৪-৫ শ’ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা, আজও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ লাল কার্ড প্রদর্শন
Published: 20th, February 2025 GMT
কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪-৫ শ’ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আহত করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ ও সন্ত্রাসীদের লাল কার্ড প্রদর্শন কর্মসূচি পালন করেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বেলা ১২টায় ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলা প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় এ কর্মসূচি। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার সিদ্ধান্ত কার্যকর এবং কুয়েটের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক পদে নতুন নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।
লাল কার্ড প্রদর্শন শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের ভেতরের সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে কুয়েটের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে একাডেমিক কার্যক্রম যা অব্যাহত থাকবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ক্যাম্পাসের গেটে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।
কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। কুয়েটের নিরাপত্তা পরিদর্শক মনিরুজ্জামান লিটন বাদী হয়ে বুধবার রাতে খানজাহান আলী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় চার থেকে ৫ পাঁচশ’ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মঙ্গলবার কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় অর্ধ শতাধিক আহত হন।
এদিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্পৃক্ততা পেলে তাকে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৯৩তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মঙ্গলবার কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনায় দুপুরে কুয়েটের সিন্ডিকেট সভায় আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। হামলায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার, বহিরাগতদের বিরুদ্ধে মামলা, আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.
বুধবার কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনসহ সাত একাডেমিক ভবন তালা দেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগসহ ৬ দফা দাবিতে বুধবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা। হয়নি কোনো ক্লাস-পরীক্ষা। দুপুর ১টার মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা তালা ঝুলিয়ে দেন।
বুধবার সিন্ডিকেট সভায় ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম এম এ হাসেমকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়,সংঘর্ষে জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আর জড়িত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। ক্যাম্পাস এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপ চ র য র র জন ত স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল