স্মরণসভায় বক্তারা: মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ছিল পঙ্কজ ভট্টাচার্যের
Published: 24th, April 2025 GMT
দেশ এখন এক গভীর সংকটময় পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উদ্ধার ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য প্রগতিশীল বাম রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য আমৃত্যু এই ঐক্য গড়ার জন্য চেষ্টা করে গেছেন। বাম শক্তির ঐক্য গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার ঐক্য ন্যাপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আয়োজিত সভায় বক্তারা এই অভিমত দিয়েছেন। ঐক্য ন্যাপের আয়োজনে বিকেল চারটায় রমনা উদ্যানের টেনিস ফেডারেশনের পাশে দলীয় কার্যালয়ের সামনের চত্বরে এই সভা আয়োজন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আইনজীবী এম এ সবুর।
সভার শুরুতেই প্রয়াত নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্যসহ ১৯৫০ সালে এই দিনে রাজশাহী কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে গুলিতে নিহত শহীদ নেতারা এবং সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করা হয় ‘আগুনের পরশমণি’গানটি। তারপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে মঞ্চে রাখা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল—ঐক্য ন্যাপ, সিপিবি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী, কমরেড মণি সিংহ-ফরহাদ ট্রাস্ট, গণতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, গণফোরাম ও যুব ইউনিয়ন। পরিবারের পক্ষে ছিলেন বহ্নিশিখা পুরকায়স্থ।
পরে আলোচনায় সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বাম শক্তির ঐক্য গড়ে তোলার আলোচনার মধ্যে না থেকে ঐক্য গড়ার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পরিস্থিতি এখন এমন যে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর দেরি কারা উচিত নয়। পঙ্কজ ভট্টাচার্যের চরিত্রের একটি বড় গুণ ছিল একাগ্রতা। তাঁর মতো একাগ্র হয়ে কাজ করতে হবে।
জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনে আজ আয়োজিত সভায় বক্তারা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।
সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।
জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।