সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, ‘ডিসেম্বরকে সামনে রেখেই নির্বাচনের সমস্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করছি এবং বিশ্বাস করি ডিসেম্বরে নির্বাচন করা সম্ভব হবে।’

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এই মন্তব্য করেন।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে ইতোমধ্যে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করেছি। এখন পুরোদমে রেজিস্ট্রেশন চলছে। কোথাও কোথাও দেখা গেছে যে, সারারাত এই কাজ করতে হচ্ছে। আমরা সাড়া পাচ্ছি। এই দেশের মানুষ ভোট দিতে আগ্রহী বলেই উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে ভোটার হওয়ার জন্য নতুন ভোটাররা কষ্ট করছেন।’

জাতীয় নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন কোনটি আগে হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আনোরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় নির্বাচন বলতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচন এই সবগুলো নির্বাচন যদি আমরা শুরু করি, তাহলে প্রায় এক বছর সময় লাগবে। তাহলে আমাদের যে সময়ের ঘোষণা ডিসেম্বরের ভেতরে যদি করতে চাই। তাহলে এই টাইমলাইনের ভিতরে থাকা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করার মতো পরিবেশ আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই পাবো। আসন বিন্যাসের কাজটি কঠিন কাজ। ৪০০ এর মতো আবেদন প্রক্রিয়াধীন আছে। সে আবেদনগুলো নিস্পত্তি করতে হলে বর্তমান বিদ্যমান ডিলেমেশন আইন সংশোধন করতে হবে এবং সেই আইন সংশোধনের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আইন সংশোধন হলে পরে আমরা কাজটি করবো।’

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের সভাপতিত্বে এতে আরও অংশ নেন পুলিশ সুপার মোহম্মদ শামসুল আলম সরকার, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মৌসুমী মাহবুব, জেলা নির্বাচন অফিসার মো.

মোজাম্মেল হোসেন প্রমুখ। সভাতে জেলা ও উপজেলার পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএইচ

উৎস: SunBD 24

কীওয়ার্ড: ড স ম বর

এছাড়াও পড়ুন:

সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা

দিন যায়, আসে নতুন দিন। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় অনেক কিছুই। শুধু বদল হয় না সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর ভাগ্য। বিশেষ করে, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।

সমালোচনার মুখে ও সময়ের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দিনে দিনে কমছে। কিন্তু, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগের মতোই।

দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকার সাঁওতাল পল্লী জয়পুর পাড়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি দেখতে বেশ সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানক্ষেত আর কিছু দূর পর পর সাঁওতালদের বাড়ি। কোথাও কোথাও উঁচু টিলার মাঝে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে কিছু সাঁওতাল ঘর বেঁধে থাকছেন। পাশের বড় মাঠে খেলা করছে কিছু আদিবাসী শিশু। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক শ্রমিক 

ছোট্ট হাতে সংসারের হাল

পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কেউ কেউ বাঁশের চটা তুলছেন, কেউ রান্নার জন্য গাছের ডাল কাটছেন। বাড়িতে পালন গরু-ছাগল দেখভাল করছেন পুরুষ ও নারী উভয়ই। নারীদের অধিকাংশই গরু-ছাগল চড়ানোসহ বিভিন্ন  কাজে বাড়ির বাইরে। যদিও ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়নি তেমন। 

কয়েকজন সাঁওতাল নারীকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। তারদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরাও পুরুষের মতো জমিতে বীজ বপন, চারা উত্তোলন, রোপণ, সার দেওয়া, নিড়ানি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজ করি। কিন্তু, এখনো সেই আগের মতোই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।” 

গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর পাড়া গ্রামের কর্মজীবী সাঁওতাল নারী মমতা হেমব্রম। তিনি বলেন, “পুরুষরা কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা আর আমাদেরকে দেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ক্ষেত-খামারের কাজ অনেক কঠিন। পুরুষ-নারী তো সমান কাজ করি। আমরা সমান মজুরি চাই, কিন্তু চাইলেও তো তারা দেন না।” 

একই গ্রামের সাবিনা হাসদা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ ও নারী ধান-আখ ও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল লালনপালন করেন। কাজ একই হলেও আমাদের মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আমরা সমান মজুরি চাই।”

সুরুজ মনি টুডু নামের আরেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের সমান কাজ করি, তাই আমরা এই মে দিবস থেকেই সমান মজুরি চাই। আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সমান মজুরি নিশ্চিত করার দাবি করছি।” 

সাপমারা গ্রামের দেলু মারমা বলেন, “আমাদের সব কাজই কৃষিনির্ভর। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। আমরাও চাই, পুরুষ এবং নারী যেন সমান মজুরি পান।”

পুকুর পাড়েই বাস করেন অমেদা হাজদা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সব জায়গায় পুরুষের দাম বেশি, নারীদের দাম কম। সে কারণে তাদের মজুরি বেশি, আমাদের কম। আমাদেরকেও পুরুষের সমান দাম দেবে, সমান মজুরি দেবে, এটাই আমাদের দাবি।”

সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “গাইবান্ধার নারীরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, গোবিন্দগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক, বৈষম্য করতেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। মে দিবসে মুখে যতই বলি না কেন, পুরুষশাসিত সমাজে এখনো পরিবর্তন আসেনি। সমাজ থেকে মজুরি বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানাই।”

বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মুখে সবাই নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। সাঁওতাল তথা আদিবাসী নারীদের সমান মজুরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে করা প্রয়োজন।

ঢাকা/মাসুম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