কমলগঞ্জে গ্রামবাংলার প্রকৃতি রাঙিয়ে ফুটছে শিমুল ও পলাশ ফুল। ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই আগুন রাঙা শিমুল ফুল মন কাড়ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। বাতাসে ভাসছে আনন্দ-আভা। গাছে গাছে সবুজ পাতা, মুকুল, ফুল আর কোকিলের কুহুকুহু ডাক মনে করিয়ে দেয় বসন্তের বার্তা। 
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার প্রধান সড়কে কিছু পলাশ-শিমুল রয়েছে। এসব গাছের ফুল প্রকৃতির শোভা বাড়াচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গুটি কয়েক শিমুল গাছে ফুল দেখা গেলেও বর্তমানে কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে তা। 
প্রকৃতিতে শিমুল গাছ এমনিতেই জন্মায়। একসময় শিমুল গাছ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ছিল। অনেকে নিজের গাছের তুলা দিয়ে তৈরি 
করত লেপ, তোশক, বালিশ। গ্রামের দরিদ্র মানুষ শিমুলের তুলা কুড়িয়ে বিক্রি করত। অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্ব হারানোয় ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে শিমুল ও পলাশ গাছ।  
কমলগঞ্জ সরকারি স্কুলের বাংলার শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বসন্ত মানেই শিমুল ও পলাশ ফুল। এবারের বসন্ত ঘুরে আসতেই কমলগঞ্জ উপজেলায় শিমুল গাছগুলোতে আগুন রাঙা নতুনরূপে সেজেছে প্রকৃতি। 
কমলগঞ্জের লেখক ও গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, শিমুল ফুল না ফুটলে যেন বসন্ত আসে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কমলগঞ জ বসন ত

এছাড়াও পড়ুন:

অক্সিডেন্টাল টাকা নিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণ পায়নি স্থানীয়রা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া বিস্ফোরণের ২৮ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শনিবার। ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মধ্যরাতে মাগুরছড়ার ফুলবাড়ী চা বাগানের সম্মুখভাগে অবস্থিত ১ নম্বর গ্যাস অনুসন্ধান কূপে খননকালে ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল আশপাশের এলাকা। বিস্ফোরণের ধাক্কায় আগুনের লেলিহান শিখা ৬০০ ফুট উচ্চতায় উঠে যায়। পুড়ে কয়লা হয়ে যায় লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনের আশপাশের গাছপালা, মারা যায় বহু পশুপাখি। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় চা বাগান, বিদ্যুৎ লাইন, রেলপথ, গ্যাস পাইপলাইন, গ্যাসকূপ, রিজার্ভ গ্যাস, পরিবেশ প্রতিবেশ ও ভূমিস্থ পানিসম্পদ। ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য আজও ভাসে মৌলভীবাজার জেলাবাসীর মনে। অথচ সেই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কূপ খননকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান অক্সিডেন্টালের কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারেনি সরকার। উল্টো নিজেদের যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার বীমার টাকা তুলে ভেগেছে অক্সিডেন্টাল। 

