বন্ধ ৬ স্টেশনেও ট্রেন থামে, বিনা টিকিটে যাত্রী ওঠেন
Published: 12th, April 2025 GMT
কুমিল্লার লাকসাম থেকে রেলপথে নোয়াখালীর দূরত্ব প্রায় ৫২ কিলোমিটার। দীর্ঘ এই রেলপথে অন্তত ৬টি স্টেশনের কার্যক্রম প্রায় দুই দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এসব স্টেশনে এখনো ট্রেন থামে, যাত্রীও ওঠে। তবে টিকিট বিক্রি হয় না। বছরের পর বছর এভাবে বিনা টিকিটের স্টেশনগুলো চলতে থাকায় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, জনবলসংকটসহ নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে এসব স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তবে মানুষের কথা চিন্তা করে এখনো ট্রেনসেবা চালু রাখা হয়েছে। এসব স্টেশনে বিনা টিকিটে যাত্রী ওঠার পাশাপাশি বুকিং ছাড়াই মালামালও পারাপার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও প্রতিনিয়ত রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
লাকসাম রেলওয়ে জংশন স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, লাকসাম থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে মোট ১২টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে লাকসামের দৌলতগঞ্জ, মনোহরগঞ্জের খিলা ও বিপুলাসার, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর বজরা, নোয়াখালী সদরের মাইজদী ও হরিনারায়ণপুর স্টেশনের কার্যক্রম ২০০৩ সালের পর থেকে পর্যায়ক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে লাকসাম পৌর শহরের দৌলতগঞ্জ স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আগে এই রেলপথে প্রতিদিন আন্তনগর, এক্সপ্রেস, লোকাল, ডেমুসহ অন্তত ১২টি ট্রেন চলাচল করত। বর্তমানে ঢাকা-নোয়াখালী রেলপথে আন্তনগর উপকূল এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন চলাচল করে। আর তিনটি ভিন্ন নামে আরেকটি এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। তবে ওই এক্সপ্রেস ট্রেনটি কখনো ঢাকা এক্সপ্রেস, কখনো নোয়াখালী এক্সপ্রেস আবার কখনো সমতট এক্সপ্রেস নামে চলাচল করছে। যদিও স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে এটি লোকাল ট্রেন নামে পরিচিত।
যাত্রী ও রেলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লোকাল ট্রেনটি এক দিন নোয়াখালী–লাকসাম পথে চলাচল করে; আরেক দিন নোয়াখালী–ঢাকা পথে চলাচল করে। নোয়াখালী থেকে সকাল ৭টায় লাকসামের উদ্দেশে ছেড়ে আসে সমতট এক্সপ্রেস। লাকসামে এসে পৌঁছায় সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে। একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় একই নামে নোয়াখালীর উদ্দেশে যায়। এরপর রাত ৮টা ৪০ মিনিটে নোয়াখালী এক্সপ্রেস হিসেবে ছেড়ে গিয়ে পরদিন ভোরে ঢাকা পৌঁছায়। সারা দিন অপেক্ষা করে ওই দিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ঢাকা এক্সপ্রেস হিসেবে নোয়াখালীর উদ্দেশে ছেড়ে আসে ট্রেনটি।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত তিনটি ভিন্ন নামে চলাচল করা ওই এক্সপ্রেস ট্রেনে টিকিট ছাড়াই লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথের ছয়টি স্টেশন থেকে যাত্রী ওঠানামা করছেন। দৌলতগঞ্জ থেকে হরিনারায়ণপুর পর্যন্ত এসব স্টেশনে চলাচলের ক্ষেত্রে ট্রেনটিতে সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ভাড়া নেওয়ার কথা। কিন্তু স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধসহ টিকিট বিক্রেতা না থাকায় শতাধিক যাত্রী প্রতিনিয়ত বিনা টিকিটে যাতায়াত করছেন।
মনোহরগঞ্জের কাটুনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খিলা ও বিপুলসার স্টেশন আমাদের গ্রামের দুই দিকে কাছাকাছি। একসময় এই স্টেশনগুলো জমজমাট ছিল। দিনরাত ট্রেনের হুইসেল বাজত। কিন্তু এখন জৌলুশ নেই। স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় রাতে সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডাসহ অসামাজিক কার্যক্রমও চলে। আমরা চাই, রেল সোনালি দিনে ফিরে আসুক। এসব স্টেশনের কার্যক্রম আবার চালু হোক।’
লাকসাম রেলওয়েতে কর্মরত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দৌলতগঞ্জ স্টেশনে একসময় তিনজন স্টেশনমাস্টার, তিনজন সহকারী স্টেশনমাস্টার, বুকিং ক্লার্ক, টালি ক্লার্ক, নিরাপত্তা বাহিনী, পোর্টারসহ বিভিন্ন পদে লোকবল নিয়োগ ছিল। বাকি স্টেশনগুলোতেও এভাবে কমবেশি লোকবল ছিল। কিন্তু সব পদই এখন শূন্য। লোকবলের সংকটে এসব স্টেশন বন্ধ হয়ে রয়েছে। দৌলতগঞ্জ স্টেশনটি দেড় দশক আগেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্টেশনটি ডাকাতিয়া নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় নদীপথে আসা মালামাল ট্রেনে আনা-নেওয়ার জন্য এটিকে ব্যবহার করা হতো।
সরেজমিনে দৌলতগঞ্জ স্টেশনে দেখা গেছে, টিকিট বেচা ও মালামাল পরিবহনে বুকিং কার্যক্রম বন্ধ। স্টেশনমাস্টারের কক্ষে ঝুলছে তালা। আশপাশে কোনো কর্মচারীও নেই। চারদিকে নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। স্টেশনের উত্তর-পশ্চিম দিকে মূল লাইন ও লুপ লাইনের জায়গাটি বেশ কয়েক বছর আগেই দখল হয়ে গেছে। সেখানে নির্মিত হয়েছে কয়েক শ অস্থায়ী দোকান, যার মধ্যে গড়ে উঠেছে লাকসামের বৃহৎ কাঁচাবাজার। স্টেশনটিতে বিভিন্ন বয়সী মানুষ বসে আড্ডা দিচ্ছেন। প্ল্যাটফর্মে ভ্রাম্যমাণ হকার দোকান বসিয়েছেন।
পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) এ বি এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জনবলসংকটের কারণে স্টেশনগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এ জন্য সেখানে টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। এরপরও মানুষের কথা মাথায় রেখে পরিবহনসেবা চালু রা হয়েছে। তবে অনেক সময় এসব স্টেশন থেকে যাত্রী উঠলে ট্রেনে থাকা টিটিই যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছেন।
এ বি এম কামরুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই স্টেশনগুলো কীভাবে চালু করা যায় এবং কীভাবে টিকিট বিক্রি শুরু করা যায়, বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ট শনগ ল স ট শনট ট র নট র লপথ র লওয়
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি