Samakal:
2025-05-01@09:22:44 GMT

আবছায়া সময়ের আশ্চর্য কথন

Published: 21st, February 2025 GMT

আবছায়া সময়ের আশ্চর্য কথন

বাংলাদেশের এক আবছায়া অধ্যায় ১৯৭২ থেকে ’৭৫ সাল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের শত্রু ছিল চেনা। কিন্তু সাতচল্লিশ-পরবর্তী বাংলাদেশের এই সময়টা এত বেশি আলো-আঁধারিময় যে তখনকার দেশ ও সমাজের নিখুঁত পরিস্থিতি জানা এবং তা শিল্পে দক্ষতার সঙ্গে প্রতিস্থাপন শুধু কঠিনই নয়, একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জের। ফলে যখন শুনলাম, দুঃসময়ের অন্যতম এই সময়েও যারা সফলভাবে কলম সচল রেখেছেন তাদেরই একজন অঞ্জন আচার্য ১৯৭২ থেকে ’৭৫ সময়কাল নিয়ে গল্প লিখছেন, তখন বইটি নিয়ে আগ্রহটা তীব্র হলো। ‘সাদা রাত’ নামে ইতিহাসধর্মী গল্পগ্রন্থটি পড়ে মনে হলো এটি সাহিত্য সৃষ্টিতে অঞ্জন আচার্যের উল্লেখযোগ্য চেষ্টাগুলোর মধ্যে অন্যতম। 

অন্যতম বলার কারণ অনেক। প্রথমত অঞ্জন আচার্যের ভাষা ও গদ্যের গাঁথুনি। বইটির প্রতিটি গল্পের চরিত্ররাই কেমন আলো আঁধারিময়। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এ চরিত্রগুলো আমাদের অতি চেনা। তারপরও যেন বহু চেনা বাকি রয়ে গিয়েছিল। বইটিতে লেখক চেষ্টা করেছেন চরিত্রগুলোকে নতুন করে চেনাতে। তথ্যের সত্যাসত্য এখানে প্রচণ্ডভাবে বিবেচ্য। এই দেশের ইতিহাসের নানা চরিত্র সম্পর্কে যেভাবে পক্ষপাতিত্বমূলক ভিন্ন ভিন্ন ন্যারেশন তৈরি হয়েছে, তাতে নিজস্ব পড়া বা জানার বাইরে বিশ্লেষণ ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটানো কঠিন। তবে বইটি হয়তো সেই বিতর্ক উতরে যাবে ফিকশনের বদৌলতে। তারপরও অঞ্জন ইতিহাসের ঘোড়ায় চড়ে চেনা চরিত্র বিশ্লেষণে যেভাবে আবেগের লাগাম ধরেছেন, তা সত্যি প্রশংসনীয়। 

