Samakal:
2025-06-16@08:26:07 GMT

অকুস্থলে চাহি দৃষ্টিপাত

Published: 25th, April 2025 GMT

অকুস্থলে চাহি দৃষ্টিপাত

ম্যালেরিয়া লইয়া উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা অদ্যাবধি দূরীভূত হইল না। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ১৩ জেলায় প্রাণঘাতী এই রোগটির আধিক্য বর্তমান। তন্মধ্যে বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলায় আক্রান্ত ৮৮ শতাংশের অধিবাস। দেশে গত বৎসর ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয় ১৩ সহস্রাধিক জনের। তন্মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের উক্ত দুই জেলায় শনাক্ত হয় সাড়ে ১১ সহস্র রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালে ম্যালেরিয়ায় ছয়জনের মৃত্যু হয়। শনাক্ত হয় ১৬ সহস্র ৬৭৭ রোগী। এই হিসাবে গত বৎসর রোগীর সংখ্যা হ্রাস পাইয়াছে ২০ শতাংশের কিঞ্চিদধিক। তবে ইহাতে আশ্বস্ত হইবার কিছু নাই। কারণ, অধিদপ্তরের হিসাবমতে, ২০২১ সালে ম্যালেরিয়ায় শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৭ সহস্রাধিক এবং এ রোগে মৃত্যুবরণ করে ৯ জন। ২০২২ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা রীতিমতো লম্ফ দিয়া ১৮ সহস্রাধিকে উপনীত; মৃত্যুবরণ করে ১৪ জন। সান্ত্বনার বিষয়, ৮৮ শতাংশ ম্যালেরিয়া রোগী দুই জেলার। অর্থাৎ রোগটি নির্দিষ্ট এলাকায় আবদ্ধ, যে কোনো সংক্রামক রোগ নির্মূলের জন্য যাহা অত্যন্ত সহায়ক। তৎসহিত এই প্রশ্নও উত্থাপন করা যায়, এতৎসত্ত্বেও রোগটি নির্মূল করা যাইতেছে না কেন? আমরা জানি, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব হইতে ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করিতেছে। বাংলাদেশে একই লক্ষ্য অর্জনের অঙ্গীকার করিয়াছে ২০৩০ সালের মধ্যে। বিগত সময়ের অনুরূপ ধারায় কার্যক্রম চলিলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন দুরূহ হইবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলিতেছে, যে ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাধান্য, সেই জেলাগুলি হয় পার্বত্যাঞ্চলে অথবা সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত। ইহাও সত্য, পার্বত্যাঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি এবং তথাকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রার বিশেষ ধরনের কারণে রোগ নির্মূলে সমতল অঞ্চলের কার্যবিধি তথায় প্রযোজ্য নয়। সীমান্তের দুই পারের মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে শৈথিল্য থাকায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলসমূহেও রোগ নিয়ন্ত্রণবিধি প্রত্যাশা অনুযায়ী কার্যকর হয় না। তবে পার্বত্য ও সীমান্ত অঞ্চলে সাধারণত দরিদ্র মানুষের বসবাস অধিক হইবার কারণে উহারা চাহিদানুযায়ী সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাসমূহের বিশেষ মনোযোগ পাইতেছে কিনা, উহাও অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।

