মহাসড়কের সেই স্থানে বসল অপরিকল্পিত গতিরোধক
Published: 4th, April 2025 GMT
সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে থাকা ১ হাজার ১৮৮টি অপ্রয়োজনীয় গতিরোধক (স্পিডব্রেকার) অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েক বছরে ৭৫৫টি গতিরোধক অপসারণও করা হয়েছে। তবে বুধবার মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নির্দেশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া বন বিট অফিসের দক্ষিণ পাশে গতিরোধক নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
অথচ সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক কারিগরি নির্দেশিকাতেও উল্লেখ আছে, মহাসড়কে অপরিকল্পিত গতিরোধক অপসারণ করতে হবে। খুব জরুরি হলে রেট্রো-রিফ্লেকটিভ রঙের মাধ্যমে স্থাপন করতে হবে ‘রাম্বল স্ট্রিপ’। বিশেষ ধরনের এই স্ট্রিপ গতিরোধ না করে গতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ নতুন স্থাপন করা গতিরোধককে ‘রাম্বল স্ট্রিপ’ দাবি করলেও আদতে এটি সাধারণ স্পিডব্রেকার বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয় বাসিন্দারা এমন গতিরোধক স্থাপনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বলছেন, এতে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। নির্জন এই স্থানে গতিরোধকের কারণে ডাকাতি ও ছিনতাই বাড়ারও শঙ্কা রয়েছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সমীক্ষায় যুক্ত থাকা বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর যে গতিরোধক স্থাপন করা হয়েছে, সেটি কোনোভাবেই গতি নিয়ন্ত্রণের রাম্বল স্ট্রিপ নয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়েছে। প্রাণহানির সঙ্গে গাড়ির যন্ত্রাংশও দ্রুত নষ্ট হবে।’
সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘চুনতি অভয়ারণ্যের কাছাকাছি এই অংশের প্রায় এক কিলোমিটার সড়কটি ঢালু। এতে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক আছে। দুর্ঘটনা রোধে রেল এবং পানিপথে লবণ পরিবহনের পরামর্শ দিয়েছি।’
সরেজমিন দেখা যায়, লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া বন বিট অফিসের দক্ষিণ পাশে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন এলাকায় মহাসড়কে গতিরোধক নির্মাণের কাজ চলছে। জাঙ্গালিয়ার ঢালু এলাকায় আট ইঞ্চি উচ্চতার চার থেকে ছয়টি করে গতিরোধক নির্মাণ করা হয়েছে। ৩০ থেকে ৪০ ফুট অন্তর ছয়টি গতিরোধক স্থাপন করা হয়। তিন থেকে চারটি গতিরোধক বালু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। একটিতে রং করা হচ্ছে। বালু ঢেকে দেওয়া গতিরোধকগুলো খেয়াল করছেন না চালকরা। তাছাড়া এই পয়েন্টে সতর্কতামূলক কোনো সাইনবোর্ডও স্থাপন করা হয়নি। গতকাল এই পয়েন্টের কাছে একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিলে পড়ে যায়।
ঈদের ছুটিতে টানা তিন দিনে এ এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জনের প্রাণহানি এবং অন্তত ৩০ জন আহত হন। বুধবার একসঙ্গে ১০ জনের প্রাণহানির পর তিন উপদেষ্টাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপপ্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা রোধে গতিরোধক স্থাপন করা হচ্ছে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, জাঙ্গালিয়া ডাকাতিপ্রবণ এলাকা। এ এলাকার মহাসড়কের এক পাশে চুনতি অভয়ারণ্য, অন্য পাশে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এ কারণে এলাকাটিতে ছিনতাইসহ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গেল ছয় মাসে ২৩টি মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় লোকজন শঙ্কা, গতিরোধকে যানবাহনের গতি কমলে ডাকাতি কিংবা ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়বে। এ নিয়ে ফেসবুকেও তুমুল সমালোচনা চলছে।
হাইওয়ে পুলিশের দোহাজারী থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘এই রাম্বল স্পিড স্থাপনের ফলে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রিত হবে, দুর্ঘটনার হার কমবে। তবে, এলাকা নিরিবিলি হওয়ায় বিছিন্ন ঘটনাও ঘটার শঙ্কাও রয়েছে।’
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক ও জনপথ ব ভ গ দ র ঘটন র র ম বল স ছ নত ই গত র ধ ন র পর
এছাড়াও পড়ুন:
বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তানিয়া আমিরের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর
২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তানিয়া আমিরের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
এক বিবৃতিতে প্রেস উইং থেকে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ সম্পর্কে তানিয়া আমিরের বক্তব্য, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে, তাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হিসেবে তার নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ‘সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস’-এ পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রেস উইং বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের সত্য উদঘাটনে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলো উপস্থাপন করেছে। উদ্যোগগুলো হচ্ছে:
তদন্ত কমিশন
