‘এসএমইদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করবে আইএফআরএস’
Published: 22nd, March 2025 GMT
এসএমইদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করবে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোটিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস)।একইসঙ্গে এসএমইদের অর্থায়ন সহজ করতে, বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে আইএফআরএস।
শনিবার (২২ মার্চ) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এসএমইদের জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোটিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) বাস্তবায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফাইনান্সিয়াল রিপোটিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড.
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, “আমাদের জিডিপিতে এসএমইদের অবদান ২৫ শতাংশের বেশি এবং আইএফআরএসে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্তি, তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রদান করবে, যার মাধ্যমে এ খাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনায়নের পাশাপাশি এসএমইদের অর্থনীতির আনুষ্ঠানিক খাতের সাথে সম্পৃক্তকরণে সহায়তা করবে।”
তিনি বলেন, “এসএমই উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে ভুল-ভ্রান্তি হ্রাস এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রাপ্তিতে আইএফআরএস সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।”
ডিসিসিআই সভাপতি আরো বলেন, “আইএফআরএস’র মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তাদের কমপ্লায়েন্স বাড়বে। সেই সাথে এ খাতের উদ্যোক্তাদের অধিকহারে করজালের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে কর আহরণের হার বৃদ্ধি করবে।”
সর্বোপরি আইএফআরএস বাস্তবায়নে এসএমই উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে আরো অধিকহারে প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর জোরারোপ করেন তিনি।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এর ম্যানেজিং পার্টনার এসকে তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতার অভাব, হিসাবরক্ষক ও অডিটরদের প্রশিক্ষণের স্বল্পতা এবং এফআরসিএস বাস্তবায়নে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের মাঝে এটি বাস্তবায়নে আগ্রহ কম পরিলক্ষিত হচ্ছে।”
এছাড়া এ খাতের উদ্যোক্তাদের সম্প্রসারণে সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি, কর ও ভ্যাটের হার হ্রাস, এসএমই স্টার্টআপদের জন্য বিশেষ কর সুবিধা প্রদান এবং কর প্রদানে প্রক্রিয়া সহজ করা জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোটিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ বলেন, “আন্তর্জাতিক মান বজায়ে রেখে এসএমইদের জন্য আইএফআরএস অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের সকল এসএমইদের ক্ষেত্রে এটির বাস্তবায়ন বেশ চ্যালেঞ্জিং বিষয়।”
আইএফআরএস বাস্তবায়নে এসএমইদের আগ্রহী করে তুলতে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আমির উদ্দিন বলেন, “বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ভাবমূর্তি উন্নয়নে আইএফআরএস বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে। এটি বস্তবায়নে বিশেষকরে কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ প্রদান একান্ত আবশ্যক।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল পোগ্রামস বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা বলেন, “বাংলাদেশে পরিচালিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবরক্ষনের জন্য পর্যাপ্ত হিসাবরক্ষক না থাকায়, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক হিসাবরক্ষণে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমখি হতে হয়। তবে, সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে এবং উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা বিবেচনায় নিয়ে এফআরসিএস বাস্তবায়নে আরো মনোযোগী হতে হবে।
তিনি জানান, বর্তমানে ৮০টি দেশে এফআরসিএস বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে উদ্যোক্তাদের একাউন্টিং সফটওয়্যার প্রদান করা হলেও দক্ষতা এবং আগ্রহের অভাবের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তা বাস্তবায়িত হয়নি।”
এফআরসিএস’র অধিকতর বাস্তবায়নে তিনি সহজ করা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ঢাকা/এনএফ/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ স বরক পর চ ল র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে ৬০ কোম্পানির পরিকল্পনা চেয়েছে বিএসইসি
ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্তি ৬০টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন নূন্যতম নির্ধারিত সীমার নিচে রয়েছে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত থাকতে হলে কোম্পানিগুলোর কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তি বিধিমালার ওই শর্ত পরিপালন করছে না, যা সিকিউরিটিজ আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এমন পরিস্থিতিতে ৬০টি কোম্পানির ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পূরণে কি পরিকল্পনা রয়েছে তা জানতে চেয়েছে কমিশন। সম্প্রতি বিএসইসি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে কোম্পানিগুলোর পরিকল্পনা সংগ্রহের বিষয়ে চিঠি দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
কোম্পানিগুলো হলো-সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, হামি ইন্ডাস্ট্রিজ, এপেক্স ফুটওয়্যার, ইস্টেম লুব্রিকেন্টস, এএমসি (প্রাণ), মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, জুট স্পিনার্স, দেশ গার্মেন্টস, প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সে, রেনউইক রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, এপেক্স স্পিনিং, উসমানিয়া গ্ল্যাস, নর্দন জুট, জিকিউ বলপেন, আনলিমা ইয়ার্ন, লিব্রা ইনফিউশনস, রহিম টেক্সটাইল, হাক্কানি পাল্প, ইউনিলিভার কনজুমার, অ্যামবি ফার্মা, রংপুর ফাউন্ড্রি, রহিমা ফুড, ফার্মা এইডস, সমাতা লেদার, ওরিয়ন ইনফিউশন, বাংলাদেশ অটোকারস, বাংলাদেশ ল্যাম্পস, সামোরিতা হাসপাতাল, মুন্নু অ্যাগ্রো, সোনালী আঁশ, আল-হাজ্জ টেক্সটাইল, রেকিট বেনকিজার, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, ইস্টার্ন কেবলস, শ্যামপুর সুগার, ন্যাশনাল টি, সোনারগাঁও টেক্সটাইলস, আজিজ পাইপস, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, জেমিনি সি ফুড, এপেক্স ফুডস, এইচ আর টেক্সটাইল, মেঘনা পেট, মাগুরা মাল্টিপ্লেক্স, অ্যারামিট, বাটা সু, সাফিকো স্পিনিংস, জিল বাংলা সুগার, স্টাইল ক্রাফ্ট, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ফাইন ফুডস, কে অ্যান্ড কিউ, ওয়াটা কেমিক্যালস, দুলামিয়া কটন, লিন্ডে বাংলাদেশ, বঙ্গজ, এপেক্স ট্যানারি, প্রিমিয়ার ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও ঢাকা ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ড।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজার অংশীজনদের সঙ্গে বিএসইসির ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের নাম পরিবর্তনে ডিএসইর সম্মতি
৬০ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের চিত্র
বর্তমানে ১১টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকার নিচে, ১৫টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকার নিচে, ২১টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি টাকার নিচে এবং বাকি ১৩টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার নিচে রয়েছে।
কমিশনের অবস্থান
এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত থাকতে ৬৪টি কোম্পানিকে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের মানদণ্ড মেনে চলতে একইভাবে চিঠি দিয়েছিল বিএসইসি। কিন্তু বেশিরভাগ কোম্পানি সেই নির্দেশ পরিপালন করেনি। এরই ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত বিএসইসি কোম্পানিগুলো বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নূন্যতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হলে কোম্পানিগুলোকে মূল বোর্ড থেকে এসএমই প্ল্যাটফর্ম বা এটিবি প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করা যেতে পারে। তবে, কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রতিটি কোম্পানিকে তাদের জমা দেওয়া রোডম্যাপের ওপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হবে এবং কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তাদের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। যদি কোনো কোম্পানি এসএমই প্ল্যাটফর্মের জন্য যোগ্য না হয়, তাহলে বিকল্প কিছু চিন্তা করা হবে। এ তালিকায় কিছু বহুজাতিক কোম্পানি তালিকায় রয়েছে। তাদের পর্যাপ্ত রিজার্ভের কারণে এ শর্ত পরিপালন করা সহজ হবে।
বিএসইসি মনে করে, এসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কম থাকায় শেয়ারের লেনদেনে অস্বাভাবিকতা ও কারসাজির ঝুঁকি বাড়ছে। কিছু বিনিয়োগকারী অস্বচ্ছ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে শেয়ার কারসাজিতে লিপ্ত হয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ফেলছে। তাই বাজারে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিনিয়োগকারী সুরক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক আবুল কালাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন কিভাবে বাড়িয়ে ন্যুনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে কাজ করছে কমিশন। এটি একটি তাগাদা। যদি কোনো কোম্পানি নতুন মূলধন সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা বিবেচনা করা হবে।”
ঢাকা/এনটি/এসবি