কিশোরগঞ্জের ইটনায় ওসির জিলাপি খেতে টাকা চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁসের পর এবার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক (ডিলার) নিয়োগে এক লাখ টাকা ‘ঘুষ চাওয়ার’ একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফোনালাপের অডিও ছড়িয়ে পড়ে। তবে অডিওটি ‘সুপার এডিটেড’ বলে দাবি করেছেন ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ ওঠা উপজেলা প্রশাসনের উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা মো.

ফজলুর রহমান।

গতকাল রাত ৮টা ২৫ মিনিটে ‘সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া’ নামের একটি আইডি থেকে ফোনালাপের অডিওটি ফেসবুকে আপলোড করা হয়। এতে পরিবেশক নিয়োগে ঘুষ চাওয়া নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফজলুর রহমান (পটল) ও মিজানুর রহমান নামে লাইসেন্সপ্রত্যাশী এক বিএনপি নেতাকে কথা বলতে শোনা যায়। অডিওটি সঠিক বলে দাবি করেছেন মিজানুর রহমান।

৫ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ফোনালাপের এক প্রান্ত থেকে বলতে শোনা যায়, ‘এখন মেসেজটা দেওয়ার লাইগাই ফোন দিছলাম। লাইসেন্সটা এই সপ্তাহে ফাইনাল অইবো, বিষ্যুদবারের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে প্রকাশ অইবো। বুঝতেই তো আছেন, খুব কম্পিটিশন চলছে বিভিন্নভাবে। এহন আপনের এইটা তো আমরা গেছিলাম সরেজমিন, আপনের সাথে একটা পরিচিতিও আছে। কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, যতটুক করতে পারি। এখন অফিসকে একটা এলআর বলছিলাম না! একটা এলআর দিতে হবে। আপনে দিতেও রাজি আছেন বলছিলেন, হ্যাঁ ঠিক আছে জানায়েন। এহন অফিসকে এলআর বাবদ এক লক্ষ টাকা দিতে হবে আরকি।’ এ সময় অপর প্রান্ত থেকে লাইসেন্সপ্রত্যাশী এলআর দিতে সম্মতি জানানোর পর বলা হয়, ‘কিন্তু এইটা কালকের মধ্যে পেইড কইরা দিতে অইবো। কালকে সন্ধ্যা।’ তখন লাইসেন্সপ্রত্যাশী বলেন, ‘কালকের মধ্যে তো ঝামেলা।’ তখন অন্য প্রান্ত থেকে আরেকজন লাইসেন্সপ্রত্যাশীর নাম উল্লেখ করে বলা হয়, ‘সুধীর চৌধুরী তো কিছু বলে নাই। পরে তো সে আউট অইয়া যাইবো গা।’

ফোনালাপে ডিলারের লাইসেন্সপ্রত্যাশী ব্যক্তি উপজেলার রায়টুটী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। ফোনালাপটি ২৫ মার্চ রাতের নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত ইউএনওর মেসেজের কথা বলে লাইসেন্সের জন্য এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফজলুর রহমান (পটল)। রেকর্ডটি যে কেউ শুনলেই বুঝতে পারবেন। এটি আমার সঙ্গে তাঁর কথোপকথন। তবে ওনার চাহিদামাফিক আমি ২৬ মার্চ ঘুষের এক লাখ টাকা দিতে পারিনি। এর ফলে ২৭ মার্চ ডিলারের তালিকায় আমার নাম রাখা হয়নি।’

তবে উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফজলুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘রেকর্ডটি শুনেছি। এটি সম্পূর্ণ সুপার এডিট করা। এ ধরনের কোনো কথা কারও সঙ্গে আমার হয়নি। প্রশাসনের বিরুদ্ধে এটি একটি চক্রান্ত। যারা এগুলো করছে, তাদের চাহিদা পূরণ করা যায়নি বলে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক গত বছরের ২০ নভেম্বর ইটনার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব নেন। গত ১৫ এপ্রিল নতুন ইউএনও যোগদানের আগপর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর দায়িত্ব পালনকালে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৮টি চাল বিক্রয়কেন্দ্রে পরিবেশক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

অভিযোগের বিষয়ে আবু বকর সিদ্দিকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও না ধরায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সদ্য যোগদান করা ইউএনও মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তাঁর নজরে আসেনি। কোনো অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফজল র রহম ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি