‘জংলি’ সিনেমা দেখে জীবনের নতুন পথ খুঁজে পেলেন এই দম্পতি
Published: 12th, April 2025 GMT
অদিতি ও আবির। দুইজনই চাকুরীজী। বিয়ের পর কেটে গেছে অনেক বছর। কিন্তু বাবা-মা হওয়া হয়নি। সন্তান দত্তক নিয়ে বাবা-মা হবেন এমন পরিকল্পনা বার বার নিয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যেনো নিতে পারছিলেন না। কোথায় গিয়ে যনো আটকে ছিল সিদ্ধান্ত। অদৃশ্য এক বাধার মুখে পড়ছিলেন। কিন্তু অদৃশ্য সেই বাধা কাটিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখল ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘জংলি’ সিনেমা।
গতকাল ১১ মার্চ রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় এক দম্পতিকে পাওয়া গেল। যারা জংলি সিনেমাটি দেখে বের হয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে সিনেমাটি নিয়ে অভিমত জানাচ্ছিলেন। তরুণের নাম আবির। জানাচ্ছিলেন, বেলা ১০ টা ৫০ মিনিটের শোতে তারা জংলি সিনেমাটি দেখলেন। সিনেমাটি তাদের দ্বিতীয়বার দেখা। আগের পর দেখেছিলেন স্টার সিনেপ্লেক্সের সীমান্ত সম্ভার শাখায়। তার কাছে জংলি মূলত শুধু একটি ছবি নয়, একটি শিক্ষা। তার জীবনের বড় একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ামক।
আবির বললেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজনই দ্বিতীয়বার জংলি দেখলাম এবং উপলব্ধি করলাম শুধু জন্ম দিলেই বাবা-মা হওয়া যায় না। জন্ম না দিয়েও আদর্শ বাবা-মা হওয়া সম্ভব। সেটা জংলি ছবিতে পরিচালক সাহেব দারুণভাবে উপলব্ধি করাতে পেরেছেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বাচ্চা দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। নানাবিধ প্রতিকূলতা। সেটা সামাজিক কারণেও বলতে পারেন। কিন্তু এই ছবি দেখার পর আমরা উভয় সিদ্ধান্ত নেই। সমাজের কে কি বললো সেটা ভাবার দরকার নেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দৃঢ়ভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা বাচ্চা দত্তক নেব। ইতোমধ্যে একটি আশ্রমের সঙ্গে কথাও হয়েছে।
ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘জংলি’ বাবা-মেয়ের গল্প। বলা ভালো, এক যুবকের বাবা হয়ে ওঠার গল্প। জনি থেকে জংলি হয়ে ওঠা চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। সিনেমার প্রথমার্ধে সিয়ামকে সেই চিরায়ত ‘চকলেট বয়’ লুকে দেখা গেলেও পরে তাঁর লুক ও অভিনয় ছিল আগের কাজগুলোর চেয়ে একেবারেই আলাদা। পর্দায় এবার তিনি পাশের বাড়ির ছেলে নন; বরং বখে যাওয়া এক জংলি। পর্দায় তিনি সত্যিই জংলি হয়ে উঠেছিলেন।
এ ছবিতে সিয়ামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে গেছে ছোট্ট নৈঋতা। পাখি নামের ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে সে ছিল সাবলীল। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে খাবার কুড়িয়ে খাওয়া, জংলির ঘরে গিয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে আসা। অত:পর সিয়াম সত্যিই সত্যিই তার বাবা হয়ে উঠেন।
এমন গল্পই টেনেছে ওই দম্পতিকে। দম্পতি জানালেন, এই ছবির আরেকটি সুন্দর বিষয় হচ্ছে বাচ্চাদের গুড টাস ও ব্যাড টাচের বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া। এমন বিষয়টি আগে কখনও বাংলা সিনেমায় দেখানো হয়নি। সংসারে বাবা-মার ঝগড়া ও অস্বাভাবিক আচরণ বাচ্চাদের প্রতি দারুণভাবে প্রভাব পড়ে। এমন একটি বিষয়কে সিনেমার পর্দায় বিনোদনের উপজিব্য করে তুলে তা মানুষের মাঝে তুলে ধরার জন্য পরিচালককে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