বইয়ের গল্পগুলো পড়তে পড়তে পাঠক ভেসে চলেন এক রহস্যময় কালপর্বের মেঘের ভেলায়। খন্দকার মোশতাক আহমেদকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে প্রথম গল্প ‘আগামসি লেনের কিস্তি টুপি’, সিরাজ সিকদারের ঘটনাকে উপজীব্য করে লেখা ‘দ্য লাস্ট কনফেশন’, সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা পার্টির পরিণতি নিয়ে ‘পেয়ারাবাগানের ইশতেহার’, রক্ষীবাহিনী ও বাকশালকে নিয়ে ‘জলপাই রঙের ছায়া’, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষকে কেন্দ্র করে ‘আকালের আখ্যান’, তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে ‘যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ’, খালেদ মোশাররফকে কেন্দ্র করে গল্প ‘অপাঙক্তেয়’, কর্নেল তাহেরকে উপজীব্য করে গল্প ‘অনবসরপ্রাপ্ত ক্রাচ’, জাতীয় চার নেতার জেলহত্যাকে কেন্দ্র করে রচিত গল্প ‘গারদে গুলির দাগ’।
বইটি সম্পর্কে ফ্ল্যাপে লেখক নিজেই বলেন, এই সময়কে ধরে এর আগে কোনো সিরিজ গল্প লেখা হয়েছে বলে জানা নেই। কারও প্রতি পক্ষপাত হয়ে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে-মিশিয়ে লেখা নয়, কিংবা সত্যকে আড়াল করে কেবল চাটুকারিতা নয়। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের ভূমিকায় নেমে একপেশে নিন্দা-মন্দ নয়, বরং সত্যকে সৎসাহসের সঙ্গে বলার লক্ষ্যে দেশের ইতিহাস ও সাধারণ মানুষের প্রতি দায় থেকেই এই বই লেখা। এটি নিছক কোনো গল্পের বই নয়। 
লেখকের স্বীকারোক্তিতে এটি স্পষ্ট যে তিনি শিল্পের চেয়ে দায়বোধকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তার মানে তিনি ঠিক গল্পও লিখতে চাননি। এখানেই বিতর্কের সমূহ অবকাশ থাকে। ইতিহাসের এমন এক যুগ সন্ধিক্ষণের ঘটনা গল্পের আঙ্গিকে উপস্থাপন আলোচনা-সমালোচনার দাবি রাখে। লেখক নিজেকে যতই নির্মোহ বলে ঘোষণা করুন না কেন, পাঠকও আতশকাঁচ দিয়ে তা মূল্যায়ন করতে সচেষ্ট হতে পারেন। কারণ, শিল্পীর কাছে শিল্পের চেয়ে ইতিহাস ও সাধারণ মানুষের প্রতি দায় যদি প্রকট হয়ে ওঠে, সেখানে শিল্প তার সৌন্দর্য হারাবেই; এটি সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়। ইতিহাস জানার জন্য গল্পের গহীন সরোবরে অবগাহনের আদৌ কোনো যুক্তি আছে কিনা, তাও প্রশ্নসাপেক্ষ। এরপরও ইতিহাস ও আখ্যানের মেলবন্ধনে গল্পকার অভিনব কায়দায় কিছু কালপ্রভাবী গল্প সরল ভঙিমায় নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করে বিমোহিত করেছেন। পাঠককে চিন্তার সমুদ্রে পক্ষ-বিপক্ষের ঢেউয়ে হাবুডুবু খাওয়ার সুযোগ করে দেওয়াটাও কম কৃতিত্বের নয়। 

বইটির চলমান পাঠক্রমের ভেতর দিয়ে নিজের অমীমাংসিত প্রশ্নের হয়তো অনেক উত্তর খুঁজেছি। যেমন স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশতাক কেন, কীভাবে ক্ষমতা দখল করলেন? সে সময় চরমপন্থি নেতা সিরাজ সিকদার ও তাঁর দল সর্বহারা পার্টির ভূমিকা কী ছিল? রক্ষীবাহিনী কেন গঠন করা হলো, তাদের নিয়ে কেন এত বিতর্ক? চুয়াত্তর সালে কেন দুর্ভিক্ষ হলো? কেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা ‘বাকশাল’ গঠন করলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান? তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল কেন ধরল? কী কারণে তাদের দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলো, কেন একসময় বাধ্য হয়ে তাজউদ্দীনকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে হলো? জেলখানার মতো নিরাপদ জায়গায় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে কেন ও কীভাবে হত্যা করা হলো? ৪ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ কীভাবে ক্যু করলেন, এরপর মাত্র তিন দিনের মাথায় ৭ নভেম্বর তাঁর দুই সহযোগী কর্নেল নাজমুল হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হায়দারকে হত্যার পর পাল্টা ক্যু হলো, সে সময় কর্নেল তাহের ও তাঁর দল জাসদ গণবাহিনীর কী ভূমিকা ছিল? গল্পকার যতই তাঁর নিজের মতো করে এসব সত্য উপস্থাপন করেন, পাঠক হিসেবে আমিও ইতিহাসের এই অধ্যায়কে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করি। 

