রমজান আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের মাস। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আগমন করে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৯) হাদিসবিশারদরা বলেন, রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় অধিক পরিমাণে নেক আমল করার জন্য এবং আমলকারীদের উৎসাহ প্রদানের জন্য। আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় ঈমানদারদের গুনাহ কম অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, যাতে সে অন্য মাসের মতো রমজান মাসেও মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে না পারে। 

আবু হুরায়রা (রা.

) থেকে বর্ণিত অপর হাদিস থেকে মাহে রমজানের অনন্য মর্যাদা প্রমাণিত হয়। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতকে রমজানে এমন পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি: 

ক. রোজা পালনকারীর মুখের (অনাহারজনিত) গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুঘ্রাণ থেকেও উত্তম।
খ. ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত ফেরেশতারা সিয়াম পালনকারীর জন্য ক্ষমার দোয়া করতে থাকে।
গ. আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন তাঁর জান্নাতকে সুসজ্জিত করে বলেন, আমার নেককার বান্দারা কষ্ট স্বীকার করে অতিশীঘ্রই তোমাদের কাছে আসছে।
ঘ. দুষ্ট প্রকৃতির শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, ফলে তারা অন্য মাসের মতো এ মাসে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না।
ঙ. রমজানের শেষ রাতে রোজা পালনকারীদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। বলা হলো হে আল্লাহর রাসুল! এ ক্ষমা কি কদরের রাতে করা হয়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, না, বরং কোনো শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক তখনই দেওয়া হয়, যখন সে কাজ শেষ করে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৯১৭)।

আরো পড়ুন:

রোজাদারের জন্য আল্লাহর রয়েছে বিশেষ পুরস্কার

স্বাগতম মাহে রমজান!

কোনো সন্দেহ নেই, উল্লিখিত পাঁচটি বৈশিষ্ট্য যেমন রমজানের মর্যাদা প্রমাণ করে, তেমন উম্মতে মুহাম্মদির প্রতি আল্লাহর বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহ এবং এই উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব সাক্ষ্য দেয়। যে শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা আল্লাহ অন্য আয়াতে স্পষ্টভাবে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানুষের কল্যাণের জন্যই তোমাদের বের করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। আর আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান রাখবে। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০)

সর্বোপরী রমজান হলো রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ সম্পর্কে বলেন, ‘আল্লাহ প্রতিদিন ইফতারের সময় কতিপয় বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং তা প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৩)

ইফতার সংক্রান্ত মাসয়ালা:

১. ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বান্দা তারাই যারা বিলম্ব না করে ইফতার করে।
২. মাগরিব নামাজের আগেই ইফতার করা মুস্তাহাব।
৩. ইফতারের সময় এই দোয়া পড়া সুন্নত : ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু’ (হে আল্লাহ! আপনার জন্য আমি রোজা রেখেছি এবং আপনার রিরিকের দ্বারা ইফতার করছি।
৪. সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে পূর্ণভাবে নিশ্চিত হওয়ার পর ইফতার গ্রহণে বিলম্ব করা মাকরুহ। 
৫. আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে কিছু বিলম্বে ইফতার করবে। সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর  ইফতার করবে। 
৬. খেজুর দ্বারা ইফতার করা উত্তম। তা না থাকলে কোন মিষ্টি জিনিস দ্বারা ইফতার করবে। তাও না থাকলে পানি বা অন্য কিছু দিয়ে ইফতার করবে।
৭. অনেকে আজান শেষ হওয়া পর্যন্ত ইফতার গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এটা অপ্রয়োজনীয়। আল্লাহ বান্দার প্রতি সহজতাই চান।
৮. ইফতারের জন্য বেশি সময় ব্যয় করা, নামাজ আদায়ে দেরি করা, জামাতে অংশগ্রহণ না করা নিন্দনীয়। সহিহ মুসলিমে ইবনে আতিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী রাসুল (সা.) সামান্য ইফতার গ্রহণ করে দ্রুত নামাজ আদায় করে নিতেন।
(হিদায়া সিয়াম অধ্যায়, আল বাহরুক রায়িক সিয়াম অধ্যায়)

আল্লাহ তাআলা সবাইকে ত্রুটিমুক্ত অবস্থায় রোজা পালনের তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।
 

শাহেদ//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন ইফত র করব র দরজ গ ল র র জন য ইফত র র রমজ ন র আল ল হ হওয় র গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।

ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।

অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।

ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