আবির যখন কথা বলছিলেন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অদিতি। তিনি জানালেন, এমন ছবি সমাজের সব বাবা-মায়েদের দেখা উচিত। যারা বাবা-মা হননি তাদের আরও বেশি দেখা দরকার। সন্তান জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায় না। বাবা হওয়ার দারুণ এক লেসন রয়েছে জংলি সিনেমায়। আমরা যারা মেয়ে। তারা বাবাদের কাছে রাজকন্যা। সেই রাজকন্যাদের প্রতি বাবাদের ভালোবাসা কতটা থাকে। তা এই ছবিতে সিয়াম জন্মদাতা না বাবা হয়ে সেটা দেখিয়েছেন। ছবিটি দেখার পর আমরা জীবনের বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। ব্যাড প্যারেন্টিং, শিশুদের জন্য গুড টাচ, ব্যাড ট্যাচের মতো বিষয়গুলো দেখানোর জন্য ‘জংলি’ টিমের বিশেষ ধন্যবাদ পাওনা।
আমাদের সমাজে বাচ্চাদের নিয়ে কত কিছু ঘটে। অনেকে বাচ্চা জন্ম দিয়ে রাস্তায়ও ফেলে দিয়ে যান। তারা কিভাবে বড় হয় সেটা খুবই অমানবিক। এই ছবিতে সেটাও দেখানো হয়েছে। তাই আমি আহ্বান রাখব, এমন ছবি আরও নির্মাণ হোক। মারামারির ছবির বাইরেও এমন ছবি নির্মাণ হলে কিছু মানুষের মাঝেও তো প্রভাব পড়বে। যে প্রভাব আমাদের সমাজ ও সমাজের মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।
ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটিতে সিয়াম আহমেদের বিপরীতে আছেন শবনম বুবলী ও দীঘি। আরও আছেন দিলারা জামান, শহীদুজ্জামান সেলিম এবং রাশেদ মামুন অপু প্রমুখ। এই ছবির সবগুলো গান করেছেন প্রিন্স মাহমুদ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ র স ন ম র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
তানোরে চুরি হওয়া ১১ লাখ টাকা মাটি খুঁড়ে উদ্ধার
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয়েছে চুরি হয়ে যাওয়া প্রায় ১১ লাখ টাকা। এসব টাকা চুরির অভিযোগে আরজেদ আলী ওরফে কুরহান (৩৫) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি উপজেলার জোড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে কুরহানের বাড়ির পেছনে মাটি খুঁড়ে টাকার ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগেই কুরহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। টাকা উদ্ধারের পর বুধবার বিকেলে কুরহানকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জেলা পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, রাজশাহী নগরের শিরোইল মঠপুকুর এলাকার বাসিন্দা মাবিয়া খাতুন জমি বিক্রি করতে গত সোমবার তানোর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যান। সঙ্গে ছিল জমি বিক্রির ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অফিসে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় মাবিয়া খাতুন তার টাকার ব্যাগটি চেয়ারের পাশে রাখেন। এ সুযোগে কৌশলে ব্যাগটি নিয়ে সটকে পড়ে কুরহান।
মোবাইল ফোনে কথোপকথন শেষে ব্যাগটি না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন মাবিয়া খাতুন। এতে পুরো অফিসজুড়ে হইচই পড়ে যায়। পরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি ব্যাগ নিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে। ঘটনার দিনই মাবিয়া খাতুন তানোর থানায় অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে পুলিশ প্রযুক্তির ব্যবহার করে চোর শনাক্ত করে। মঙ্গলবার রাতেই কুরহানকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশকে কুরহান জানিয়েছেন, ব্যাগটি চুরি করে কাউকে কিছু না বলে তিনি বাড়ির পেছনে মাটি খুঁড়ে তা পুঁতে রাখেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে টাকা খরচের পরিকল্পনা ছিল তার। তবে, এত দ্রুত ধরা পড়বেন, সেটা ভাবেননি।
তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, কুরহান চুরির কথা স্বীকার করলে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাড়ির পেছনের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় ব্যাগভর্তি টাকা। আদালতের অনুমতি নিয়ে এই টাকা মালিক মাবিয়া খাতুনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ঢাকা/কেয়া/রফিক