ভারতীয় ঋণের প্রকল্প নিয়ে বিপাকে পড়েছে রেল
Published: 24th, February 2025 GMT
ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দুটি প্রকল্পে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ভারত ঋণ ছাড় করেনি। ফলে নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি।
অন্যদিকে রেলওয়েতে ভারতীয় ঋণে দুটি প্রকল্পের কাজ চলছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই দুই প্রকল্পে কর্মরত ভারতীয়রা বাংলাদেশ ছাড়েন। সবাই ফেরেননি। ফলে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের কাজ পুরোদমে শুরু হয়নি।
রেলওয়েতে এখন ভারতীয় ঋণে চলমান, অর্থাৎ প্রক্রিয়াধীন ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সংখ্যা সাত। আগে উল্লেখ করা চারটির বাইরে দুটি প্রকল্পের কাজ শেষ, কিন্তু চূড়ান্তভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়নি। একটি প্রকল্প একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, দুই প্রকল্পে ভারত আসলেই অর্থায়ন করবে কি না, তা জানাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। ভারত এখনো কিছু জানায়নি। বাংলাদেশ মনে করছে, ভারতীয় ঋণ পাওয়া না-ও যেতে পারে। সরকার বিকল্প অর্থায়নের কথাও ভাবছে।
এদিকে প্রকল্প নেওয়া এবং কাজ শুরু করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। এতে ব্যয় বাড়ছে। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে কাজের পরিমাণ বাড়ানোর কারণে ব্যয় বেড়েছে।
যে দুই প্রকল্পে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ছয় বছর পেরিয়ে গেছে, তার একটি বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত মিশ্র গেজ রেললাইন নির্মাণ। এই পথে রেললাইন না থাকায় ট্রেনগুলোকে সান্তাহার, নাটোর ও পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে ঢাকার পথে চলাচল করতে হয়। এতে প্রায় ১২০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হয়।
বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ৮৬ কিলোমিটার নতুন মিশ্র গেজ রেলপথ নির্মাণে ২০১৮ সালে প্রকল্প নেওয়া হয়। শুরুতে নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সম্ভাব্যতা যাচাই ও চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নে লেগে যায় গত বছরের জুন পর্যন্ত।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ কারণে ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ৩০ কোটি ডলার (প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা) বাড়তি অনুমোদনের জন্য ভারতকে চিঠি দেয়। সাড়া না পেয়ে গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর পুনরায় চিঠি দেয় ইআরডি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, শুরুতে প্রকল্পের অধীনে যেসব কাজ করার কথা ছিল, সেই অনুযায়ী সার্বিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কাজ বেড়েছে। ফলে অগ্রগতি মাত্র ৩৮ শতাংশ। শুরুতে প্রায় ৭১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করার কথা ছিল। পরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৮ কিলোমিটার। রেলপাতের ওজনও পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর ইআরডির মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। এতে অর্থায়নের বিষয়ে এক মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। নইলে বিকল্প উৎস থেকে অর্থায়নের চেষ্টা চালানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
বর্তমানে এই প্রকল্পে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মী বাংলাদেশে নেই বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়। অর্থাৎ প্রকল্পের কাজ এখন পুরোপুরি বন্ধ আছে। এর মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক, রেল ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, রেল, বিদ্যুৎসহ সব খাতেই ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের গতি ধীর। অর্থায়ন–সংক্রান্ত জটিলতাও রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
প্রতিশ্রুতির পর ঋণ ছাড়ে ধীরগতি
২০১০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় রেল, সড়ক, নৌসহ বিভিন্ন খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতীয় ঋণের প্রথম প্রতিশ্রুতি আসে। ভারতীয় ঋণকে লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) হিসেবে অভিহিত করা হয়। এখন পর্যন্ত মোট ৭৩৬ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
ভারতীয় ঋণে ২০১৮ সালে খুলনা থেকে দর্শনা পর্যন্ত রেললাইন ডাবল লাইনে রূপান্তরের প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাই ও চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নে পরামর্শক নিয়োগ দিতেই পেরিয়ে যায় চার বছর। গত বছর জুনে ভারতীয় স্টুপ কনসালট্যান্ট-আরভী অ্যাসোসিয়েটস (যৌথ) নামের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত নকশা জমা দেয়।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের সব কাজই ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে করেছে। তাদের করা নকশা অনুসারে প্রকল্পের ব্যয় বাড়াতে হবে। ভারতকে অর্থায়নের পরিমাণও বাড়াতে হবে। বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে বহুবার জানানো হয়েছে। তবে গত বছর ৫ আগস্ট বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দিচ্ছে না।
খুলনা-দর্শনা ডাবল লাইন প্রকল্প শেষ করার কথা ছিল ২০২২ সালে। তবে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এই প্রকল্পে ভারত অর্থায়ন করবে কি না, সে সিদ্ধান্ত জানাতে গত ডিসেম্বরে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়, সেটিরও জবাব পাওয়া যায়নি।
কাজে ধীরগতি, জটিলতা
ভারতীয় ঋণে যে দুটি প্রকল্পের কাজ চলছে, তার একটি ঢাকা-টঙ্গী রেলপথে তৃতীয় ও চতুর্থ মিশ্র গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর মিশ্র গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। ২০১২ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকার। দরপত্রপ্রক্রিয়া শেষ করতেই লেগেছে ছয় বছর। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এতে বাস্তবায়ন পর্যায়ে নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়।
এই প্রকল্পের ব্যয় ও সময় অনেকটা বেড়েছে। নতুন করে প্রকল্প শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। রেলওয়ে সূত্র জানায়, শুরুতে প্রকল্পের অধীনে যেসব কাজ করার কথা ছিল, সেই অনুযায়ী সার্বিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কাজ বেড়েছে। ফলে অগ্রগতি মাত্র ৩৮ শতাংশ। শুরুতে প্রায় ৭১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করার কথা ছিল। পরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৮ কিলোমিটার। রেলপাতের ওজনও পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
খুলনা-দর্শনা ডাবল লাইন প্রকল্প শেষ করার কথা ছিল ২০২২ সালে। তবে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এই প্রকল্পে ভারত অর্থায়ন করবে কি না, সে সিদ্ধান্ত জানাতে গত ডিসেম্বরে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়, সেটিরও জবাব পাওয়া যায়নি।বাড়তি কাজের বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ভারতের অনুমতি শর্তে ২০২৩ সালে অনুমোদন দিয়েছে। বাড়তি খরচ ও নকশা পরিবর্তনের বিষয়টি অনুমোদনের জন্য ২০২৩ সালের শেষ ভাগে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু এখনো ভারত সাড়া দেয়নি।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে ভারত সীমান্তবর্তী শাহবাজপুর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১১ সালে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে ভারতীয় ঋণে মিশ্র গেজ ডাবল লাইনে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যোগ হয় আরও কিছু কাজ। এতে ব্যয় বাড়ে। কাজ দুই বছরে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৮ সালে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর কয়েক দফা সময় বাড়ে। শেষ হওয়ার কথা গত ডিসেম্বরে। তবে এখন পর্যন্ত কাজ এগিয়েছে মাত্র ৫১ শতাংশ। এর মধ্যে আবারও কাজ বেড়েছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে। ফলে সময় ও ব্যয় দুটিই আবার বাড়ানোর দরকার হবে।
ভারতীয় ঋণে যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়নেও দীর্ঘ সময় লেগেছে। ব্যয়ও বাড়াতে হয়েছে। যেমন খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে তিন বছরের জায়গায় লেগেছে ১৩ বছর। খরচ হয়েছে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা ব্যয়ের দ্বিগুণের বেশি অর্থ। যার পরিমাণ ৪ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। এই পথে এখন দিনে একটি ট্রেন চলছে।
