ইটনায় এবার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক নিয়োগে ‘ঘুষ চাওয়ার ফোনালাপ’ ফাঁস
Published: 18th, April 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের ইটনায় ওসির জিলাপি খেতে টাকা চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁসের পর এবার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক (ডিলার) নিয়োগে এক লাখ টাকা ‘ঘুষ চাওয়ার’ একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফোনালাপের অডিও ছড়িয়ে পড়ে। তবে অডিওটি ‘সুপার এডিটেড’ বলে দাবি করেছেন ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ ওঠা উপজেলা প্রশাসনের উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা মো.
গতকাল রাত ৮টা ২৫ মিনিটে ‘সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া’ নামের একটি আইডি থেকে ফোনালাপের অডিওটি ফেসবুকে আপলোড করা হয়। এতে পরিবেশক নিয়োগে ঘুষ চাওয়া নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফজলুর রহমান (পটল) ও মিজানুর রহমান নামে লাইসেন্সপ্রত্যাশী এক বিএনপি নেতাকে কথা বলতে শোনা যায়। অডিওটি সঠিক বলে দাবি করেছেন মিজানুর রহমান।
৫ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ফোনালাপের এক প্রান্ত থেকে বলতে শোনা যায়, ‘এখন মেসেজটা দেওয়ার লাইগাই ফোন দিছলাম। লাইসেন্সটা এই সপ্তাহে ফাইনাল অইবো, বিষ্যুদবারের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে প্রকাশ অইবো। বুঝতেই তো আছেন, খুব কম্পিটিশন চলছে বিভিন্নভাবে। এহন আপনের এইটা তো আমরা গেছিলাম সরেজমিন, আপনের সাথে একটা পরিচিতিও আছে। কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, যতটুক করতে পারি। এখন অফিসকে একটা এলআর বলছিলাম না! একটা এলআর দিতে হবে। আপনে দিতেও রাজি আছেন বলছিলেন, হ্যাঁ ঠিক আছে জানায়েন। এহন অফিসকে এলআর বাবদ এক লক্ষ টাকা দিতে হবে আরকি।’ এ সময় অপর প্রান্ত থেকে লাইসেন্সপ্রত্যাশী এলআর দিতে সম্মতি জানানোর পর বলা হয়, ‘কিন্তু এইটা কালকের মধ্যে পেইড কইরা দিতে অইবো। কালকে সন্ধ্যা।’ তখন লাইসেন্সপ্রত্যাশী বলেন, ‘কালকের মধ্যে তো ঝামেলা।’ তখন অন্য প্রান্ত থেকে আরেকজন লাইসেন্সপ্রত্যাশীর নাম উল্লেখ করে বলা হয়, ‘সুধীর চৌধুরী তো কিছু বলে নাই। পরে তো সে আউট অইয়া যাইবো গা।’
ফোনালাপে ডিলারের লাইসেন্সপ্রত্যাশী ব্যক্তি উপজেলার রায়টুটী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। ফোনালাপটি ২৫ মার্চ রাতের নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত ইউএনওর মেসেজের কথা বলে লাইসেন্সের জন্য এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফজলুর রহমান (পটল)। রেকর্ডটি যে কেউ শুনলেই বুঝতে পারবেন। এটি আমার সঙ্গে তাঁর কথোপকথন। তবে ওনার চাহিদামাফিক আমি ২৬ মার্চ ঘুষের এক লাখ টাকা দিতে পারিনি। এর ফলে ২৭ মার্চ ডিলারের তালিকায় আমার নাম রাখা হয়নি।’
তবে উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফজলুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘রেকর্ডটি শুনেছি। এটি সম্পূর্ণ সুপার এডিট করা। এ ধরনের কোনো কথা কারও সঙ্গে আমার হয়নি। প্রশাসনের বিরুদ্ধে এটি একটি চক্রান্ত। যারা এগুলো করছে, তাদের চাহিদা পূরণ করা যায়নি বলে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক গত বছরের ২০ নভেম্বর ইটনার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব নেন। গত ১৫ এপ্রিল নতুন ইউএনও যোগদানের আগপর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর দায়িত্ব পালনকালে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৮টি চাল বিক্রয়কেন্দ্রে পরিবেশক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
অভিযোগের বিষয়ে আবু বকর সিদ্দিকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও না ধরায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সদ্য যোগদান করা ইউএনও মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তাঁর নজরে আসেনি। কোনো অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফজল র রহম ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।
এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।
মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।
পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।
পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’
জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।