কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলন্ত একটি মাইক্রোবাসে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার দুপুরে উপজেলার নিমসার বাজার এলাকায় মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে এ ঘটনা ঘটে। চালক দ্রুত গাড়ি থামানোয় অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন পাঁচ যাত্রী।

এ ঘটনায় অন্য কোনো গাড়ি বা যাত্রীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাসের লিকেজের কারণে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় লোকজন জানান, বেলা দেড়টার দিকে মহাসড়কের নিমসার বাজার এলাকায় চলন্ত অবস্থায় যাত্রীবাহী ওই মাইক্রোবাসে আগুন ধরে যায়। এ সময় চালক দ্রুত রাস্তার পাশে গাড়িটি থামালে যাত্রীরা নেমে যান। মুহূর্তের মধ্যেই গাড়িটি পুড়ে যায়। খবর পেয়ে চান্দিনা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দরজা খোলা অবস্থায় চলাচল করে বলে মানুষের কাছে যাত্রী পরিবহনের এসব গাড়ি দরজা খোলা মাইক্রোবাস নামে পরিচিত। মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বিভিন্ন এলাকায় এসব গাড়ি দাবড়ে বেড়াচ্ছে, যার বেশির ভাগেরই কোনো ফিটনেস নেই।

গাড়িটির চালক মো.

সজীব মিয়া জানান, ক্যান্টনমেন্টের সৈয়দপুর এলাকার একটি সিএনজি পাম্প থেকে গ্যাস নেওয়ার পর পাঁচজন যাত্রী নিয়ে চান্দিনার উদ্দেশে রওনা দেন। একপর্যায়ে নিমসার বাজার এলাকায় পৌঁছালে ইঞ্জিনের গিয়ার বক্সের মধ্যে হঠাৎ আগুন ধরে যায়। টের পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সড়কের পাশে গাড়িটি থামিয়ে যাত্রীদের দ্রুত নামতে বলেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো গাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এলেও গাড়িটি রক্ষা করা যায়নি।

ময়নামতি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল বাহার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ততক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে এবং পুড়ে যাওয়া গাড়িটি তারাই (মালিকপক্ষ) সরিয়ে নিয়ে যায়। কী কারণে আগুন লেগেছে, সেটা বিস্তারিত না জেনে বলা যাচ্ছে না। গাড়িটির ফিটনেস ছিল কি না, সেটাও কাগজপত্র না দেখে বলা যাবে না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল ক য় র এল ক সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