আইনবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, গুমের ঘটনায় বাংলাদেশে জঘন্যভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এসব ঘটনার বিচার করা হবে। পাশাপাশি দেশের আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এমনভাবে করা হবে, যাতে কখনোই কেউ আর এ ধরনের অপরাধ করার দুঃসাহস দেখাতে না পারেন।

অধ্যাপক আসিফ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো গুম, খুন, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া নৃশংসতম ঘটনাগুলোর সুবিচার নিশ্চিত করা।

প্রস্তাবিত ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেলে আইন ও বিচার বিভাগ এবং আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিকেল পৌনে চারটায় এ সভা শুরু হয়।

গুম দেশের মানুষের জাতীয় জীবনে বিশেষ করে গত ১৫ বছরে একটা দুঃসহ স্মৃতি হয়ে আছে উল্লেখ করে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে (গুমের) বিচার করার কথা বলতাম। কিন্তু সংশয় ও দ্বিধা থাকত।.

..এবার জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার অসীম আত্মত্যাগের কারণে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ এসেছে।’

আসিফ নজরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার একেবারে প্রথম দিকেই কোনো কালবিলম্ব না করে গুমসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে (দলিল) পক্ষরাষ্ট্র হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো রিজার্ভেশন (আপত্তি) ছাড়া এত বড় মানবাধিকার কনভেনশনের পক্ষরাষ্ট্র হয়েছে।

দেশে গুমসংক্রান্ত বিষয় বিচার করার জন্য কোনো ডেডিকেটেড (সুনির্দিষ্ট) আইন নেই উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা গুম আন্তর্জাতিক কনভেনশনের পক্ষরাষ্ট্র হয়েছি কিন্তু আমাদের দেশে গুমসংক্রান্ত বিষয় বিচার করার জন্য কোনো ডেডিকেটেড আইন নেই, এটি হতে পারে না। আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে বিস্তৃত এবং সুসংগঠিত গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে দেখা হলেও এর বাইরে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে গুমের আলাদা কোনো সংজ্ঞা বা তার শাস্তির কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া নেই।’

এই শূন্যতাকে দূর করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এ আইনের একটি খসড়া তৈরি করে যথাযথভাবে তা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

গুমকে হত্যার চেয়েও ভয়াবহ অপরাধ উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়েও খারাপ অপরাধ। সরকারের যত অগ্রাধিকার রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো গুম, খুন, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশের ইতিহাসে যে নৃশংসতম ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেটির বিচার নিশ্চিত করা এবং এ ধরনের শাসক হওয়ার চিন্তা যাঁদের থাকে, তাঁদের জন্য কাজটা কঠিন করে দেওয়া। সে জন্য আমরা বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করছি। একই সঙ্গে আমরা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছি।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আরও বলেন, অনেক আইন হবে, আগেও হয়েছে, ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও অনেক ভালো ভালো আইন হয়েছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার রাখেনি। এখন যে আইন করা হবে, সেগুলো পরবর্তী সরকার রাখবে কি না, এমন প্রশ্নও উঠছে।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি বললাম, পরবর্তী যে সরকার আসবে, তারা কমপক্ষে এক হাজার মানুষের রক্তের ওপরে গঠিত ফ্রেমওয়ার্কের মধ্য দিয়ে আসবে। তার পেছনে ৫০-৬০ হাজার মানুষের আহত হওয়ার স্মৃতি থাকবে। লাখো কোটি মানুষের কান্না, এত বড় লিগ্যাসি বহন করার পর পরবর্তী সরকার আমাদের সব সংস্কার ভুলে যাবে, এটি আমরা কল্পনাও করতে পারি না। আমরা সংস্কারপ্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছি। এই আশঙ্কা থেকে যে তারা যেন কখনো বলতে না পারে, আমাদের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না।’

আজকের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, কমিটির সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটরিল অ্যাসিস্ট্যান্ট এহসানুল হক সমাজী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক শহিদুল আলম, ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির, মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেলিন, মানবাধিকারকর্মী ও এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান মো. জাকারিয়া, গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, সাবেক কূটনীতিক ও গুম সার্ভাইভার মারুফ জামান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সায়েরা ইসলাম খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন অস্ট্রেলিয়ান ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষক এম এহতেশামুল বারী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মো. কামাল উদ্দিন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব চ র কর উপদ ষ ট সরক র র র কর র র জন য আম দ র অপর ধ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