ময়মনসিংহে মহাসড়কে অটোরিকশার বিরুদ্ধে বিআরটিএ পুলিশের তৎপরতা
Published: 8th, April 2025 GMT
ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবৈধ অটোরিকশার দাপট ও যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে বিআরটিএ। এ ছাড়া জেলা ট্রাফিক পুলিশের পক্ষেও মহাসড়কে জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার দৈনিক সমকালে ‘কমছে না অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, বাড়ছে দুর্ঘটনা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
রহমতপুর বাইপাসে বিআরটিএ পরিচালিত অভিযানে ছয়টি মামলায় ১১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাফসান রাব্বি।
তিনি সমকালকে জানান, মহাসড়কে অবৈধভাবে অটোরিকশা চলছে। এগুলোর বেশির ভাগেরই রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স নেই। এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন অনেক লোকাল বাস ঢাকা থেকে দূরপাল্লায় যাত্রী পরিবহন করছে। তারা যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের জরিমানা করা হয়। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
অভিযানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মিনিবাস সার্ভিসসহ বেশ কয়েকজন চালকের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এ সময় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত আদায়, ভাড়ার তালিকা প্রদর্শনে অবহেলা, রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকাসহ অন্যান্য অনিয়মের প্রমাণ পান ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.
জরিমানার শিকার এক অটোরিকশাচালক জানান, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীচাপ থাকায় বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তবে জরিমানার কারণে আর বাড়তি ভাড়া আদায় করা হবে না বলে জানান তিনি।
এদিকে মহাসড়কে অবৈধ অটোরিকশার দাপট ও সড়ক পরিবহন আইন লঙ্ঘন করায় জোরালো অভিযান চালিয়েছে ময়মনসিংহ জেলা ট্রাফিক পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৪৪টি মামলায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া আইন অমান্য করায় আটক করা হয়েছে একাধিক যানবাহন।
এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) আবু নাসের মো. জহির জানান, সিএনজি অটোরিকশাগুলো মহাসড়কের গলার কাঁটা হয়ে আছে। এগুলো বড় যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলায় দুর্ঘটনা বাড়ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ সড়ক দ র ঘটন ব আরট এ ব আরট এ স এনজ
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’