রাজধানীতে সন্ধ্যায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে হালকা বৃষ্টি
Published: 5th, April 2025 GMT
প্রায় দিনভর বেশ গরম শেষে সন্ধ্যায় বজ্রপাতসহ দমকা হাওয়া বয়ে যায় রাজধানী ঢাকায়। সেই সঙ্গে ছিল হালকা বৃষ্টি। ফলে গরম কিছুটা কমে আসে।
আজ শনিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বিদ্যুৎ চমকানো ও দমকা হাওয়ার মধ্য দিয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নেমে আসে রাজধানীতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজকের নিয়মিত বুলেটিনে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েক জায়গায় বজ্রপাত, বজ্রসহ হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, দেশের কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে কয়েক দিন ধরে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজ ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাজশাহীতে ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক আজ প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে বজ্রপাতসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের একটি বজ্রঝড় ঢাকার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। ৬টা ৪৮ মিনিটের দিকে দমকা বাতাসের গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। এ ধরনের ঝড় সচরাচর ৩০ মিনিটের মতো স্থায়ী হয়।
এ ধরনের বজ্রঝড়ের সময় পানিতে অবস্থান না করা, দরজা, জানালা বন্ধ রাখা, কংক্রিটের দেয়ালের সঙ্গে ঘেঁষে না দাঁড়ানো ও শিলাবৃষ্টির সময় শিলা কুড়াতে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন এই আবহাওয়াবিদ।
এদিকে সন্ধ্যার দিকে দমকা হাওয়ার শুরু হলে রাস্তাঘাটে থাকা লোকজন দৌড়ে যে যেখানে পারেন, সেখানে নিরাপদ আশ্রয় নেন। ফুটপাতে বা খোলা আকাশের নিচে ব্যবসা করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিকের পর্দা, ত্রিপল দিয়ে তাঁদের পণ্যসামগ্রী ঢেকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন।
আজকের বুলেটিনে বলা হয়েছে, ৫ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও রাঙামাটির জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে সিলেট ও ময়মনসিংহ জেলার কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টি হতে পারে।
কোনো এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে, সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে গণ্য করা হয়। তবে এই তাপমাত্রা অন্তত দুই দিন একনাগাড়ে থাকতে হয়, তাহলেই তাপপ্রবাহ বলা হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’