ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে দুই বাংলাদেশিসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ।

বেঙ্গালুরু পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি নাগরিকদের কাছে অবৈধভাবে মোটরবাইক ভাড়া দিচ্ছেন ভারতের বেঙ্গালুরুতে অধ্যয়নরত একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী-এমন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে বেঙ্গালুরু পুলিশের হাতে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ একটি চক্রের সন্ধান পায়। তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানতে পারে যে তার দেশের কয়েকজন নাগরিক তাকে সামনে রেখে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অবৈধ কার্যকলাপ এবং অবৈধ লেনদেন করে চলেছে।

জানা গেছে, বিদেশ থেকে ওই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ আসছিল এবং পরে সেই অর্থ স্থানান্তরিত করা হতো বাংলাদেশে।

বিষয়টি সামনে আসার পর স্থানীয় বনসওয়াদি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বেঙ্গালুরুর কসমোপলিটন এলাকা বনসওয়াদির কাছারাকানাহাল্লিতে অবস্থান করা বাংলাদেশি নাগরিক নোমান হামিদ (২৪)।

অভিযোগ পেয়েই তদন্তে নামে পুলিশ এবং অবৈধ কার্যকলাপ পরিচালনাকারী ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

চার সন্দেহভাজনকারীদের মধ্যে ২ জন হলেন বাংলাদেশি নাগরিক উমর আরিফ এবং ফাহিম আহমেদ, একজন সুদানের নাগরিক আবু বকর। আহমেদ ফাতিহ নামে চতুর্থ ব্যক্তির নাগরিকত্বের পরিচয় জানা যায়নি।

গত ১৪ মার্চ বনসওয়াদি পুলিশকে হামিদ জানায়, তার ধারণা ছিল যে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যে আর্থিক লেনদেনগুলো হয়েছে, সেগুলো কেবল মোটরবাইক ভাড়ার সাথে সম্পর্কিত। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেনের রেকর্ড বজায় রাখা এবং অর্থ লেনদেনের জন্য তার অ্যাকাউন্ট ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ৮ হাজার রুপি দেওয়া হচ্ছিল।

কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উক্ত লেনদেনগুলো কেবল মোটরবাইক ভাড়া দেওয়ার সাথেই সম্পর্কিত ছিল না, ওই অর্থ অবৈধ কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।

বনসওয়াদির একটি বেসরকারি কলেজের বিবিএর ছাত্র নোমান হামিদ। ২০২২ সাল থেকে ওই এলাকার একটি ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন ওই বাংলাদেশি নাগরিক।

সন্দেহভাজন দুই বাংলাদেশি উমর আরিফ এবং ফাহিম আহমেদ দুজনই হামিদের আত্মীয় বলে জানা গেছে। হামিদ যখন বাংলাদেশে ছিলেন তখন ২০২১ সালে তার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন ওই দুই আত্মীয়।

পুলিশ জানিয়েছে, উমর আরিফ এবং ফাহিম আহমেদ- দুজনই যখন জানতে পারেন, হামিদ বেঙ্গালুরুতে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন তখনই তার আর্থিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে তাকে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের টোপ দেওয়া হয়। হামিদকে বলা হয় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এবং লেনদেনের রেকর্ড বজায় রাখায় প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ তাকে দেওয়া হবে, তাতে রাজিও হয়ে যান নোমান হামিদ।

ওই দুই বাংলাদেশি নাগরিক হামিদকে জানায় দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অন্যান্য দেশের লোকেরা ওই নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠাবে। এবং সেই লেনদেনের বিবরণ একটি খাতায় সংরক্ষণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় হামিদকে। এই কাজের জন্যই হামিদকে মাসিক ৮ হাজার রুপি দেওয়ার প্রস্তাব দেয় উমর আরিফ এবং ফাহিম আহমেদ।

হামিদ যখন বেঙ্গালুরুতে পৌঁছায়, তখন তারা হামিদকে একটি ল্যাপটপ দেয় এবং এক্সেল শিটে লেনদেন সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করতে বলে।

উমর আরিফ এবং ফাহিম আহমেদ উভয়ই বাংলাদেশি নাগরিক হলেও কয়েক মাস পরই বেঙ্গালুরুতে আসতেন এবং হামিদকে তার কাজের নির্দেশনা দিয়ে যান।

তারা উভয়েই বেঙ্গালুরু ও পার্শ্ববর্তী শহরে অধ্যয়নরত বিদেশি নাগরিক এবং অন্যদের কাছে মোটরবাইক ভাড়া দেয় এবং তাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন। সুদানের নাগরিক আবু বকরও অন্য দেশ থেকে সংঘটিত অবৈধ লেনদেনের অংশ হিসাবে কাজ করে বলে জানা গেছে।

হামিদ পুলিশকে জানিয়েছেন, তার বেঙ্গালুরুর ফ্ল্যাটে ২৪টি মোটরবাইকের নিবন্ধিত সনদ (রেজিস্টার্ড সার্টিফিকেট) রেখেছিলেন এই উমর আরিফ এবং প্রতিটি গাড়িই বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হতো। তাদের কাছে পাঁচটি ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডও রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “জালিয়াতি মামলায় আমাদের কেবল প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। আমাদের সন্দেহ, অর্থনৈতিক লেনদেনগুলো কেবল দুই চাকার গাড়ি ভাড়া করার সাথে সম্পর্কিত নয়, অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপের সাথেও সম্পর্কিত। আমরা বিদেশি আইন, তথ্য প্রযুক্তি আইন এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) ৩১৮ ধারা (প্রতারণা) মামলা নথিভুক্ত করেছি।”

পুলিশের দাবি, ২০২২ সাল থেকে অভিযুক্তরা বেঙ্গালুরুতে অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে।

ঢাকা/সুচরিতা/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ হ ম আহম দ ব যবহ র কর ল নদ ন র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন