সাইদুল হক জুইসের হাতে লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্র গ্যালারি বদলে যায় এক গাঢ় অরণ্যে। ‘বনবিবির খোঁজে’ শিরোনামে প্রদর্শনীতে জুইসের বিভিন্ন মাধ্যমে তৈরি শিল্পের ওপর ভর করে একটি অন্বেষণ প্রক্রিয়া দেখতে পাই। তিনি তাঁর শিল্প ও ভাবনার মাধ্যমে খোঁজ করেছেন বাংলার বনবিবির।
বনবিবি এক অভূতপূর্ব অধ্যাত্ম। সমন্বয়বাদী এক অস্তিত্ব। সনাতন ও মুসলমান ধর্মের মানুষেরা যেসব ক্ষেত্রে এক সূত্রে গাঁথা, তার একটি হলো বনবিবি।
জুইস করোনাকালের কোয়ারেন্টিনে থেকে কাগজ ছিঁড়ে কেটে কলমের আর রঙের ব্যবহারে কোলাজ তৈরি করেন। শুরু হয় তাঁর বনবিবির খোঁজ। শিল্পীর রঙিন এই কোলাজগুলোর যে ভঙ্গি ও ঝোঁক, তার সঙ্গে সাদৃশ্য পাই গ্যালারিতে রাখা অন্যান্য মাধ্যমে করা শিল্পেরও। প্যাঁচানো তার দিয়ে করা জুইসের ভাস্কর্যের মধ্যেও পাওয়া যায় ঘন অরণ্য৷ মাধ্যমের ব্যবহারে জুইস যে কার্পণ্য করেননি, তা বোঝা যায়।
প্রদর্শনীতে আছে তাঁর রিলফ ধাঁচের পেইন্টিং। এখানে রঙের ব্যবহার তীব্র ও সাহসী। তা ছাড়া গ্যালারিতে আছে বনবিবিকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন পঙ্ক্তি। এসব পঙ্ক্তির অনেকগুলোই প্রাচীনকাল থেকে লোকমুখে ভেসে বেড়িয়েছে। তবে ব্যবহৃত এসব কবিতা প্রদর্শনীর ভাব ও রস বোঝার জন্য জরুরি হলেও তাদের উপস্থাপনে সেই গুরুত্ব ষোলো আনা প্রকাশ পেয়েছে কি না, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে।
কাঠ কেটে ভাস্কর্য গড়েছেন জুইস, যা দর্শকের জন্য একটি দৃশ্যগত সুখের কারণ হয়ে উঠেছে। কেননা এখানে শিল্পীর কারূতা এতই অভূতপূর্ব যে কাজটি চোখে লেগে থাকে।
প্রদর্শনীতে জুইস ব্যবহার করেছেন তাঁর কিছু পুরোনো কাজও। মানুষরূপী অবয়বের প্রাণী তাদের কাঁধে নিয়ে যাচ্ছে বিশালকায় একটি ফিমার; মানবদেহের সব থেকে বড় হাড়। বোঝাই যায়, এই হাড় জনমানুষের ওপর ঘটে যাওয়া বিশ্বব্যাপী নিপীড়ন ও শোকের ঘনঘটা। এই স্থাপনাশিল্পটি যেন শোকেরই শবযাত্রা, যেখানে আমাদের সুন্দরবন এবং তাকে ঘিরে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছে, সেটিও শামিল হয়েছে।
শিল্পকলা কিংবা শিল্পের ইতিহাসে মানুষ বিভিন্ন সময় বিচিত্র বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে। কিন্তু দিন শেষে সঠিক উত্তর পাওয়ার থেকে ভ্রমণটাই উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ‘বনবিবির খোঁজ’ প্রদর্শনীতে দর্শক বনবিবিকে কতটা পাবেন, বলা মুশকিল। তবে এখানে শিল্পীর শিল্পবৈভব সম্পর্কে যে জোর ধারণা পাওয়া যায়, সেটা বলা বাহুল্য।
৪ তারিখে শুরু হওয়া প্রদর্শনীিটি চলবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে এটিএম বুথে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত পলাতক
গাজীপুরের শ্রীপুরে অধিক বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক নারী পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তা প্রহরীর বিরুদ্ধে।
সোমবার (১৬ জুন) সকালে ওই নারী শ্রমিকের বাবা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
রবিবার (১৫ জুন) সকালে শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামের এমসি বাজার এলাকায় তালহা স্পিনিং মিল সংলগ্ন একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ।
ভুক্তভোগী নারী স্থানীয় একটি কারখানায় ৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। অভিযুক্ত নিরাপত্তা প্রহরী মো. লিটন (৩৫) তালহা স্পিনিং মিল সংলগ্ন বুথে দায়িত্ব পালন করতেন।
লিটন ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার ডুবাইল গ্রামের মৃত আব্দুল আউয়ালের ছেলে। বর্তমানে তিনি মুলাইদ গ্রামের আতাব উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন এবং ফাস্ট সলিউশন লিমিটেড নামের একটি নিরাপত্তা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে চাকরি করতেন।
থানায় দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, এটিএম বুথে টাকা তোলার সূত্র ধরে এই নারী শ্রমিকের সঙ্গে পরিচয় হয় লিটনের। একপর্যায়ে লিটন ভুক্তভোগীকে ১২ হাজার টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রবিবার সকালে তার বাবার মোবাইলে ফোন করে ডেকে আনেন। সকাল ৬টার দিকে বুথে গেলে লিটন তাকে ভেতরে একটি ছোট কক্ষে বসিয়ে রাখেন এবং জানান যে, নতুন চাকরির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসে তার সাক্ষাৎকার নেবেন।
ভিকটিমের বাবা দুইবার মেয়ে চাকরির বিষয়ে খোঁজ নিলে লিটন জানান, চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক আছে। তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেব। এরপর আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে লিটন কক্ষে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি ফেরার পথে মেয়ে তার বাবাকে ঘটনাটি জানায়।
ঘটনার বিষয়ে ফাস্ট সলিউশন লিমিটেডের সুপারভাইজার মো. হানিফের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল বারিক জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অভিযুক্ত লিটন পলাতক থাকায় তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। দ্রুতই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন করা হয়েছে।
ঢাকা/রফিক/টিপু