প্রতিটি গল্পে ইরাজ নামক চরিত্রটির উপস্থিতি লক্ষণীয়। ইরাজকে কেন্দ্র করে গল্প আবর্তিত হলেও সুকৌশলে গল্পকার ঐতিহাসিক চরিত্র ও ঘটনার অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন। গল্প পড়ার সময় মাঝে মাঝে থমকে যেতে হয় এ ভেবে যে, পাঠক কি ইতিহাসের পাঠ নিতে এসেছেন গল্পকারের কাছে। এভাবে সরাসরি ইতিহাসের ঘটনা ও চরিত্রকে উপজীব্য করে গল্পপাঠ কখনও পাঠকের কাছে অযৌক্তিক বলেও মনে হতে পারে। পূর্বনির্ধারিত বিষয়কে পাঠকের নজরে আনার জন্য গল্পকার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগ ঘটাতে চেয়েছেন; যা নিয়ে পাঠকের সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার অবকাশ থাকে।
সাদা রাত ।। অঞ্জন আচার্য ।। গল্প ।। প্রকাশক: বিদ্যাপ্রকাশ ।। প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ ।। পৃষ্ঠা: ৭২ ।। মূল্য: ২২০ টাকা
পলাশ মজুমদার, কথাসাহিত্যিক


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল ক ন দ র কর ত জউদ দ ন কর ন ল উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশে আসতে চায় চীনা বহুজাতিক কোম্পানি টেনসেন্ট, কী ব্যবসা করে তারা

চীনা বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি টেনসেন্ট বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এক ফেসবুক পোস্টে এই তথ্য জানান।

ফেসবুক পোস্টে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লেখেন, বাংলাদেশে এসেছে মার্কিন জায়ান্ট স্টারলিংক। আজ (সোমবার) তাদের লাইসেন্স আবেদন অনুমোদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশে বিগ টেক জায়ান্ট আসার যাত্রাটা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ধরেই শুরু হলো। এভাবে আসবে আরও অনেকেই।

চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট টেনসেন্ট বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে একই পোস্টে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লিখেছেন, ‘আজ আমরা চায়নিজ জায়ান্ট টেনসেন্টের সঙ্গে অফিশিয়ালি বসেছি। তারাও বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের দ্রুততম সময়ে পলিসি সাপোর্টের আশ্বাস দিয়েছি।’

অসাইরিস গ্রুপও বাংলাদেশে আসছে বলে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে হাইপার স্কেলার ক্লাউড ও ডেটা সেন্টার হবে বাংলাদেশি ডাটা ও ক্লাউড কোম্পানি যাত্রার হাত ধরে। এখানে হচ্ছে বিগ জায়ান্টদের জন্য বিশ্বমানের সিকিউরড ক্লাউড সে-আপ, যেখানে আসতে পারে মেটা, গুগলের পেলোড। এমন অভাবনীয় সব উপহার বাংলাদেশকে দিতে চলছেন অধ্যাপক ইউনূস।

টেনসেন্টের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয় চীনের শেনজেনে অবস্থিত।

আরও পড়ুনবাংলাদেশের গেমশিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী চীনের টেনসেন্ট২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪,৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক
  • ।।  বাংলাদেশি কবিতা বিরল সম্মাননা ।।
  • সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক
  • সাবেক সচিবের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক 
  • জবির বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে ৮ বছর ধরে একই চেয়ারম্যান
  • ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে সিঙ্গাপুর হাইকমিশনের সাক্ষাৎ
  • বাংলাদেশে ১০ বছরের লাইসেন্স পেল স্টারলিংক
  • বাংলাদেশে আসতে চায় চীনা ইন্টারনেট জায়ান্ট টেনসেন্ট
  • বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায় চীনা বহুজাতিক কোম্পানি টেনসেন্ট
  • বাংলাদেশে আসতে চায় চীনা বহুজাতিক কোম্পানি টেনসেন্ট, কী ব্যবসা করে তারা