ঈদে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ১৪ মার্চ, স্টেশন-টার্মিনালে থাকবে সিসিটিভি
Published: 9th, March 2025 GMT
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ১৪ মার্চ থেকে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হবে। রেলের পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ) টিকিট বিক্রি হবে সকাল ৮টা থেকে। আর পূর্বাঞ্চলের (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) টিকিট বিক্রি হবে দুপুর ২টা থেকে।
আজ রোববার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে সড়ক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
সভা শেষে ফাওজুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, প্রতিটি বাস টার্মিনাল ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। এর মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। ১৫ রোজার মধ্যে সড়ক ও মহাসড়কের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করা হবে। টিকিট কালোবাজারি ও বাড়তি ভাড়া আদায় রোধে মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পর্যবেক্ষণ দল থাকবে। কোনো অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সড়ক উপদেষ্টা জানান, ঈদে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে। তবে চালক ও যাত্রীদের অবশ্যই হেলমেট থাকতে হবে। নসিমন, করিমনসহ ধীরগতির যানবাহন মহাসড়কে চলতে দেওয়া হবে না।
ঈদের আগের দুই-তিন দিন বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ফাওজুল কবির খান বলেন, তিনি নিজেসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা শেষ দিন পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি তাঁদের রয়েছে।
ট্রেনের অগ্রিম টিকিটআগামী ১ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতর ধরে রেলের আন্তনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঈদের আগে আন্তনগর ট্রেনের ২৪ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৪ মার্চ; ২৫ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৫ মার্চ; ২৬ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৬ মার্চ; ২৭ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৭ মার্চ; ২৮ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৮ মার্চ; ২৯ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৯ মার্চ এবং ৩০ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ২০ মার্চ।
ঈদ ফিরতি যাত্রার আন্তনগর ট্রেনের ৩ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৪ মার্চ; ৪ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৫ মার্চ; ৫ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৬ মার্চ; ৬ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৭ মার্চ; ৭ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৮ মার্চ; ৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৯ মার্চ এবং ৯ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ৩০ মার্চ।
প্রতিটি আন্তনগর ট্রেনের আসনের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ দাঁড়িয়ে ভ্রমণের (স্ট্যান্ডিং) টিকিট যাত্রা শুরুর আগে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে পাওয়া যাবে। ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট একজন যাত্রী সর্বোচ্চ একবার কিনতে পারবেন এবং এ ক্ষেত্রে ৪টি আসন সংগ্রহ করতে পারবেন। ঈদ যাত্রার টিকিট কেনার পর তা আর ফেরত নেওয়া হবে না।
এবার ঈদে ১০টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে রেলওয়ে। এসব ট্রেন ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ, চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর, ভৈরববাজার থেকে কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ, গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে পার্বতীপুর পথে চলাচল করবে। ঈদ উপলক্ষে রেলের বিদ্যমান আন্তনগর ট্রেনগুলোর সঙ্গে আরও ৪৪টি নতুন কোচ যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
সভায় সড়ক পরিবহন বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহসানুল হক, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম, সেতু বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলমসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সড়কে চাঁদাবাজির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শিমুল বিশ্বাস বলেন, সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া আছে। এরপরও কেউ চাঁদাবাজি করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সড়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, চাঁদাবাজির যেকোনো তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাঁদাবাজি বন্ধের দায়িত্ব যাঁদের, তাঁদের অবহেলা পেলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।