তারা শুধুই পরিপূরক নন, ঈদ সিনেমার চালিকাশক্তিও
Published: 17th, April 2025 GMT
দক্ষিণ এশীয় সিনেমায় সব সময়ই নায়কদের আধিপত্য বেশি লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের ছবিতেও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে শুধু নায়ক নয়, নায়িকারাও ছিলেন। তাদের অভিনয়, গল্পে প্রভাব, চরিত্রের গভীরতা এবং দর্শকের প্রতি গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করেছে– নায়িকারা এখন শুধুই পরিপূরক নন, বরং সিনেমার মূল চালিকাশক্তি হতে পারেন। ঈদের ছয় সিনেমায় আলাদা চমক নিয়ে হাজির হন ইধিকা পাল, শবনম বুবলী, তমা মির্জা ও নুসরাত ফারিয়ারা। ঝলক দেখিয়েছেন দীঘি, সুনেরাহ ও শিমুও। ঈদের ছবির এই নায়িকাদের দাপুটে উপস্থিতি নিয়েই এ আয়োজন।
শাকিবের বিপরীতে ইধিকার আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি
‘প্রিয়তমা’ দিয়ে বাংলাদেশি দর্শকের মনে জায়গা করে নেন ইধিকা পাল। এরপর কলকাতায় দেবের বিপরীতে ‘খাদান’ করেছেন। ‘প্রিয়তমা’ ও ‘খাদান’ ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়ার ইধিকা হয়ে উঠেছেন দুই বাংলার বড় নায়িকা। এবার ‘বরবাদ’ দিয়ে নতুন করে ইধিকা দেখিয়ে দিলেন, তাঁর অভিনয়ের কারিশমা কতটা পরিণত। ঈদে সবচেয়ে বেশি হলে প্রদর্শনী চলছে মেহেদি হাসানের ‘বরবাদ’ সিনেমাটির। শাকিব খানের বিপরীতে সিনেমাটির নায়িকা ইধিকা পাল। তাঁর চরিত্রের নাম নীতু। সিনেমাটিতে নিজের সেরাটা দিয়েছেন ইধিকা। কোনো কোনো জায়গায় সিনেমার প্রাণ শাকিব খানকেও ছাপিয়ে যেতে চেয়েছিলেন অভিনয় দিয়ে। রোমান্টিক দৃশ্য, অসহায়ত্ব থেকে বদলে যাওয়া সব ভূমিকাতে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন ইধিকা। দর্শক ইধিকার অভিনয়কে গ্রহণ করেছে ইতিবাচকভাবে এবং অনেকেই বলছেন, তাঁর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিন টিকে থাকার রসদ।
‘জংলি’তে ইন্টার্ন চিকিৎসক বুবলী
বাণিজ্যিক সিনেমায় বুবলীকে সব সময়ই রোমান্টিক চরিত্রে দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু ‘জংলি’ ছবিতে তিনি হাজির হয়েছেন একেবারে অন্য রূপে। সাদামাটা একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক। সিনেমায় তাঁর চরিত্রে ছিল সাহসিকতা আর গতিময়তার। বুবলীর শারীরিক ফিটনেস, সংলাপ বলার ধরন আর চরিত্রের গভীরতা বেশ প্রশংসিত হয়েছে। বুবলী যে শুধু বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা, তেমনটি কিন্তু নয়। সিয়ামের বিপরীতে এর আগে ‘টান’ ওয়েব ফিল্মেও চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনি। পেয়েছিলেন প্রশংসাও। ‘দেয়ালের দেশ’ ছবিতেও তাঁর অনবদ্য অভিনয় অভিনেত্রী হিসেবে পূর্ণ স্বীকৃতি দিয়েছে দর্শক। সেই বুবলী ‘জংলি’তে সাদামাটা চরিত্রে দারুণ কারিশমা দেখিয়েছেন। এম রাহিম পরিচালিত ছবিটিতে সিয়ামের সঙ্গে আরেক নায়িকা ছিলেন দীঘি। ছবিটির নূপুর চরিত্র দীঘির করা। চরিত্রটির উপস্থিতি খুবই কম হওয়ায় খুব একটা আলো ফেলতে পারেননি দীঘি।
পরিণত অভিনয় তমা মির্জার
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী তমা মির্জা বরাবরই চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে ভালোবাসেন। শিহাব শাহীন পরিচালিত ‘দাগি’ ছবিতে তিনি ঠিক তেমনই এক চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যে অভিনয় দারুণ পরিণত। হল থেকে বের হওয়ার পর তমার চরিত্রের আবেশ নিয়ে বের হতে পারবেন দর্শক। চরিত্রটি দর্শকদের হৃদয়ে প্রভাব ফেলতে বাধ্য করবে। নিশোর বিপরীতে এর আগে ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তমা মির্জা। কিন্তু ‘দাগি’র জেরিন চরিত্রটি সুড়ঙ্গের চেয়ে আরও দারুণ কিছু। তাঁর এই সরল অভিনয় সিনেমাটিকে দিয়েছে শক্ত ভিত্তি। ঈদে এই ছবির মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো, তমা গ্ল্যামার নয়, অভিনয় দিয়েই মন জয় করতে পারেন। সিনেমাটিতে আরেক অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামালও আছেন। তবে তাঁর উপস্থিতি ছিল কম। তবে যতটা ছিলেন, ততটা পরিণত অভিনয় দিয়ে দর্শকদের তৃপ্ত করতে সমর্থ হয়েছেন।
গানে নজরকাড়া ফারিয়া
