ইনিংসের ৩১তম ওভারে পঞ্চাশে পা রাখেন বাবর আজম। কিন্তু করাচির গ্যালারি থেকে বাবরের নাম ধরে কোনো স্লোগান ওঠেনি। পাকিস্তানের তারকা এ ব্যাটারও হাফ সেঞ্চুরি করার পর ব্যাট উঁচিয়ে ধরবেন কিনা, সেটা নিয়েও পড়ে যান দ্বিধায়। এর পেছনে কারণও আছে। ক্যারিয়ারের ৩৫তম ফিফটি করতে গিয়ে তিনি নিতে পারেননি ৪৯ বলে রান।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে পাকিস্তানের হারের প্রধান কারণ হিসেবে বাবরের এই ৪৯ ডট বলকেই বড় করে দেখছেন সবাই। সমালোচকরাও একহাত দিচ্ছেন পাকিস্তান এ ব্যাটারকে। কিউইদের কাছে পরাজয়ে স্বাগতিক পাকিস্তানকে ঠেলে দিয়েছে ব্যাকফুটে।
রোববার দুবাইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি মোহাম্মদ রিজওয়ানদের এককথায় অগ্নিপরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় নামার আগে চোটের কারণে ফখর জামানকে হারানোটা পাকিস্তানের জন্য বড় ধাক্কা।
বাবরের সমালোচনা করার যুক্তিও আছে। নিউজিল্যান্ডের করা ৩২০ রানের টার্গেট তাড়া করতে গেলে যে রকম শুরুর প্রয়োজন ছিল, সেটা করতে পারেনি পাকিস্তান। ফিল্ডিংয়ের সময় চোটে পড়া ফখরের পরিবর্তে ওপেনিংয়ে নামা সৌদ শাকিল অনভ্যস্ত পজিশনে ছিলেন অস্বস্তিতে। বাবরের কাছে তাই দ্রুত রান তোলার দাবি ছিল সবার। কিন্তু দলের সফলতম ব্যাটার এগোচ্ছিলেন কচ্ছপ গতিতে। পাওয়ার প্লে শেষে বাবরের রান ছিল ২৭ বলে ১২।
শাকিল ১৯ বলে ৬, রিজওয়ান ১৪ বলে ৩ রানে আউট হলে প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তান তোলে স্রেফ ২২ রান; যা ঘরের মাঠে ওয়ানডেতে পাওয়ার প্লেতে তাদের সর্বনিম্ন। এর পরও সবাই ধরে নিয়েছেন পরিস্থিতির বিচারে ব্যাট করা বাবর ঝড় তুলবেন। কিন্তু ৮১ বলে ফিফটি করা বাবর ঝড় তুলতে গিয়ে আর পারেননি। আউট হয়ে গিয়েছেন ৯০ বলে ৬৪ করে।
৩২১ রান তাড়ায় বাবরের ৭১.
ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে আসা সালমান আগারের কাছেও বাবরের ইনিংস নিয়ে প্রশ্ন ছুটে গেল। এই বিষয়টি এড়িয়ে বরং তুলে ধরলেন সামগ্রিক ব্যর্থতার কথা, ‘পুরো ইনিংসই যদি দেখেন, আমরা মোমেন্টামই পাইনি। ৩২০ রান তাড়া করতে হলে বড় জুটি প্রয়োজন এবং সেখানে মোমেন্টামও লাগবে। সে রকম কিছু আজকে হয়নি। উইকেট পড়েছে নিয়মিত। যেভাবে খেলা উচিত ছিল, আমরা পারিনি সেভাবে। এ জন্য আমরা জিততে পারিনি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব বর র
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।