মাহে রমজানের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য ও ইফতারের মাসয়ালা
Published: 4th, March 2025 GMT
রমজান আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের মাস। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আগমন করে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৯) হাদিসবিশারদরা বলেন, রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় অধিক পরিমাণে নেক আমল করার জন্য এবং আমলকারীদের উৎসাহ প্রদানের জন্য। আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় ঈমানদারদের গুনাহ কম অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, যাতে সে অন্য মাসের মতো রমজান মাসেও মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে না পারে।
আবু হুরায়রা (রা.
ক. রোজা পালনকারীর মুখের (অনাহারজনিত) গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুঘ্রাণ থেকেও উত্তম।
খ. ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত ফেরেশতারা সিয়াম পালনকারীর জন্য ক্ষমার দোয়া করতে থাকে।
গ. আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন তাঁর জান্নাতকে সুসজ্জিত করে বলেন, আমার নেককার বান্দারা কষ্ট স্বীকার করে অতিশীঘ্রই তোমাদের কাছে আসছে।
ঘ. দুষ্ট প্রকৃতির শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, ফলে তারা অন্য মাসের মতো এ মাসে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না।
ঙ. রমজানের শেষ রাতে রোজা পালনকারীদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। বলা হলো হে আল্লাহর রাসুল! এ ক্ষমা কি কদরের রাতে করা হয়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, না, বরং কোনো শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক তখনই দেওয়া হয়, যখন সে কাজ শেষ করে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৯১৭)।
আরো পড়ুন:
রোজাদারের জন্য আল্লাহর রয়েছে বিশেষ পুরস্কার
স্বাগতম মাহে রমজান!
কোনো সন্দেহ নেই, উল্লিখিত পাঁচটি বৈশিষ্ট্য যেমন রমজানের মর্যাদা প্রমাণ করে, তেমন উম্মতে মুহাম্মদির প্রতি আল্লাহর বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহ এবং এই উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব সাক্ষ্য দেয়। যে শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা আল্লাহ অন্য আয়াতে স্পষ্টভাবে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানুষের কল্যাণের জন্যই তোমাদের বের করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। আর আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান রাখবে। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০)
সর্বোপরী রমজান হলো রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ সম্পর্কে বলেন, ‘আল্লাহ প্রতিদিন ইফতারের সময় কতিপয় বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং তা প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৩)
ইফতার সংক্রান্ত মাসয়ালা:
১. ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বান্দা তারাই যারা বিলম্ব না করে ইফতার করে।
২. মাগরিব নামাজের আগেই ইফতার করা মুস্তাহাব।
৩. ইফতারের সময় এই দোয়া পড়া সুন্নত : ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু’ (হে আল্লাহ! আপনার জন্য আমি রোজা রেখেছি এবং আপনার রিরিকের দ্বারা ইফতার করছি।
৪. সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে পূর্ণভাবে নিশ্চিত হওয়ার পর ইফতার গ্রহণে বিলম্ব করা মাকরুহ।
৫. আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে কিছু বিলম্বে ইফতার করবে। সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর ইফতার করবে।
৬. খেজুর দ্বারা ইফতার করা উত্তম। তা না থাকলে কোন মিষ্টি জিনিস দ্বারা ইফতার করবে। তাও না থাকলে পানি বা অন্য কিছু দিয়ে ইফতার করবে।
৭. অনেকে আজান শেষ হওয়া পর্যন্ত ইফতার গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এটা অপ্রয়োজনীয়। আল্লাহ বান্দার প্রতি সহজতাই চান।
৮. ইফতারের জন্য বেশি সময় ব্যয় করা, নামাজ আদায়ে দেরি করা, জামাতে অংশগ্রহণ না করা নিন্দনীয়। সহিহ মুসলিমে ইবনে আতিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী রাসুল (সা.) সামান্য ইফতার গ্রহণ করে দ্রুত নামাজ আদায় করে নিতেন।
(হিদায়া সিয়াম অধ্যায়, আল বাহরুক রায়িক সিয়াম অধ্যায়)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে ত্রুটিমুক্ত অবস্থায় রোজা পালনের তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।
শাহেদ//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন ইফত র করব র দরজ গ ল র র জন য ইফত র র রমজ ন র আল ল হ হওয় র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।