আজ আমাদের ৫৫তম স্বাধীনতা দিবস। পাকিস্তানি প্রায়-ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণবিরোধী ২৩ বৎসরের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায়, বিশেষত ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নিরীহ বাঙালির উপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পরিচালিত বর্বর হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষাপটে, একই বৎসরের এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। ইহার ধারাবাহিকতায় প্রায় ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ মানুষের শহীদি আত্মদান এবং দুই লক্ষাধিক নারীর অপরিসীম নির্যাতন ভোগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্ররূপে বাংলাদেশ উচ্চ শিরে আপন অস্তিত্ব ঘোষণা করে বিশ্ব-মানচিত্রে। এই দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা মাতা-ভগিনি এবং স্বজন হারানো পরিবারসমূহকে। মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতৃবৃন্দ, সকল সেক্টর কমান্ডারসহ রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের। তাহাদের ঋণ আমরা কোনোদিন ভুলিতে পারিব না।
ইহা অনস্বীকার্য, বিশেষ কিছু মহল ব্যতীত জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই ভূখণ্ডের সকলেই ঐ যুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করিয়াছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল, এই দেশের ভালো-মন্দের সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরাই গ্রহণ করিব। আমাদের ভাগ্য আমরাই গড়িব। পাশাপাশি আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সকলের জন্য সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণের প্রতিশ্রুতিও বিস্মৃত হইলে চলিবে না। তদনুযায়ী আমাদের স্বাধীনতার ৫৪তম এই বার্ষিকীতে সকল স্বপ্ন ও বাস্তবতার সংগতি-অসংগতি লইয়া আলোচনাও গুরুত্বপূর্ণ।
ইহা সত্য, গত ৫৪ বৎসরে বিভিন্ন সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্তিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করিয়াছে। জাতিসংঘ স্বীকৃত নানা মানবউন্নয়ন সূচকেও অনুরূপ সাফল্যের প্রকাশ স্পষ্ট। উহারই প্রমাণস্বরূপ, আমরা ইতোমধ্যে জাতিসংঘ স্বীকৃত উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হইয়াছি, যাহা আগামী বৎসরই স্থায়ী রূপ পাইবে বলিয়া আমরা সকলে জ্ঞাত। তবে ইহাও সত্য, উক্ত সময়ে বিশেষত ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য উদ্বেগজনকরূপে প্রকট। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না গৃহীত হইলে তাহা রাষ্ট্র ও সমাজকে দীর্ঘ মেয়াদে অনাকাঙ্ক্ষিত অস্থিরতায় নিমজ্জিত করিতে পারে। বিশেষত বিগত সরকারের সময়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার, খেলাপি ঋণসহ ব্যাংক খাতে যেই অরাজকতা চলিয়াছে, উহার ক্ষত এখনও শুকায় নাই। ঊচ্চহারের মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ প্রবাহে ভাটা, বেকারত্ব ইত্যাদি এই সময়ের বিশেষ শঙ্কার বিষয়। শত শত প্রাণের বিনিময়ে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা বিগত সরকারের কবল হইতে মুক্ত হইয়াছি বটে, কিন্তু জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নটি অদ্যাবধি জনপরিসরে বৃহৎ উদ্বেগ ছড়াইয়া চলিয়াছে। আমাদের রাজনীতি যেই দোষারোপ ও সংঘর্ষের বৃত্তে আটকা পড়িয়াছিল, উহা হইতেও মুক্তি মিলিয়াছে, বলা যায় না। আমরা দেখিয়াছি, ঐ রাজনীতির ফলস্বরূপ গণতন্ত্র সংহত হইবার পরিবর্তে বিগত দিনগুলিতে ক্রমশ সংকুচিত হইয়াছে। বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং সংবিধান স্বীকৃত অন্যান্য নাগরিক অধিকারের পরিসর ক্রমশ সংকীর্ণ হইয়াছে। রাজনীতি ও সমাজে সাম্প্রদায়িকতা বেশ জাঁকিয়া বসিয়াছিল। এই সকল কিছুই সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদাবিরোধী। তাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয় বেশ প্রাধান্য পাইয়াছে।
তবে ইহাও স্বীকার্য, দেশে একটি কার্যকর নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করিতে না পারা বিগত ৫৪ বৎসরে অন্যতম বৃহৎ ব্যর্থতা। জনগণের শাসন নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যবস্থা হইল নিয়মিত বিরতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। ইতিহাস সাক্ষী– কেবল নির্বাচিত সরকারের সময়েই এই দেশে সার্বিক উন্নয়ন ঘটিয়াছে। বিগত সরকার জবরদস্তিমূলক ক্ষমতা ধরিয়া রাখিতে গিয়া দেশে নির্বাচন ব্যবস্থাকে যেইভাবে ধ্বংস করিয়া দিয়াছে, উহা নজিরবিহীন। আমরা মনে করি, ঐ বিধ্বংসী ধারা হইতে দেশকে বাহির করিয়া আনা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। রাষ্ট্রের উপর সর্বার্থে জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার স্বার্থে একটা কার্যকর নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি। অদ্যকার স্বাধীনতা দিবসে সরকার উক্ত বিষয়কে প্রাধান্য দিয়া সকল কর্মসূচির বিন্যাস করিবে– ইহাই আমাদের প্রত্যাশা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র স ব ধ নত ব যবস থ সরক র র ত সরক র আম দ র হইয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডন বৈঠকে অবিশ্বাস দূর, সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের পথ সুগম হবে: সাইফুল হক
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক দেশে আগামী সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক অচলাবস্থা, সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করবে বলে আশা করছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। আজ শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন তিনি।
লন্ডনে দুই নেতার বৈঠকের বিস্তারিত সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করারও আহ্বান জানিয়েছেন সাইফুল হক।
সরকারের এই উদ্যোগ বিলম্বিত বোধদয়ের ফল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সাইফুল হক বলেন, আরও আগে সরকারের এই বোধদয় হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক ও রাজনৈতিক বিরোধ এড়িয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ মৌলিক কাজে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া যেত।
সব অংশীজনকে আস্থায় নিয়ে সরকারকে কাজ করার আহ্বান জানান সাইফুল হক। তিনি বলেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের রাস্তা সুগম হলো।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাইফুল হক বলেন, দেশের মানুষের অধিকার ও মুক্তি অর্জনে তাঁর দল জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আগামীতে আপসহীন ধারায় সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক। সমাবেশে সংহতি জানান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহবায়ক শেখ আবদুর নূর।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম মীর, রেজাউল আলম, ফিরোজ আলী, কেন্দ্রীয় সংগঠক আইয়ুব আলী, বাবর চৌধুরী, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতা মো. সালাউদ্দীন, মিজারুল রহমান ডালিম, আরিফুল ইসলামসহ পার্টির ঢাকা মহানগরের নেতারা।