ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে সাড়ে তিন ঘণ্টার প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার জানাজায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন যুবলীগের এক নেতা। কিন্তু বাড়িতে পৌঁছার আগেই জানাজা সম্পন্ন হয়ে যায়। তবে শেষবারের মতো বাবাকে একনজর দেখতে পারেন তিনি।

উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের যুবলীগের সদস্য সোহাগ মিয়াকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়। তার পর থেকে তিনি কারাগারে। সোহাগ রাজিবপুর ইউনিয়নের মাইজহাটি গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে। গতকাল বুধবার সকাল সাতটায় নিজ বাড়িতে মারা যান আবু বক্কর সিদ্দিক (৫৩)। এরপর সোহাগ মিয়া যেন বাবার জানাজায় অংশ নিতে পারেন, সে জন্য প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন তাঁর মা ফজিলা খাতুন। ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের কাছে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিকেল পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয় সোহাগকে। বিকেল পাঁচটায় ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুলিশি তত্ত্বাবধানে সোহাগকে বের করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সোহাগ বাড়িতে পৌঁছান।

এদিকে বিকেল সোয়া পাঁচটায় নির্ধারিত সময়ে শাহগঞ্জ বাজারসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে জানাজা হয় আবু বক্কর সিদ্দিকের। জানাজায় অংশ নিতে পারেননি সোহাগ। পরে লাশ নিয়ে বাড়ির আঙিনায় অপেক্ষা করতে থাকেন স্বজনেরা। সোহাগ পুলিশি নিরাপত্তায় বাবার লাশের কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় আশপাশের মানুষ ভিড় শুরু করলে পুলিশ সদস্যরা সোহাগ মিয়াকে সেখান থেকে সরিয়ে নেন। রাত রাত সাতটার দিকে দাফন করা হয় আবু বকর সিদ্দিককে।

সোহাগ মিয়াকে প্যারোলে বের করার প্রক্রিয়ায় পরিবারকে সহযোগিতা করেন স্থানীয় বাসিন্দা জনি দে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোহাগকে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা একটি মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। সোহাগের ভাই শারীরিক প্রতিবন্ধী। প্যারোলে মুক্তি পেতে আমি সহযোগিতা করেছি। কাগজপত্র প্রস্তুত করতে সময় লেগে যায়। বিকেল পাঁচটায় সোহাগকে কারাগার থেকে বের করে বাড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ। মৃত বাবাকে শেষবারের মতো দেখলেও জানাজায় অংশ নিতে পারেনি সোহাগ।’

সোহাগের চাচাতো ভাই রাজিরপুর ইউনিয়ন যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম সম্প্রতি প্রবাসে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই শাহগঞ্জ বাজারে ছোট একটি দোকান করে সংসার চালায়। রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।’

রাজিবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘জানাজার সময় পূর্বনির্ধারিত ছিল এবং লোকজনও চলে আসে। আমরা খবর নিয়ে জানতে পারি সোহাগের পৌঁছাতে সন্ধ্যার পার হয়ে যাবে। রোজার দিন; পরে জানাজায় লোক পাওয়া যাবে না। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে জানাজা সম্পন্ন করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর স দ দ ক য বল গ র ইউন

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি

ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।

গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।

আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।

এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।

কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।

গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২৩৮ বছরে কী পেল আর কী পেল না ময়মনসিংহ জেলা
  • হাড়ভাঙা পরিশ্রমে পুরুষের অর্ধেকের কম বেতন নারীর
  • ময়মনসিংহে সাহিত্য আড্ডার স্থানসহ নানা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
  • ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন, সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদ
  • ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ ভেঙে দিল প্রশাসন
  • যেভাবে আর্জেন্টিনার মার্তিনেজকে ময়মনসিংহে ফেরালেন শ্রাবণ
  • বকেয়া বেতনের দাবিতে টঙ্গীতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, দুই ঘণ্টা পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক
  • টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ
  • টঙ্গীতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, সাউন্ড নিক্ষেপ
  • সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি