। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোও ঢেকে গেছে অস্থায়ী দোকানে।’
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা গেছে, নগরের আয়তন ৪৬ বর্গকিলোমিটার, পাকা সড়ক ৬৪১ কিলোমিটার। ফুটপাতের সঠিক হিসাব না থাকলেও অন্তত ২৫ কিলোমিটার ফুটপাত হকারদের দখলে। চলতি বছরে ১২ দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই ফের দখল হয়ে যায়।
কেসিসির সম্পত্তিবিষয়ক কর্মকর্তা গাজী সালাউদ্দীন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী নেতা ও প্রশাসন সবাই একসঙ্গে উদ্যোগ না নিলে এটি বন্ধ হবে না। অনেকে নিজের দোকানের সামনের ফুটপাতও ভাড়া দেন হকারদের। সহযোগিতা না পেলে একা আমাদের কিছু করার নেই।’
পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা