ভুলগুলো ভুল পথে
তুহিন বিশ্বাস
ঝরে ঝরে পড়া পাপড়িগুলো ফিরে আসুক
জানুক বিচ্ছিন্ন সম্পর্কে রক্তক্ষরণের যন্ত্রণা
আর শূন্যপুরে অন্তরাত্মার নষ্টকষ্ট মহাকাব্য।
স্মৃতিরা অস্তিত্বের লড়াইয়ে বারংবার পরাস্ত
ইচ্ছেগুলো নির্বাসনে, স্বপ্নের দরজাটাও বন্ধ
ট্রেনের অচল ইঞ্জিন, বগিগুলো নিথর নিস্তব্ধ।
জরাজীর্ণ ডায়েরির আমি’র তুমিটা নিরুদ্দেশ
সকল মিথ্যে অভিমান বড্ড কুৎসিত, জটিল
ভুলগুলো ভুল পথে হেঁটে হেঁটে রক্ত ঝরায়।
ভাঙা মনের কার্নিশে সন্দেহ ভাইরাসের রূপ
অন্ধের বাজারে আলো প্রতিষ্ঠা নিছকই স্বপ্ন
ঝরে পড়া পাপড়িও আজ অনুতপ্ত অবেলায়।
ঘেঁটুফুলের বসন্ত
নবী হোসেন নবীন
বসন্তের চিঠি নিয়ে ফোটে ঘেঁটুফুল
গাছে গাছে থোকা থোকা আমের মুকুল।
মহানন্দে অলিকুল চুমিয়া মঞ্জরি,
বাসন্তী গিতালি গায় গুঞ্জরি গুঞ্জরি।
ঘেঁটুফুলে কেউ কভু নাহি গাঁথে মালা
বুকে তার নেই তবু কোনো দুঃখ জ্বালা।
প্রাণ খোলে হেসে বলে সাদা ঘেঁটুফুল
রাঙাতে পারি না তব প্রেয়সীর চুল।
চরণের তলে যবে পেয়ে গেছি ঠাঁই
প্রফুল্ল মনে আমার কোনো দুঃখ নাই।
তোমার পথের ধারে চরণের তলে
পড়ে থাকা পাপড়ি মোর দুই পায়ে দলে।
হেসে খেলে চলে যাও করে কলরোল
প্রিয়ার খোঁপায় গুঁজে আমের মুকুল।
আমাকে পিষে যখন যাও অভিসারে
গর্বে বুক ভরে যায় তব পদভারে।
জীবন ও মৃত্যু
শাহরিয়ার কাসেম
বাঁশের শুকনো পাতার মচমচে শব্দে
আঁতকে উঠে আমাদের জীবন।
অন্তঃসারশূন্যতায় কেটে যায় শৈশব কৈশোর।
দূর্বাঘাসে শিশির কণার মতো
ঝরে যায় জীবনের লালিত স্বপ্ন।
দিগ্বিদিক ঘুরছে জীবনের আশার প্রতিচ্ছবি। গন্তব্য না পেয়ে বারবার একই পথ ধরে
ফিরে আসে পথিক।
মৌনতা ভেঙে পাড়ি জমাই
জাগতিক কোনো প্রান্তে।
প্রকৃত পক্ষে আমরা কোথাও যাই না–
বরং চলে যাই মৃত্যুর খুব কাছাকাছি।
অ্যানিমেটেড জীবন
মোরশেদুল ইসলাম
এবং বসন্ত আসে, আমাদের চলে যায় রং
সোনার জীবন থামে ক্যালেন্ডারের বর্ণিল পাতা।
পৌষের পরশে যারা গিয়েছে হাইবারনেশনে
আড়মোড়া ভেঙে ইলিয়নের পাঞ্জাবি পরে,
ব্যাকুল বুনো ফুলের সুবাস দমকা হাওয়ায়
সরব উচ্ছ্বাস ভ্রমরের আদৃত গুঞ্জন;
প্রকৃতির প্রাণস্পন্দন চেয়ে চেয়ে দেখে প্রেমিক
কানায় কানায় প্রেমেভরা নদী মায়াময়।
পাখিদের পালকে সুইট সিক্সটিনের জেল্লা
কণ্ঠে সুরের মূর্ছনা আপ্লুত নিসর্গ মন,
বাদ যায় না ভার্চ্যুয়াল বলয়
স্বপ্নের মতো এসে চলে যায় স্বপ্নের ন্যায়।
ফেরারি ওল্ড হলে ক্যাডিলাক, রোলস রয়েসের
স্বপ্ন কবে কোথায় ছেড়েছে আমাদের?
মধু বিলানো ফুলের ওপরে বিরহ ঘোরে
অতল মুগ্ধ এই অ্যানিমেটেড জীবন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।