এখন ফাল্গুন মাস। দেখা মিলছে এ বসন্তে ফুটে থাকা সব ফুলের সঙ্গে। যারা অনাদর-অবহেলাতেও গাছে গাছে ফোটে। তারই একটি পথের পাশে হঠাৎ দেখা পাওয়া ভাঁটফুল, কারও কাছে আদরের বনজুঁই।
শহর থেকে বাইরে একটু পা বাড়ালেই এখন ভাঁটফুলের দেখা মিলছে। গ্রামীণ, দূরপাল্লার যেকোনো সড়ক-মহাসড়কের পাশে, ধানখেতের পাশে এ সময়ে ভাঁটফুলের দেখা পাওয়া যায়। কী নরম রূপ খুলে ছোট-বড় ঝোপে ফুটে আছে তারা। বাড়ির আনাচে-কানাচে, খালের পাড়ে ভাঁটফুলের এখন বসন্তকাল। গাছের ডালে ডালে ফুলগুলো সমবেত হয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসছে।
কবি জীবনানন্দ দাশ কবেই বলে গেছেন, ‘জারুল গাছের তলে রৌদ্র পোহায়/ রূপসী মৃগীর মুখ দেখা যায়, শাদা ভাঁট পুষ্পের তোড়া।’ পথের পাশে এখন ফুলের তোড়া নিয়ে পথিককে অভ্যর্থনার খোশ মেজাজে আছে ভাঁটফুল। ওরা সারাটা বছর পথের পাশে একা, নয়তো অন্যদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। তখন তাদের আলাদা করে হয়তো কারও চোখে পড়ে না। লম্বাটে চ্যাপ্টা পাতার শরীর মেলে তারা তাদের মতো বেঁচে থাকে। কখনো পাতা ঝরে গেলে শুধু শুকনা ডালপালারই দেখা পাওয়া যায়। এত অবহেলা নিয়ে তারা বাঁচে, তবু ফুল ফোটানোর সময় এলে কোনো অবহেলা-অযত্নের কথাই আর তারা মনে রাখে না।
ভাঁটফুল এই গ্রামপ্রকৃতির অতিপরিচিত একটি বুনো উদ্ভিদ। এর অনেক নাম—ভাঁট, ভাইট, বনজুঁই, ঘেটু, ভন্টাকি বা চৈতঘাড়া ফুল। মৌলভীবাজারে অনেকে এটিকে ‘ভাটিগাছ’ নামে ডেকে থাকেন।মঙ্গলবার সকালে মৌলভীবাজার শহরের একপাশে ফাটাবিল এলাকার আধা পাকা সড়ক ধরে কিছু দূর যেতেই অনেকগুলো ভাঁটফুলের সঙ্গে দেখা। ওই এলাকায় একসময় বিলমতো ছিল। তবে সেই বিল ক্রমশ হারিয়ে গেছে। শহরের চেহারা নিয়ে যা জেগে উঠছে, তার জমি ভরাট। নতুন নতুন দালানবাড়ি তৈরির হিড়িক দেখলেই অনুমান করা যায়। কিছু জায়গা এখনো ফাঁকা রয়ে গেছে। সেই ফাঁকা জায়গাগুলোতে ঝেঁপে ফুটেছে ভাঁটফুল। সাদা সাদা পাপড়ি মেলে সকালের রোদে ভাসছে তারা। পাপড়ির গোড়ার দিকে বেগুনি রঙের ছোঁয়া ভিন্নমাত্রা এনেছে ফুলে।
ভাঁটফুল এই গ্রামপ্রকৃতির অতিপরিচিত একটি বুনো উদ্ভিদ। এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। অনেক নাম আছে তার। ভাঁট, ভাইট, বনজুঁই, ঘেটু, ভন্টাকি বা চৈতঘাড়া ফুল। মৌলভীবাজারে অনেকে এটিকে ‘ভাটিগাছ’ নামে ডেকে থাকেন। ভাঁট আসলে গুল্মজাতীয় দেশি বুনো ফুল। ভাঁটের গাছ খুব একটা বড় হয় না। ১ থেকে ২ মিটার উচ্চতার ছোট ছোট গাছে তোড়ার মতো ফুল ফোটে। মার্চ-এপ্রিলজুড়ে ফুল ফুটে থাকে। ভাঁট ফুলের রং ধবধবে সাদা। প্রতিটি ফুলে পাঁচটি করে পাপড়ি থাকে।
ভাঁটফুল গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।