আখাউড়া থেকে আগরতলা পর্যন্ত সরাসরি রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। বাংলাদেশ অংশে মিশ্র গেজ রেললাইন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৪৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় সরকার ৪২০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেয়। রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্পের ব্যয় ৩৩ শতাংশ কমেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে এটির উদ্বোধন করা হয়। তবে এই পথে কোনো ট্রেন চলাচল করেনি।
ভারতীয় ঋণের যে প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, সেটি হলো দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ লাইনকে মিশ্র গেজে রূপান্তর। এ জন্য ২০১৮ সালে প্রকল্প নেওয়া হয়। ভারত এই প্রকল্পের জন্য ১২ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সমীক্ষা ও চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে। তবে এতে ঋণ পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এখন পর্যন্ত কাজ এগিয়েছে মাত্র ৫১ শতাংশ। এর মধ্যে আবারও কাজ বেড়েছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে। ফলে সময় ও ব্যয় দুটিই আবার বাড়ানোর দরকার হবে।ঋণের শর্ত
বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে তুলনামূলক সহজ শর্তে ঋণ পায়। চীন, রাশিয়া ও ভারতের ঋণের শর্ত তার চেয়ে কঠিন।
ভারতীয় ঋণের সুদহার ধরা হয় ১ শতাংশ এবং প্রতিশ্রুতি ফি শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। খেলাপি হলে ২ শতাংশ হারে সুদ ধার্য রয়েছে। ৫ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। চুক্তি অনুসারে, ৭৫ শতাংশ পণ্য-সেবা ভারত থেকে আমদানি করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তি) ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরোধী তিনি। এ ছাড়া ভারতীয় ঋণের প্রকল্প নেওয়া এবং প্রতিশ্রুত অর্থের ছাড়ে বেশ ধীরগতি দেখা যায়। ফলে এ ধরনের অর্থায়ন ও প্রকল্প নিয়ে পর্যালোচনা করা উচিত। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় ঋণে নেওয়া প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ পণ্য ও মেধা ওই দেশ থেকে নেওয়ার যে শর্ত রয়েছে, তা-ও একতরফা। এ ছাড়া প্রকল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভারতের সুবিধা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র ক জ র লপথ ন র ম ণ চ ড় ন ত নকশ ২০২৩ স ল র র প রকল প ই প রকল প ন প রকল প ২০১৮ স ল সরক র র গত বছর ল ইন ন র পর ম পর য য় ব ষয়ট বছর র ভ রতক র লওয় এখন প
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে ডেকে নিয়ে হত্যার দুই ঘটনাকে গণপিটুনি বলছে পুলিশ, স্থানীয়রা কী বলছে
একই দিনে, একই জায়গায় হত্যাকাণ্ডের দুটি ঘটনা। একটি ঘটেছে ভোরে, আরেকটি সকালে।
ঘটনাস্থল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকার হাক্কার পাড়ে। তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
প্রথম ঘটনায় দুই যুবককে ঘুম থেকে উঠিয়ে রাস্তায় নিয়ে পেটানো হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান একজন।
দ্বিতীয় ঘটনার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, দুই যুবককে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার পাশাপাশি পিটিয়ে হত্যার দুটি ঘটনারই একাধিক ভিডিও ফুটেজ প্রথম আলো পেয়েছে। যারা পিটিয়ে হত্যা করছে, ভিডিও ফুটেজে তাদের চেহারা স্পষ্ট।
প্রত্যক্ষদর্শী, ঘটনাস্থলের আশপাশের মানুষ ও ভুক্তভোগীদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় বের করেছে প্রথম আলো। পরিকল্পিত এই দুই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুলিশ বিষয়টি গণপিটুনি বলে প্রচার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা।
নিহত দুই যুবক হলেন মো. সুজন ওরফে বাবুল ও মো. হানিফ। আর আহত দুজন হলেন মো. শরীফ ও ফয়সাল। ঘটনার পর নিহত দুই যুবকের স্বজনেরা মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে পুলিশকে ভিডিও ফুটেজ দেখালেও মামলা নিতে চায়নি। পরে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পরামর্শ দেয়। এতে পরিবার রাজি হয়নি। পরে আদালতে মামলা করতে আবেদন করেছে দুই পরিবার।
পুলিশ বলছে, নিহত দুজন ছিনতাইকারী ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। আহত দুজন এখন ছিনতাইয়ের মামলায় কারাগারে আছেন। নিহত ও আহত ব্যক্তিরা ঢাকা উদ্যান এলাকায় কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম প্রধান জনি ওরফে ‘রক্তচোষা’ জনির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে ছিনতাই-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৭টি মামলা রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, ঘটনাস্থলের আশপাশের মানুষ ও ভুক্তভোগীদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় বের করেছে প্রথম আলো। পরিকল্পিত এই দুই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুলিশ বিষয়টি গণপিটুনি বলে প্রচার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা।স্থানীয় একাধিক দোকানি জানান, ওই চারজন সেদিন ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়েননি। কয়েকজন মিলে তাঁদের ধরে এনে পিটিয়েছে। এতে দুজনের মৃত্যু হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে এলাকার আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টি।
ঘটনার ভিডিও ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকার হাক্কার পাড়ে ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে ও সকালে গণপিটুনির কোনো ঘটনাই ঘটেনি। দুটি হত্যাকাণ্ডই হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। এই দুটি হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় ওয়ার্ড (১০০ নম্বর সাংগঠনিক ওয়ার্ড) বিএনপির সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আক্তার হোসেনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাঁকে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে।
গত ৫ অক্টোবর নবীনগর হাউজিংয়ের ১২ নম্বর সড়কে আক্তার হোসেনের বাসায় যান এই প্রতিবেদক। বাসার দরজার বাইরে থাকা কলিং বেল একাধিকবার চাপার পরও ভেতর থেকে কেউ সাড়া দেননি। পরে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেন এই প্রতিবেদক। কিন্তু ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সর্বশেষ গতকাল রোববার রাত আটটার দিকেও তাঁর মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তখনো ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পুলিশ বলছে, নিহত দুজন ছিনতাইকারী ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। আহত দুজন এখন ছিনতাইয়ের মামলায় কারাগারে আছেন।আক্তার হোসেনের ব্যবহার করা আরেকটি মুঠোফোন নম্বর গত রাত ১১টার দিকে নবীনগর হাউজিংয়ের স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা সূত্রে পাওয়া যায়। এই নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করে প্রথম আলো। কিন্তু রিং হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এবং মুঠোফোনে খুদে বার্তা (হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বক্তব্য জানতে) পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র ও স্থানীয় একাধিক দোকানি জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের পর নবীনগর হাউজিং ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি ঠেকাতে নবীনগর হাউজিং এলাকায় স্থানীয়ভাবে একটি ‘টহল টিম’ গঠন করা হয়। আক্তার এই টহল টিমের প্রধান। দুটি হত্যাকাণ্ডে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁরা এই টহল দলের সদস্য।
বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গণপিটুনিতে নিহত দুজন ফ্যাসিস্টের দোসর বলে তিনি শুনেছেন। আর যদি গণপিটুনির ঘটনা না হয়, তবে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনগত ব্যবস্থা নিক।ভিডিও ফুটেজ দেখে হত্যার সঙ্গে জড়িত আরও যাঁদের চিহ্নিত করেছেন স্থানীয় লোকজন, তাঁরা হলেন নবীনগর পশ্চিম ইউনিট বিএনপির সভাপতি মো. হাসনাইন, সদস্য মো. মালেক, সদস্য মো. জহিরুল, নবীনগর হাউজিংয়ের নৈশপ্রহরী হাবিবুর রহমান, ওই এলাকার বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন, নুরু, শাহীন, চা-দোকানি জহিরুল ওরফে জাহিদ ও আল আমিন। তাঁরা ১০০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বিএনপির সাংগঠনিক এই ওয়ার্ডের মধ্যে নবীনগর হাউজিং, চন্দ্রিমা হাউজিং, ঢাকা উদ্যান হাউজিং, একতা হাউজিং, তুরাগ হাউজিং, শ্যামলি হাউজিং (দ্বিতীয় প্রকল্প) ও নবোদয় হাউজিং রয়েছে।
বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গণপিটুনিতে নিহত দুজন ফ্যাসিস্টের দোসর বলে তিনি শুনেছেন। আর যদি গণপিটুনির ঘটনা না হয়, তবে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনগত ব্যবস্থা নিক।
ভিডিও ফুটেজে আক্তার, হাসনাইন, মালেকসহ কয়েকজনকে লাঠি-রড দিয়ে পেটাতে দেখা গেছে, তাঁরা আপনার অনুসারী বলে অভিযোগ রয়েছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামাল উদ্দিন বলেন, তাঁরা বিএনপির মিছিল-মিটিংয়ে যান। যে কেউ মিছিল–মিটিংয়ে যেতে পারেন।
ঘুম থেকে ডেকে তুলে হত্যা
১০ সেপ্টেম্বর ভোরের ঘটনায় নিহত যুবক সুজন ওরফে বাবুলের বাসা ঢাকা উদ্যান এলাকায়। এ ঘটনায় আহত শরীফের বাসা চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকায়। এই দুজন ৯ সেপ্টেম্বর রাতে নবীনগর হাউজিংয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে যান। রাতে সেখানে খামারের কর্মী মনির আলীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমান। ভোর চারটার পর সেখান থেকে মালেক, হাবিবুরসহ কয়েকজন তাঁদের ধরে নিয়ে যায়। এ সময় খামারের ভেতরেই মনির আলীকে মারধর করা হয়।
গত ৫ অক্টোবর ওই খামারে গেলে একাধিক কর্মী প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। তাঁরা বলেন, ঘটনার পরদিন মনির ভয়ে চাকরি ছেড়ে চলে যান।
খামারের ব্যবস্থাপক নেছারউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মনির পাঁচ বছর ধরে এখানে কাজ করতেন। সুজনের মৃত্যুর পর মনির চলে গেছেন। কারণ হিসেবে বলেছেন, এখানে তিনি নিরাপদ নন। তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি। মনিরের কোনো খোঁজ তিনি দিতে পারেননি।
সুজন ও শরীফকে যেখানে পেটানো হয়, তার কাছেই টিনের একটি ঘরে থাকেন এক নারী (নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হলো না)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার দিন ভোরে চিৎকার শুনে ঘর থেকে বের হন। দেখেন, দুই যুবককে কয়েকজন পেটাচ্ছেন। তাঁদের বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেননি।
নিহত সুজনের বাবা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তিনি বলেন, কীভাবে সুজনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, সেটি সবাই দেখেছে। আক্তার হোসেনের লোকজন তাঁর ছেলেকে সাদিক অ্যাগ্রোর খামার থেকে ধরে এনে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনার পুরো ভিডিও আছে। খবর পেয়ে তিনি সেদিন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। গিয়ে দেখেন, তাঁর ছেলেকে রাস্তার পাশের গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। ছেলে তখন আর বেঁচে ছিলেন না।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনার ভিডিও পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। অথচ মামলা নিল না। সুজন অবিবাহিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।
নুপুর আক্তার বলেন, ফয়সাল ও হানিফকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যান আক্তার হোসেন (ওয়ার্ড বিএনপি নেতা) ও তাঁর লোকজন। তাঁর স্বামী ফয়সাল এবং হানিফ অপরাধী হলে আইন বিচার করবে। কিন্তু পিটিয়ে মারবে কেন?রাস্তা থেকে তুলে এনে পিটিয়ে হত্যা
১০ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকার হাক্কার পাড়ে মো. ফয়সাল ও মো. হানিফ নামের আরও দুই যুবককে পেটানো হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ফয়সালকে পাঁচজন এবং হানিফকে তিনজন মিলে পেটাচ্ছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পেটানোর সময় হানিফ হাতজোড় করে মাফ চাইছেন।
ফয়সালের স্ত্রী নুপুর আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, যেখানে হানিফ ও ফয়সালকে পেটানো হয়, তার কাছেই তাঁদের বাসা। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর ফয়সালকে মারধর করা বন্ধ করা হয়। তবে হানিফকে তখনো পেটানো হচ্ছিল। একপর্যায়ে হানিফের মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, যারা সেদিন পিটিয়েছে, এলাকার সবাই তাদের চেনে।
নুপুর আক্তার বলেন, ফয়সাল ও হানিফকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যান আক্তার হোসেন (ওয়ার্ড বিএনপি নেতা) ও তাঁর লোকজন। তাঁর স্বামী ফয়সাল এবং হানিফ অপরাধী হলে আইন বিচার করবে। কিন্তু পিটিয়ে মারবে কেন?
গত ৫ অক্টোবর নবীনগর হাউজিং এলাকায় গিয়ে কথা হয় হানিফের বড় ভাইয়ের সঙ্গে। তাঁর নামও আক্তার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই ছিনতাইয়ে জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু ধরে নিয়ে হত্যা করার অধিকার কারও নেই। হানিফ বারবার হাতজোড় করে জীবন ভিক্ষা চেয়েছিল। তাঁর কথা কেউ শোনেনি। এ ঘটনায় মামলা করতে থানায় গেলে থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) বলেছেন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে। সব আসামিকে ভিডিওতে দেখা গেছে, এমন তথ্য জানালে ওসি বলেছেন, অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা না করলে চলে যান। পরে তাঁরা আদালতে মামলার আবেদন করেন।
আক্তার হোসেন জানান, হানিফের দেড় মাস বয়সী মেয়ে আছে। মেয়েসহ হানিফের স্ত্রী এখন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে থাকেন।
ধরে এনে হত্যা করা এবং ভিডিও ফুটেজেও দেখা গেছে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেনি—এমন তথ্য তুলে ধরা হলে এসআই আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমি বলছি না আপনার তথ্য সঠিক নয়। আমি সেদিন যা জানতে পেরেছি, সে তথ্যই উল্লেখ করেছি।’হত্যার ঘটনাকে গণপিটুনি বলে প্রচার
গত ১০ সেপ্টেম্বর ঘটনার দিনই মোহাম্মদপুর থানার ওসি কাজী রফিকুল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়ার পর গণপিটুনিতে ওই দুজন নিহত হন।
ওসির সঙ্গে এ বিষয়ে ৫ অক্টোবর আবার কথা বলেছে প্রথম আলো। মোহাম্মদপুর থানায় নিজ কক্ষে বসে ওসি বলেন, নিহত ওই দুজন ছিলেন পেশাদার ছিনতাইকারী। তাঁদের মৃত্যুর পর এলাকায় শান্তি ফিরে এসেছে। ছিনতাই কমে গেছে। তাঁরা গণপিটুনিতেই নিহত হন।
গণপিটুনিতে নয়, পরিকল্পিতভাবে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে—প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ, স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য ও ভিডিও ফুটেজেও বিষয়টি উঠে এসেছে, ওসিকে এ তথ্য জানানো হলে তিনি বলেন, তদন্তে এমন তথ্য পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুজন ও হানিফের লাশ ১০ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আক্তারুজ্জামান। তাঁর সঙ্গে গতকাল বিকেলে কথা বলেছে প্রথম আলো। তিনি বলেন, সেদিন তিনি ওই এলাকায় টহল টিমের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মুঠোফোনে সংবাদ পেয়ে তিনিই দুই দফায় চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান, যাঁদের দুজন মারা গেছেন। তিনি দাবি করেন, সেদিন গণপিটুনির ঘটনাই ঘটেছিল।
ধরে এনে হত্যা করা এবং ভিডিও ফুটেজেও দেখা গেছে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেনি—এমন তথ্য তুলে ধরা হলে এসআই আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমি বলছি না আপনার তথ্য সঠিক নয়। আমি সেদিন যা জানতে পেরেছি, সে তথ্যই উল্লেখ করেছি।’
কোনো ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশকে অবশ্যই মামলা নিতে হবে বলে প্রথম আলোকে জানান মানবাধিকারকর্মী নূর খান। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তি বড় অপরাধী হলেও সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে। আর হত্যাকাণ্ডকে গণপিটুনি হিসেবে পুলিশ প্রচার করে থাকলে কাজটি মোটেও ঠিক করেনি, এটি অপতৎপরতা।