রেমিট্যান্সের নামে ৭৩০ কোটি টাকা এনেছেন এক ব্যক্তি
Published: 17th, March 2025 GMT
প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে করমুক্ত সুবিধার আইনি সুযোগ নিয়ে এক ব্যক্তি ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান তিনি। ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় ও ঘটনার সময় উল্লেখ করেননি এনবিআর চেয়ারম্যান।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে কর কর্মকর্তাদের ‘অর্থনীতি-আলাপন: রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকীর সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মহিদুল হাসান।
প্রত্যক্ষ কর বাড়লেও অর্থনৈতিক বৈষম্য না কমে বাড়ছে কেন– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রবাসে যারা কঠোর পরিশ্রম করেন, বিদেশে টাকা উপার্জন করে ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। আইন অনুসারে তাদের উপার্জিত অর্থ আয়করমুক্ত। এটা করা হয়েছে প্রবাসী কর্মীদের উৎসাহিত করতে সবাই শুনে আশ্চার্য হবেন, এমন একজন করদাতা পাওয়া গেছে, যিনি ৭৩০ কোটি টাকা নিয়ে এসেছেন এবং ওই ব্যক্তি বলছেন, এটা ওয়েজ আর্নার্স ও করমুক্ত।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বৈষম্য না কমে উল্টো দিকে হাঁটছে, তার কারণ হচ্ছে এসব অনিয়ম। আগে এগুলো হয় দেখিনি অথবা বুঝিনি। অথবা দেখেও না দেখার ভান করছি। তাদের সুযোগ দিচ্ছি। এগুলোই বড় সমস্যা।’ ওই ব্যক্তির নাম জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘নাম না বলাই ভালো। অ্যাকশন নেওয়ার পর আপনারা জানবেন।’
সভায় ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা করদাতাদের ভয়ভীতি দূর করা, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় এবং আমদানি-রপ্তানিসহ কর-সংক্রান্ত সব হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত অনলাইনে প্রকাশের অনুরোধ করেন।
এর আগে পুঁজিবাবাজর, বীমা ও আর্থিক খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় সভাপত্বি করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো.
এ প্রস্তাবে সায় না দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এখন পর্যন্ত অনেক কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বাজারে দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তি আস্থাহীনতার মূল কারণ। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এসব দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারিয়েছেন। ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে হবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত কোনো কর সুবিধা কাজে আসবে না।
পুঁজিবাজারের দুর্বলতা দূর করতে সুশাসনের ঘাটতি পূরণ করার পরামর্শ দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি অর্থনীতির অন্যতম এই ভিত ধ্বংসের জন্য ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকেও (আইসিবিকে) দায়ী করেন।
আলোচনায় বীমা খাতকে শক্তিশালী করতে নীতিসহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। সংগঠনটির সভাপতি সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘এ খাত অবহেলিত– এটার জন্য আমরা যেমন দায়ী, তেমনি সরকারও দায়ী।’
এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বীমা খাতে কোনো সুনাম নেই। এ খাতে গভর্ন্যান্সের ‘জি’ও নেই। বীমা কোম্পানি মনে করে, গ্রাহকের টাকাটা তাদের। মানুষের টাকা এনে তা মেয়াদ পূর্তিতে ফেরত দিতে হবে, এটা বীমা কোম্পানিগুলো ভুলে যায়।
এ ছাড়া অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) তাদের বাজেট প্রস্তাবে ভ্যাট সফটওয়্যারের বাস্তবায়ন, ঋণ অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্টের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার, মূসক নিরীক্ষা কার্যক্রম সমাপ্তির সময় সুনির্দিষ্ট করার প্রস্তাব দিয়েছে। আগামী অর্থবছর থেকে এলসি বা ঋণপত্র খোলার ওপর আবগারি শুল্ক কমানোর আশ্বাস দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ
চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে নবজাতক দাফনের সময় নড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় শহরের তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক হোসেন গাজী (৪৫)। এই ঘটনায় আগামী দুই দিনের মধ্যে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে নানা অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছে। ওই নবজাতকের জন্মও হয় এই হাসপতালে। জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নবজাতককে কবরস্থানে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন পৌর কবর স্থানের কেয়ারটেকার মো. শাহজাহান মিয়াজী।
এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, “হাসপাতালে এসে ব্যবস্থাপনায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি। চিকিৎসক নেই, হাসপাতালের প্যাথলজি ও ওটির সঠিক পরিবেশ নেই। একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ রোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই এবং হাসপাতালের কাগজপত্রও নবায়ন নেই।”
তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওটি, প্যাথলজি ও সংশ্লিষ্ট কক্ষ সীলগালা করা হয়েছে। একই সাথে রোগীদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য স্থানে সেবার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে পরিচালিত কার্যক্রম সিভিল সার্জন বরাবর প্রদান করা হবে। সিভিল সার্জন হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”
এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান। অভিযানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন।
অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শেষে হাসপাতালের ড্রাগ সনদসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।
ঢাকা/অমরেশ/এস