২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর পিলখানা হত্যাকাণ্ড বিষয়ে পুনঃতদন্তের জন্য সাত সদস্যের জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ এল এম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে কমিশন কয়েক ডজন সাক্ষীর (এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৭ জন, যার মধ্যে অফিসার, বিডিআর সদস্য এবং ভুক্তভোগীদের পরিবার অন্তর্ভুক্ত) সাক্ষ্য সংগ্রহ করেছে। এটি ‘ঘটনার প্রকৃত প্রকৃতি উন্মোচন’, সমস্ত দোষী ব্যক্তিকে শনাক্ত করা এবং এমনকি যেকোনো দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র তদন্তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে কমিশন একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এতে ২০০৯ সালের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে যেকোনো ব্যক্তির কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য থাকলে তা ওয়েবসাইট বা ই-মেলের মাধ্যমে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সত্য উন্মোচনের অঙ্গীকার
স্বরাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পিলখানার হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ পুনঃতদন্তের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে কমিশনের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, তদন্ত কমিশন ইতোমধ্যেই কয়েক ডজন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড করেছে এবং প্রয়োজনে তারা এমনকি শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে (যেমন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রাক্তন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ) ডাকবেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার ‘প্রকৃত প্রকৃতি উন্মোচিত’ হবে। মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সম্ভাব্য সকল বিদেশি বা দেশীয় চক্রান্তের বিষয়গুলো খুঁজে দেখা হবে।
তথ্যের জন্য জনসাধারণের কাছে আবেদন
প্রাসঙ্গিক তথ্য থাকলে যেকোনো নাগরিক বা সংস্থাকে ওয়েবসাইট বা ই-মেলের মাধ্যমে জানানোর জন্য ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিশন।
এটি ১৬ বছর আগের একটি অপরাধের তদন্তের জটিলতা তুলে ধরে এবং তথ্যদাতাদের গোপনীয়তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে। যা ‘সরকার বিষয়গুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে’— তানিয়া আমিরের এমন দাবির বিপরীতে এটি স্বচ্ছ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ আনুষ্ঠানিক প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।
আদালতের মামলা এবং মুক্তি
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বিদ্রোহ-সম্পর্কিত মামলায় কয়েকশত সাবেক বিডিআর সদস্যকে জামিন দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে, তানিয়া আমিরের অভিযোগ— কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বন্দিদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। নিহত অফিসারদের পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানায় যে, যারা সেনা অফিসারদের হত্যা করেছে, তাদের সম্পূর্ণ মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। ইতোমধ্যে বেঁচে যাওয়া অফিসারদের পরিবারগুলো নতুন অভিযোগ দায়ের করেছে (যেমন: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে নতুন করে বিক্ষোভের হুমকি দিয়েছে।
নিহতদের স্মরণ
অন্তর্বর্তী সরকার পিলখানায় নিহতদের সম্মান জানাতে পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করেছে এবং পিলখানায় নিহত ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে ‘শহীদ’ মর্যাদা দিয়েছে।
প্রেস উইং বলছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তানিয়া আমিরের সম্পৃক্ততা সুপরিচিত। ২০২৩ সালের নভেম্বরে তিনি এবং তার বাবা ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে সংসদীয় আসন কুষ্টিয়া-৩ এবং কুষ্টিয়া-৪ এর জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন, যা ওই দলের সঙ্গে সক্রিয় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত বহন করে।
তানিয়া আমিরের পারিবারিক পটভূমি আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তার বাবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং সংবিধান প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং পরিবার ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। যদিও তিনি স্বাধীনভাবে আইনি মামলা করেছেন, তবু তাকে দলের রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থানের সাথে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হিসেবে দেখা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সম্পৃক্ততার পরিপ্রেক্ষিতে, জেনেভা প্রেস ক্লাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে এবং ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিত্ব করে, এমন ইঙ্গিত দিয়ে তার সাম্প্রতিক মন্তব্যকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, জেনেভা সম্মেলনে তানিয়া আমির এবং অন্যান্য বক্তারা কোনো নতুন প্রমাণ উদ্ধৃত করেননি; বরং তারা বছরের পর বছর ধরে বিরোধী পক্ষগুলোর মধ্যে প্রচারিত দাবিগুলো (যেমন: মৃত্যুর সংখ্যা, ক্ষতিপূরণ আইন, বন্দিদের মুক্তি) পুনরাবৃত্তি করেছেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা/হাসান/রফিক