ঈদে মুক্তি পাওয়া ব্যতিক্রমী ধারার ছবি ‘জ্বীন’, যেখানে ভৌতিক গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন নুসরাত ফারিয়া। এই ছবিতে তিনি ছিলেন এক রহস্যময়ী নারী, যিনি প্রেম এবং অতিপ্রাকৃত ঘটনার আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছেন। ফারিয়ার অভিনয়, মেকআপ এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ চরিত্রের সঙ্গে খুব একটা মানানসই ছিল না। ফলে সিনেমার থ্রিল বজায় থাকেনি খুব একটা। সিনেমাটির গান আলোচিত হলেও সিনেমাটি তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। ছবিতে ফারিয়া গ্রামের এক মেয়ের চরিত্র করেছেন। চরিত্রটি পুরোপুরি হয়ে উঠতে বেশ দুর্বলতা ছিল। তবে ছবির গানগুলোতে ফারিয়া ছিলেন পরিণত। তাই গান দিয়েই আলোচিত হতে হয়েছে তাঁকে।
ঈদে মুক্তি পাওয়া আরেক ছবি ‘অন্তরাত্মা’তে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেন ভারতীয় অভিনেত্রী দর্শনা বণিক। ছবিটি এক প্রকার প্রচারণা ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয়। এ ছাড়া নানা কারণে সুবিধাজনক অবস্থান নিতে পারেনি। ফলে সিনেমার নায়িকা দর্শনা বণিকের অভিনয়ও তেমন আলোচনায় আসেনি। ‘অন্তরাত্মা’ নামে যে একটা ছবি মুক্তি পেয়েছে, দর্শক অনেকে সেটা জানেনও না। এদিকে ঈদের আরেক সিনেমা ‘চক্কর ৩০২’। পুলিশি তদন্ত ঘরানার সিনেমাটি মোশাররফ করিমকে ঘিরেই মূলত এগিয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ র স ন ম ব বল তম ম র জ র ব পর ত উপস থ ত কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
গান নিয়েই আমার সব ভাবনা
কর্নিয়া। তারকা কণ্ঠশিল্পী। অনলাইনে প্রকাশ পাচ্ছে বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া তাঁর দ্বৈত গান ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। এ আয়োজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে–
‘ভাঙা ঘর’ ও ‘আদর’-এর পর প্রকাশ পাচ্ছে ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। একনাগাড়ে দ্বৈত গান গেয়ে যাচ্ছেন, কারণ কী?
শ্রোতাদের চাওয়া আর নিজের ভালো লাগা থেকেই দ্বৈত গান গাওয়া, এর বাইরে আলাদা কোনো কারণ নেই। কারণ, সব সময় ভাবনায় এটাই থাকে, যে কাজটি করছি, তা শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ করবে কিনা। সেটি একক, না দ্বৈত গান– তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। তা ছাড়া রুবেল খন্দকারের সঙ্গে গাওয়া ‘ভাঙা ঘর’ ও অশোক সিংয়ের সঙ্গে গাওয়া ‘আদর’ গান দুটি যেমন ভিন্ন ধরনের, তেমনি বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’ অনেকটা আলাদা। আসল কথা হলো, যা কিছু করি, তার পেছনে শ্রোতার ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
দ্বৈত গানের সহশিল্পী হিসেবে নতুনদের প্রাধান্য দেওয়ার কারণ?
সহশিল্পীর কণ্ঠ ও গায়কি যদি শ্রোতার মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার মতো হয়, তাহলে সে তরুণ, নাকি তারকা– তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। এমন তো নয় যে, নতুন শিল্পীরা ভালো গাইতে পারে না। তা ছাড়া তারকা শিল্পী ছাড়া দ্বৈত গান গাইব না– এই কথাও কখনও বলিনি। তাই দ্বৈত গানে তারকাদের পাশাপাশি নতুনদের সহশিল্পী হিসেবে বেছে নিতে কখনও আপত্তি করিনি।
প্রতিটি আয়োজনে নিজেকে নতুন রূপে তুলে ধরার যে চেষ্টা, তা কি ভার্সেটাইল শিল্পী প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য?
হ্যাঁ, শুরু থেকেই ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে পরিচিতি গড়ে তুলতে চেয়েছি। এ কারণে কখনও টেকনো, কখনও হার্ডরক, আবার কখনও ফোক ফিউশনের মতো মেলোডি গান কণ্ঠে তুলেছি। গায়কির মধ্য দিয়ে নিজেকে বারবার ভাঙার চেষ্টা করছি। সব সময়ই নিরীক্ষাধর্মী গান করতে ভালো লাগে। একই ধরনের কাজ বারবার করতে চাই না বলেই নানা ধরনের গান করছি। নিজেকে ভেঙে সব সময়ই নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা জারি রাখছি।
প্রযোজক হিসেবে নিজের চ্যানেলের জন্য নতুন কী আয়োজন করছেন?
আয়োজন থেমে নেই। তবে কবে নতুন গান প্রকাশ করব– তা এখনই বলতে পারছি না। কারণ একটাই, অন্যান্য কাজের মতো গান তো ঘড়ি ধরে কিংবা সময় বেঁধে তৈরি করা যায় না। একেকটি গানের পেছনে অনেক সময় দিতে হয়। কোনো কোনো গানের কথা-সুর-সংগীতের কাটাছেঁড়া চলে দিনের পর দিন। এরপর যখন তা সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে হয়, তাখনই প্রকাশ করি।
গান গাওয়ার পাশাপাশি মডেলিং বা অভিনয় করার ইচ্ছা আছে?
সত্যি এটাই, গান নিয়েই আমার সব ভাবনা। তারপরও অনেকের অনুরোধে কয়েকটি পত্রিকার ফ্যাশন পাতার জন্য মডেল হিসেবে কাজ করেছি। তবে মডেল হব– এমন ইচ্ছা নিয়ে কাজ করিনি। অভিনয় নিয়েও কিছু ভাবি না। অন্য কোনো পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না।