ভোলায় গ্যাসভর্তি আরও তিনটি গাড়ি আটকে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ, উত্তেজনা
Published: 19th, April 2025 GMT
ভোলায় পাওয়া গ্যাস দিয়ে জেলার উন্নয়নসহ পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে ইনট্রাকো কোম্পানির এলপিজি গ্যাসভর্তি আরও তিনটি গাড়ি (কাভার্ড ভ্যান) আটকে ভোলা-চরফ্যাশন মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা। আজ শনিবার বিকেলে ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভের সময় গাড়ি তিনটি আটকে দেওয়া হয়। এ নিয়ে গতকাল শুক্রবার রাত থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত চারটি গাড়ি আটকে দেওয়া হলো।
গ্যাসভর্তি গাড়িগুলো আটক করে বাসস্ট্যান্ডের পাশে হেলিপ্যাড এলাকায় রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে গাড়িগুলো ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় স্থানীয় ছাত্র-জনতা মশালমিছিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা জানান, গতকাল সকালে ভোলায় গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন, ঘরে ঘরে গ্যাস–সংযোগ এবং ভোলার গ্যাস ভোলার বাইরে নেওয়া বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে বদ্বীপ ছাত্রকল্যাণ সংসদ। ওই দিনই রাত ১০টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ করেন ছাত্র-জনতা। এ সময় ইনট্রাকোর একটি গ্যাসবাহী কাভার্ড ভ্যান আটকানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালের মে মাসে ভোলার গ্যাস সিলিন্ডারে করে ঢাকার কলকারখানায় সরবরাহের জন্য সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে ইনট্রাকো কোম্পানির একটি চুক্তি হয়। পুলিশ ও ইনট্রাকোর কর্মীরা জানান, গতকাল রাতে ব্যাপারীর দোকান এলাকার ডিপো থেকে গ্যাস সিলিন্ডার বোঝাই করে কাভার্ড ভ্যানে ঢাকায় যাওয়ার পথে মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গেলে ছাত্র-জনতা গাড়িটি আটকে তাঁদের দাবির কথা জানান। তখন গ্যাসভর্তি গাড়িটি বাসস্ট্যান্ডের পাশে হেলিপ্যাড এলাকায় স্থানীয় লোকজনের জিম্মায় রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। ওই ঘটনার পর আজ বিকেলে ঢাকাগামী আরও তিনটি গাড়ি আটকে সড়কে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
ভোলা সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক ওয়াসিব আলম জানান, বিষয়টি ওপরের কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইনট্রাকো কোম্পানির স্থানীয় কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন জানান, ছাত্র-জনতার দাবির মুখে গাড়িগুলো ঢাকায় যাওয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
ভোলা সদরের ইউএনও আরিফুজ্জামান ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সাহাদাৎ মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ য সভর ত ছ ত র জনত ড এল ক য় ইনট র ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি
ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।
শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলাশিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’
শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী