রাজধানীতে সাঁড়াশি অভিযান, গ্রেপ্তার ২৪৮
Published: 25th, February 2025 GMT
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ২৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রয়েছে ১৪ ডাকাত, ১৬ পেশাদার সক্রিয় ছিনতাইকারী, ৭ চাঁদাবাজ, ১১ চোর, ২২ চিহ্নিত মাদক কারবারি, ৪৪ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ অন্য অপরাধে জড়িতরা।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সোমবার (২৪ ফেব্রুযারি) বিকেল থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ সারা দেশে ৬৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৯২ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
আরো পড়ুন:
বিতর্কিত নির্বাচন: পুলিশের ৮২ কর্মকর্তা ওএসডি
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৩
ডিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজধানীতে গ্রেপ্তার করা ২৪৮ জনের মধ্যে রয়েছে ১৪ জন ডাকাত, ১৬ জন পেশাদার ছিনতাইকারী, ৭ জন চাঁদাবাজ, ১১ জন চোর, ২২ জন চিহ্নিত মাদক কারবারি, ৪৪ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামি। অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, চারটি চাকু, একটি প্লায়ার্স, একটি স্ক্রু ড্রাইভার, একটি লোহার শাবল, একটি চাপাতি, একটি দা ও দুটি রড উদ্ধার করা হয়। এছাড়া অভিযানে উদ্ধার করা মাদকের মধ্যে রয়েছে ৪৯ কেজি ৮৭০ গ্রাম গাঁজা ও ৭০৪টি ইয়াবা। গত ২৪ ঘণ্টায় এসব ঘটনায় ডিএমপির বিভিন্ন থানায় মোট ৫৯টি মামলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ডিএমপির ৫০টি থানা এলাকায় জননিরাপত্তা বিধানে ডিএমপির ৫০০টি টহল দল দায়িত্ব পালন করে। পাশাপাশি পুলিশ ৫৪টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করে। এ ছাড়া মহানগরের বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ এলাকায় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাতটি, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) চারটি এবং র্যাবের ১০টি টহল দল দায়িত্ব পালন করে। আর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এপিবিএন রাজধানীতে ৩১টি নিরাপত্তাচৌকি পরিচালনা করে।
ঢাকা/সুকান্ত/মাকসুদ/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর ড এমপ র
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনার কয়রা: জোয়ার ঠেকাতে বাঁধের ওপর ‘দেয়াল’ দিচ্ছে এলাকার মানুষ
খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের রত্নাঘেরি গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শাকবাড়িয়া নদী। ওপারে দাঁড়িয়ে আছে সবুজে মোড়া সুন্দরবন। নদীর ঢেউ আর জোয়ারের গর্জনে আতঙ্কে থাকেন নদীপারের মানুষ। এলাকার বাসিন্দাদের এখন একমাত্র ভরসা একফালি মাটির বাঁধ। আর সেই বাঁধের ওপর হাতে গড়া নতুন দেয়াল।
সম্প্রতি এক সকালে কাদামাখা বাঁধের ওপরের সরু পথ ধরে বাজারের ব্যাগ হাতে হেঁটে যাচ্ছিলেন অরবিন্দ কুমার। এক হাতে শার্ট গুটিয়ে কাদায় সাবধানে পা ফেলছিলেন। কাছে গিয়ে কথা বলতেই তিনি হেসে বললেন, ‘ভাই, নদী এখন আর আগের মতো শান্ত নেই। জোয়ারের পানি বাঁধ ছাপায়ে গ্রামে ঢুকতি চায়। একবার যদি ঢুকে পড়ে, ঘরবাড়ি সব ভাইসে যাবে। তাই আর কারও মুখের দিকি না চায়ি এই বাঁধের ওপর আমরা নিজেরাই দেয়াল তুলিছি।’
জোয়ারের পানি থেকে বাঁচতে এই দেয়াল রত্নাঘেরির মানুষেরা গড়েছেন। প্রায় এক কিলোমিটার বাঁধের ওপর নদীর চরের মাটি কেটে, ঝুড়ি আর কোদাল হাতে নিয়ে দেয়াল তুলেছেন গ্রামের মানুষ। শাকবাড়িয়া নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে পাথরখালী মিলনী যুব সংঘের সভাপতি অভিজিৎ মহলদার জানান, সেই দেয়াল তৈরির কথা।
অভিজিৎ বলেন, ‘এই জায়গাটা খুব নিচু। জোয়ার একটু বাড়লেই পানি বাঁধ ছাপিয়ে ঢুকে পড়ে। তাই সম্প্রতি দুই শতাধিক যুবক আর গ্রামের নারী-পুরুষ মিলে আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কেটেছি, বস্তা টেনেছি, বাঁধের ওপর দেয়াল তুলেছি। আমাদের গ্রামে বেশির ভাগ মানুষ দিনমজুর। একদিন কাজ না করলে চুলায় আগুন জ্বলে না। তবুও সেদিন সবাই রোজগার ফেলে কোদাল হাতে নিয়েছে। কেউ মাটি কেটেছে, কেউ বস্তায় ভরেছে, কেউ দেয়ালে বসিয়েছে। কারণ আমরা জানি, একবার বাঁধ ভাঙলে কেমন কষ্ট হয়।’
রত্নাঘেরির এই দৃশ্য আসলে কয়রা উপজেলার প্রতিচ্ছবি। সরেজমিনে কয়রার মহেশ্বরীপুর, নয়ানি, বাবুরাবাদ, চৌকুনি, তেঁতুলতলার চর, মঠবাড়ি, হায়াতখালী যেখানেই যাওয়া যায়, দেখা যায় বাঁধের ওপর বানানো নতুন মাটির দেয়াল। ষাটের দশকে বানানো বাঁধগুলো এখন আর জোয়ারের পানি সামলাতে পারে না। নদীর বুক ভরাট হয়ে গেছে পলিতে, জেগেছে চর। বাঁধ উপচে পানি চলে আসে গ্রামে।
মহেশ্বরীপুরের অনুপম কুমার বলেন, ১০ বছর আগে এই নদীতে জোয়ারের সময় ৭০-৮০ হাত পানি থাকত। এখন পলি পড়ে থাকে ২৫-৩০ হাত। নদীর তলা যত ভরে, ততই জোয়ারে পানি উঁচু হয়। বাঁধ উপচে পানি ঢোকে। তাই নিজেরাই মাটি তুলে দেয়াল বানিয়েছেন।
উত্তর বেদকাশীর শাকবাড়িয়া নদীর ধারে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম জানান, ‘প্রতি জোয়ারে গাঙের পানি এমন ওঠে, বুক ধড়ফড় করে। আগে ভরা জোয়ারে বাঁধের অর্ধেক পর্যন্ত পানি উঠত, এখন কানায় কানায় উঠে যায়। তাই আমরা দেয়াল তুলছি, না হলে গ্রাম তলিয়ে যেত।’
কয়রার মহেশ্বরীপুর, নয়ানি, বাবুরাবাদ, চৌকুনি, তেঁতুলতলার চর, মঠবাড়ি, হায়াতখালী এলাকায় বাঁধের ওপর মাটির দেয়াল বানানো হয়েছে