১৯৯৫ সালে বৃহত্তর সিলেটের ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয় মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টাল অব বাংলাদেশ লিমিটেডের। অনুসন্ধান শুরুর পর তেল-গ্যাসে সমৃদ্ধ হবে এলাকা– এই ভেবে কমলগঞ্জ তথা মৌলভীবাজারের মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত হয়। তেল-গ্যাসের সন্ধানে ৩ হাজার ৭০০ মিটার কূপ খননের লক্ষ্য নিয়ে কাজও শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ৮৪০ মিটার খননের পরই ঘটে দুর্ঘটনা। টানা ১৫ দিন আগুন জ্বলার পর যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের ইন্টারন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির বিশেষজ্ঞ রিচার্ড চাইল্ড রিসহ চার সদস্যের একটি দল আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে পুরো কূপের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে প্রায় ছয় মাস। 
বিভিন্ন সময় তেল-গ্যাস বিশেষজ্ঞরা মাগুরছড়া বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনুমান করতে চেষ্টা করেছেন। তাদের মতে, মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রে  ভূগর্ভস্থ উত্তোলনযোগ্য ২৪৫ দশমিক ৮৬ বিসিএফ গ্যাস পুড়ে যায়; যার দাম ছিল প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষতি ছিল আরও ১১ হাজার কোটি টাকার। বর্তমান বাজারমূল্য হিসাব করলে মোট ক্ষতির পরিমাণ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অগ্নিকাণ্ডে মাগুরছড়া ও আশপাশের ৮৭ দশমিক ৫০ একর এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের গবেষণায় দেখা গেছে, মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের কারণে ২৯টি চা বাগানের ৪৬ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৮৩০ টাকার ক্ষতি হয়। লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৬৯ দশমিক ৫ হেক্টর এলাকার ২৫ হাজার ৬৫০টি পূর্ণবয়স্ক গাছ পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতি হয় প্রায় ৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকার। ওই ঘটনার সরকারি তদন্তে ক্ষতি বাবদ ধরা হয় ৫০৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ ছাড়া বনাঞ্চলের সম্ভাব্য ক্ষতি হয়েছে ৪০ হেক্টর ভূমি এবং ১৫ হাজার ৪৫০টি বৃক্ষ। ধারণা করা হয়, আগুনের কারণে ১০ বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৮৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ, বনাঞ্চলের মোট ক্ষতি ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৫৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বিস্ফোরণের ফলে ২ হাজার ফুট রেলপথও ধ্বংস হয়। এতে রাজস্ব ছাড়া ক্ষতি হয়েছে ৮১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। সড়কপথের ক্ষতি ২১ কোটি টাকা। গ্যাস পাইপলাইনের ক্ষতি ১৩ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতি ১ কোটি ৩৫ লাখ ৯ হাজার ১৮৬ টাকা। মাগুরছড়া খাসিয়া পানপুঞ্জির অধিবাসীদের পানের বরজগুলোতে প্রতিদিন ৪৭ হাজার ৭৫০ টাকা হারে মোট ক্ষতি হয় ১২ লাখ টাকা।

১৯৯৭ সালের ১৪ জুন বিস্ফোরণের পর জ্বলতে থাকা কূপের উৎস মুখ বন্ধ করার কাজ সম্পন্ন হয় পরের বছর ৯ জানুয়ারি। তার আগেই ১৯৯৭ সালের ২০ ডিসেম্বর অক্সিডেন্টাল মাগুরছড়া থেকে বিদায় নেয়। এতে দেশজুড়ে দেখা দেয় তীব্র প্রতিক্রিয়া।
মাগুরছড়া তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতা সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, মাগুরছড়া অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারি যে তদন্ত কমিটি হয়েছিল, তারা এক মাসের মধ্যেই তাদের প্রতিবেদন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। ওই প্রতিবেদন বীমা কোম্পানিতে জমা দিয়ে সেই সময়ই অক্সিডেন্টাল তাদের বীমাকৃত যন্ত্রাংশ, রিগ ইত্যাদির ক্ষতিপূরণ আদায় করে নেয়। অথচ যে অক্সিডেন্টালের কারণে এত বড় ক্ষতি হলো, তাদের কাছ থেকে সরকার বা এলাকাবাসী এখনও কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বনের ক্ষতি নিরূপণ করা হলেও এ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক বনের ক্ষতি কখনও পুষিয়ে ওঠার নয়। পরিবেশ বিপর্যয়ের ব্যাপারে আগের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
এদিকে মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ কমলগঞ্জে মানববন্ধন করবে পাহাড় রক্ষা উন্নয়ন সোসাইটি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি, কমলগঞ্জ উন্নয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। মাগুরছড়া বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও কমলগঞ্জের ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের দাবি জানিয়েছে তারা। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৮তম বার্ষিকী পালিত
  • ২৮ বছরেও মাগুরছড়া বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ পায়নি বাংলাদেশ
  • অক্সিডেন্টাল টাকা নিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণ পায়নি স্থানীয়রা