Samakal:
2025-09-17@21:25:31 GMT

অকুস্থলে চাহি দৃষ্টিপাত

Published: 25th, April 2025 GMT

অকুস্থলে চাহি দৃষ্টিপাত

ম্যালেরিয়া লইয়া উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা অদ্যাবধি দূরীভূত হইল না। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ১৩ জেলায় প্রাণঘাতী এই রোগটির আধিক্য বর্তমান। তন্মধ্যে বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলায় আক্রান্ত ৮৮ শতাংশের অধিবাস। দেশে গত বৎসর ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয় ১৩ সহস্রাধিক জনের। তন্মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের উক্ত দুই জেলায় শনাক্ত হয় সাড়ে ১১ সহস্র রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালে ম্যালেরিয়ায় ছয়জনের মৃত্যু হয়। শনাক্ত হয় ১৬ সহস্র ৬৭৭ রোগী। এই হিসাবে গত বৎসর রোগীর সংখ্যা হ্রাস পাইয়াছে ২০ শতাংশের কিঞ্চিদধিক। তবে ইহাতে আশ্বস্ত হইবার কিছু নাই। কারণ, অধিদপ্তরের হিসাবমতে, ২০২১ সালে ম্যালেরিয়ায় শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৭ সহস্রাধিক এবং এ রোগে মৃত্যুবরণ করে ৯ জন। ২০২২ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা রীতিমতো লম্ফ দিয়া ১৮ সহস্রাধিকে উপনীত; মৃত্যুবরণ করে ১৪ জন। সান্ত্বনার বিষয়, ৮৮ শতাংশ ম্যালেরিয়া রোগী দুই জেলার। অর্থাৎ রোগটি নির্দিষ্ট এলাকায় আবদ্ধ, যে কোনো সংক্রামক রোগ নির্মূলের জন্য যাহা অত্যন্ত সহায়ক। তৎসহিত এই প্রশ্নও উত্থাপন করা যায়, এতৎসত্ত্বেও রোগটি নির্মূল করা যাইতেছে না কেন? আমরা জানি, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব হইতে ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করিতেছে। বাংলাদেশে একই লক্ষ্য অর্জনের অঙ্গীকার করিয়াছে ২০৩০ সালের মধ্যে। বিগত সময়ের অনুরূপ ধারায় কার্যক্রম চলিলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন দুরূহ হইবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলিতেছে, যে ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাধান্য, সেই জেলাগুলি হয় পার্বত্যাঞ্চলে অথবা সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত। ইহাও সত্য, পার্বত্যাঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি এবং তথাকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রার বিশেষ ধরনের কারণে রোগ নির্মূলে সমতল অঞ্চলের কার্যবিধি তথায় প্রযোজ্য নয়। সীমান্তের দুই পারের মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে শৈথিল্য থাকায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলসমূহেও রোগ নিয়ন্ত্রণবিধি প্রত্যাশা অনুযায়ী কার্যকর হয় না। তবে পার্বত্য ও সীমান্ত অঞ্চলে সাধারণত দরিদ্র মানুষের বসবাস অধিক হইবার কারণে উহারা চাহিদানুযায়ী সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাসমূহের বিশেষ মনোযোগ পাইতেছে কিনা, উহাও অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।

ম্যালেরিয়া নির্মূলে পার্বত্য ও সীমান্ত অঞ্চলের গ্রামগুলির দিকে বিশেষ দৃষ্টিদান প্রয়োজন এই কারণে, রোগটি যে কোনো সময় আপাত-নিরাপদ অঞ্চলেও সম্প্রসারিত হইতে পারে। ইহা সর্বজনবিদিত, দেশে মশকবাহিত রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া অন্যতম। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশক এই রোগের জীবাণু ছড়ায়। বাংলাদেশে মোট ৩৬ প্রজাতির অ্যানোফিলিস মশক দেখা যায়, যেগুলির মধ্যে সাতটি প্রজাতি ম্যালেরিয়ার বিস্তারে বিশেষ পটু। বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যালেরিয়ার এমনও ধরন রহিয়াছে, যাহার কারণে শরীরে তীব্র রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়। কিডনি, লিভার, ফুসফুস অকার্যকর হইয়া পড়ে। গুরুতর পর্যায়ে অচেতন হইয়া মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়ে রোগী। প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স নামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির বারবার ম্যালেরিয়া হইতে পারে। এমনকি ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চল হইতে নিরাপদ অঞ্চলে প্রত্যাবর্তনের দীর্ঘকাল পরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হইবার শঙ্কা থাকিয়া যায়। বলা হইতে পারে, বিজ্ঞানের কল্যাণে ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিকার এখন দুরূহ নহে। অস্বীকার করা যাইবে না, কোনো ম্যালেরিয়ার ঔষধ বহু দেশেই অকার্যকর হইয়া পড়িয়াছে, যদ্রূপ আমাদের দেশেও অতি ও অপরিকল্পিত ব্যবহারের কারণে কোনো জীবন রক্ষাকারী ঔষধ একই পরিণতি বরণ করিয়াছে। এহেন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘাতক ব্যাধি যক্ষ্মার ক্ষেত্রে ঘটিয়াছে; ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেও ঘটা অসম্ভব নহে। আর যে কোনো রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধই উত্তম– কে না জানে!

ম্যালেরিয়া সহজেই প্রতিরোধযোগ্য রোগ। মশকের কামড় হইতে মুক্ত থাকিলেই এই রোগে আক্রান্ত হইবার ঝুঁকি হ্রাস পায়। এতদ্বিষয়ে সরকারের যদ্রূপ দায়িত্ব রহিয়াছে, তদ্রূপ জনসচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক ঔষধ এবং টিকা ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চলে সহজলভ্য করাও জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হইব র সহস র

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।

আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগে

এ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।

সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।

এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।

আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