অদিতি ও আবির। দুইজনই চাকুরীজী। বিয়ের পর কেটে গেছে অনেক বছর। কিন্তু বাবা-মা হওয়া হয়নি। সন্তান দত্তক নিয়ে বাবা-মা হবেন এমন পরিকল্পনা বার বার নিয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যেনো নিতে পারছিলেন না। কোথায় গিয়ে যনো আটকে ছিল সিদ্ধান্ত। অদৃশ্য এক বাধার মুখে পড়ছিলেন। কিন্তু অদৃশ্য সেই বাধা কাটিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখল ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘জংলি’ সিনেমা।  

গতকাল ১১ মার্চ রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় এক দম্পতিকে পাওয়া গেল। যারা জংলি সিনেমাটি দেখে বের হয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে সিনেমাটি নিয়ে অভিমত জানাচ্ছিলেন। তরুণের নাম আবির। জানাচ্ছিলেন, বেলা ১০ টা ৫০ মিনিটের শোতে তারা জংলি সিনেমাটি দেখলেন। সিনেমাটি তাদের দ্বিতীয়বার দেখা। আগের পর দেখেছিলেন স্টার সিনেপ্লেক্সের সীমান্ত সম্ভার শাখায়। তার কাছে জংলি মূলত শুধু একটি ছবি নয়, একটি শিক্ষা। তার জীবনের বড় একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ামক।

আবির বললেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজনই দ্বিতীয়বার জংলি দেখলাম এবং উপলব্ধি করলাম শুধু জন্ম দিলেই বাবা-মা হওয়া যায় না। জন্ম না দিয়েও আদর্শ বাবা-মা হওয়া সম্ভব। সেটা জংলি ছবিতে পরিচালক সাহেব দারুণভাবে উপলব্ধি করাতে পেরেছেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বাচ্চা দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। নানাবিধ প্রতিকূলতা। সেটা সামাজিক কারণেও বলতে পারেন। কিন্তু এই ছবি দেখার পর আমরা উভয় সিদ্ধান্ত নেই। সমাজের কে কি বললো সেটা ভাবার দরকার নেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দৃঢ়ভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা বাচ্চা দত্তক নেব। ইতোমধ্যে একটি আশ্রমের সঙ্গে কথাও হয়েছে। 

ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘জংলি’ বাবা-মেয়ের গল্প। বলা ভালো, এক যুবকের বাবা হয়ে ওঠার গল্প। জনি থেকে জংলি হয়ে ওঠা চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। সিনেমার প্রথমার্ধে সিয়ামকে সেই চিরায়ত ‘চকলেট বয়’ লুকে দেখা গেলেও পরে তাঁর লুক ও অভিনয় ছিল আগের কাজগুলোর চেয়ে একেবারেই আলাদা। পর্দায় এবার তিনি পাশের বাড়ির ছেলে নন; বরং বখে যাওয়া এক জংলি। পর্দায় তিনি সত্যিই জংলি হয়ে উঠেছিলেন। 
 এ ছবিতে সিয়ামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে গেছে ছোট্ট নৈঋতা। পাখি নামের ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে সে ছিল সাবলীল। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে খাবার কুড়িয়ে খাওয়া, জংলির ঘরে গিয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে আসা। অত:পর সিয়াম সত্যিই সত্যিই তার বাবা হয়ে উঠেন। 

এমন গল্পই টেনেছে ওই দম্পতিকে। দম্পতি জানালেন, এই ছবির আরেকটি সুন্দর বিষয় হচ্ছে বাচ্চাদের গুড টাস ও ব্যাড টাচের বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া। এমন বিষয়টি আগে কখনও বাংলা সিনেমায় দেখানো হয়নি। সংসারে বাবা-মার ঝগড়া ও অস্বাভাবিক আচরণ বাচ্চাদের প্রতি দারুণভাবে প্রভাব পড়ে। এমন একটি বিষয়কে সিনেমার পর্দায় বিনোদনের উপজিব্য করে তুলে তা মানুষের মাঝে তুলে ধরার জন্য পরিচালককে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। 

আবির যখন কথা বলছিলেন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অদিতি। তিনি জানালেন, এমন ছবি সমাজের সব বাবা-মায়েদের দেখা উচিত। যারা বাবা-মা হননি তাদের আরও বেশি দেখা দরকার। সন্তান জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায় না। বাবা হওয়ার দারুণ এক লেসন রয়েছে জংলি সিনেমায়। আমরা যারা মেয়ে। তারা বাবাদের কাছে রাজকন্যা। সেই রাজকন্যাদের প্রতি বাবাদের ভালোবাসা কতটা থাকে। তা এই ছবিতে সিয়াম জন্মদাতা না বাবা হয়ে সেটা  দেখিয়েছেন। ছবিটি দেখার পর আমরা জীবনের বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। ব্যাড প্যারেন্টিং, শিশুদের জন্য গুড টাচ, ব্যাড ট্যাচের মতো বিষয়গুলো দেখানোর জন্য ‘জংলি’ টিমের বিশেষ ধন্যবাদ পাওনা। 
আমাদের সমাজে বাচ্চাদের নিয়ে কত কিছু ঘটে। অনেকে বাচ্চা জন্ম দিয়ে রাস্তায়ও ফেলে দিয়ে যান। তারা কিভাবে বড় হয় সেটা খুবই অমানবিক। এই ছবিতে সেটাও দেখানো হয়েছে। তাই আমি আহ্বান রাখব, এমন ছবি আরও নির্মাণ হোক। মারামারির ছবির বাইরেও এমন ছবি নির্মাণ হলে কিছু মানুষের মাঝেও তো প্রভাব পড়বে। যে প্রভাব আমাদের সমাজ ও সমাজের মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটিতে সিয়াম আহমেদের বিপরীতে আছেন শবনম বুবলী ও দীঘি। আরও আছেন দিলারা জামান, শহীদুজ্জামান সেলিম এবং রাশেদ মামুন অপু প্রমুখ। এই ছবির সবগুলো গান করেছেন প্রিন্স মাহমুদ।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ র স ন ম র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।

আরো পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।

যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।

লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।

বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