বঙ্গোপসাগরের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের বিপন্ন কাছিমসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দ্বীপের বেওয়ারিশ তিন হাজার কুকুরকে বন্ধ্যাকরণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। দ্বীপে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, দ্বীপে লোকসংখ্যা ১০ হাজার ৭০০ জন। কুকুর আছে সাত হাজারের বেশি। কুকুরের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে দ্বীপে ডিম পাড়তে আসা কাছিমও কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো একটি প্রজাতির অনিয়ন্ত্রিত বংশবৃদ্ধিও প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রের জন্য হুমকি বলে মনে করেন পরিবেশবিদেরা।

পরিবেশ সংগঠনগুলো বলছে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত পাঁচ প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে এ এলাকায় জলপাইরঙা বা অলিভ রিডলে কাছিম বেশি দেখা যায়। এই জাতের কচ্ছপকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন)। বিপন্ন এই কাছিমের ডিম খেয়ে ফেলে দ্বীপের বেওয়ারিশ কুকুর। এ ছাড়া ডিম পাড়তে আসা মা কাছিমকেও কুকুরের আক্রমণের শিকার হতে হয়।

কুকুর নিধনের বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইনে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯ এর ধারা ৭ অনুযায়ী নির্বিচার মালিকবিহীন প্রাণী নিধন বা অপসারণ দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ক্ষেত্রে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। এ কারণে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বন্ধ্যাকরণকে লাগসই উপায় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। এসব দিক বিবেচনা করে দ্বীপের কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পরিবেশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে কুকুর বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি সংস্থা-‘অভয়ারণ্য’। আজ সোমবার অভয়ারণ্যের একটি টিম সেন্ট মার্টিনে গেছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হবে কুকুর বন্ধ্যাকরণের কাজ।

এর সত্যতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক মো.

জমির উদ্দিন। তিনি বলেন, বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি শুরুর জন্য আজ অভয়ারণ্যের একটি দল কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন রওনা দিয়েছে। দলের কয়েকজন বিদেশি চিকিৎসকও রয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল থেকে বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি শুরু হবে।

জমির উদ্দিন বলেন, ইতিমধ্যে দ্বীপে গিয়ে কুকুর জরিপের কাজ হয়েছে। বর্তমানে দ্বীপে কুকুর আছে ষঅথ হাজারের বেশি। এর মধ্যে কয়েক ধাপে থীণ হাজার কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করা হবে। ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ধাপে এক হাজার কুকুরকে বন্ধ্যাকরণের আওতায় আনা হবে। বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ডওয়াইড ভেটেরিনারি সার্ভিস (ডব্লিউভিএস)।’ আর ২০১২ সাল থেকে রাজধানী ঢাকায়ও কুকুর বন্ধ্যাকরণের কাজে যুক্ত রয়েছে অভয়ারণ্য।

প্রথম ধাপে বন্ধ্যাকরণ ১ হাজার

গত জানুয়ারি মাসে সেন্ট মার্টিনে গিয়ে কুকুর জরিপ করেন অভয়ারণ্যের কর্মীরা। তাঁরা দ্বীপের উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, মাঝরপাড়া, পশ্চিমপাড়াসহ কয়েকটির গ্রামের ২০০ ঘরে গিয়ে কুকুরের জরিপ পরিচালনা করেন। জরিপ অনুযায়ী, ৩০ শতাংশ পরিবারে কুকুর রয়েছে। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ বেওয়ারিশ কুকুর। তবে কোনো কুকুরের বন্ধ্যাকরণ হয়নি।

এ প্রসঙ্গে অভয়ারণ্যের চেয়ারম্যান রুবাইয়া আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সেন্ট মার্টিনের প্রতিটি ঘরে চার-পাঁচটি কুকুর পাওয়া গেছে। দুই বছর পরে ২০টি করে কুকুর হবে। তখন সংকট আরও বাড়বে। কুকুর স্থানান্তর কিংবা নিধন করা আইনিভাবে নিষিদ্ধ। এখন কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। প্রথমে তিন হাজার কুকুরকে বন্ধ্যা করা হবে। কর্মসূচি কত দিন চালানো যাবে, তা নির্ভর করছে পরিবেশ–পরিস্থিতির ওপর। এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ-লঘুচাপসহ ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের।

বৈরী পরিবেশে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হলে কিংবা ঝড়-বৃষ্টি লেগে থাকলে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত, ওষুধ-সরঞ্জাম পৌঁছানো কঠিন ও ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এক প্রশ্নের জবাবে রুবাইয়া আহমদ বলেন, ‘প্রথম ধাপে আমরা এক হাজার কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করব। এরপর আরও কয়েক ধাপে ২ হাজার কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করা হবে। এর সঙ্গে কুকুর লালন–পালন, সরকারি আইন এবং বন্ধ্যাকরণ বিষয়ে স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করা হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য সরক র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশে আসতে চায় চীনা বহুজাতিক কোম্পানি টেনসেন্ট, কী ব্যবসা করে তারা

চীনা বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি টেনসেন্ট বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এক ফেসবুক পোস্টে এই তথ্য জানান।

ফেসবুক পোস্টে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লেখেন, বাংলাদেশে এসেছে মার্কিন জায়ান্ট স্টারলিংক। আজ (সোমবার) তাদের লাইসেন্স আবেদন অনুমোদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশে বিগ টেক জায়ান্ট আসার যাত্রাটা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ধরেই শুরু হলো। এভাবে আসবে আরও অনেকেই।

চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট টেনসেন্ট বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে একই পোস্টে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লিখেছেন, ‘আজ আমরা চায়নিজ জায়ান্ট টেনসেন্টের সঙ্গে অফিশিয়ালি বসেছি। তারাও বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের দ্রুততম সময়ে পলিসি সাপোর্টের আশ্বাস দিয়েছি।’

অসাইরিস গ্রুপও বাংলাদেশে আসছে বলে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে হাইপার স্কেলার ক্লাউড ও ডেটা সেন্টার হবে বাংলাদেশি ডাটা ও ক্লাউড কোম্পানি যাত্রার হাত ধরে। এখানে হচ্ছে বিগ জায়ান্টদের জন্য বিশ্বমানের সিকিউরড ক্লাউড সে-আপ, যেখানে আসতে পারে মেটা, গুগলের পেলোড। এমন অভাবনীয় সব উপহার বাংলাদেশকে দিতে চলছেন অধ্যাপক ইউনূস।

টেনসেন্টের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয় চীনের শেনজেনে অবস্থিত।

আরও পড়ুনবাংলাদেশের গেমশিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী চীনের টেনসেন্ট২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪,৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক
  • ।।  বাংলাদেশি কবিতা বিরল সম্মাননা ।।
  • সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক
  • সাবেক সচিবের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক 
  • জবির বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে ৮ বছর ধরে একই চেয়ারম্যান
  • ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে সিঙ্গাপুর হাইকমিশনের সাক্ষাৎ
  • বাংলাদেশে ১০ বছরের লাইসেন্স পেল স্টারলিংক
  • বাংলাদেশে আসতে চায় চীনা ইন্টারনেট জায়ান্ট টেনসেন্ট
  • বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায় চীনা বহুজাতিক কোম্পানি টেনসেন্ট
  • বাংলাদেশে আসতে চায় চীনা বহুজাতিক কোম্পানি টেনসেন্ট, কী ব্যবসা করে তারা