ম্যালেরিয়া নির্মূলে পার্বত্য ও সীমান্ত অঞ্চলের গ্রামগুলির দিকে বিশেষ দৃষ্টিদান প্রয়োজন এই কারণে, রোগটি যে কোনো সময় আপাত-নিরাপদ অঞ্চলেও সম্প্রসারিত হইতে পারে। ইহা সর্বজনবিদিত, দেশে মশকবাহিত রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া অন্যতম। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশক এই রোগের জীবাণু ছড়ায়। বাংলাদেশে মোট ৩৬ প্রজাতির অ্যানোফিলিস মশক দেখা যায়, যেগুলির মধ্যে সাতটি প্রজাতি ম্যালেরিয়ার বিস্তারে বিশেষ পটু। বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যালেরিয়ার এমনও ধরন রহিয়াছে, যাহার কারণে শরীরে তীব্র রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়। কিডনি, লিভার, ফুসফুস অকার্যকর হইয়া পড়ে। গুরুতর পর্যায়ে অচেতন হইয়া মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়ে রোগী। প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স নামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির বারবার ম্যালেরিয়া হইতে পারে। এমনকি ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চল হইতে নিরাপদ অঞ্চলে প্রত্যাবর্তনের দীর্ঘকাল পরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হইবার শঙ্কা থাকিয়া যায়। বলা হইতে পারে, বিজ্ঞানের কল্যাণে ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিকার এখন দুরূহ নহে। অস্বীকার করা যাইবে না, কোনো ম্যালেরিয়ার ঔষধ বহু দেশেই অকার্যকর হইয়া পড়িয়াছে, যদ্রূপ আমাদের দেশেও অতি ও অপরিকল্পিত ব্যবহারের কারণে কোনো জীবন রক্ষাকারী ঔষধ একই পরিণতি বরণ করিয়াছে। এহেন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘাতক ব্যাধি যক্ষ্মার ক্ষেত্রে ঘটিয়াছে; ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেও ঘটা অসম্ভব নহে। আর যে কোনো রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধই উত্তম– কে না জানে!

ম্যালেরিয়া সহজেই প্রতিরোধযোগ্য রোগ। মশকের কামড় হইতে মুক্ত থাকিলেই এই রোগে আক্রান্ত হইবার ঝুঁকি হ্রাস পায়। এতদ্বিষয়ে সরকারের যদ্রূপ দায়িত্ব রহিয়াছে, তদ্রূপ জনসচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক ঔষধ এবং টিকা ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চলে সহজলভ্য করাও জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হইব র সহস র

এছাড়াও পড়ুন:

জীবনের অপচয় রোধ জরুরি

দেশে পানিতে ডুবিয়া শিশুর প্রাণহানির যেই চিত্র শনিবার সমকালের এক প্রতিবেদনে উঠিয়া আসিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ঈদুল আজহার ছুটি আরম্ভ হইবার পূর্বের ১০ দিবসেই বিভিন্ন স্থানে ১৫ জন পানিতে ডুবিয়া প্রাণ হারাইয়াছে, যাহাদের মধ্যে ১৩ জন ছিল শিশু। উপরন্তু, ঈদুল ফিতরের পূর্বাপর ১২ ছুটিতে মোট ৪৯ জন অনুরূপভাবে প্রাণ হারাইয়াছে, যথায় শিশুর সংখ্যা ৪৭। এদিকে ফাউন্ডেশন ফর ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ঈদুল ফিতরে ৫৮ জন ও ঈদুল আজহায় ৬৫ শিশু পানিতে ডুবিয়া প্রাণ হারাইয়াছিল। এই ধারণা অমূলক নহে যে ঈদের ছুটিতে শহরবাসী অনেকে ছুটিয়া যায় গ্রামাঞ্চলে, যেইখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ শিশুদের আকৃষ্ট করিয়া থাকে। তাহারা পানির আশপাশে খেলার বিপদ সম্পর্কে সচেতন থাকে না, জানে না খাল-বিল, ডোবা-পুকুর কতটা বিপজ্জনক পরিণতি ডাকিয়া আনিতে পারে। গ্রামের বিস্তৃত ও অপেক্ষাকৃত নির্জন পরিবেশে শিশুদের তদারকির অভাবও প্রকট। অভিভাবকগণ সাধারণত গৃহকর্মে ব্যস্ত থাকেন, তেমন নজর থাকে না শিশুর গতিবিধির উপর। এই সকল কিছু মিলাইয়া সংশ্লিষ্ট শিশুর জন্য সৃষ্টি হয় মৃত্যুফাঁদ। দুর্ভাগ্যজনক হইল, এই সকল বিয়োগান্তক ঘটনার কারণে গ্রামের মুক্ত পরিবেশে অনেক পরিবারে ছুটির উচ্ছ্বাস নিমেষে মাটি হইয়া যাইবার পরও জনচেতনতা পরিলক্ষিত হইতেছে না। ফলস্বরূপ, এহেন হৃদয়বিদারক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়াই চলিয়াছে।

প্রতিটি শিশুর প্রাণই মূল্যবান। একটি জীবন অকালে ঝরিয়া যাইবার অর্থ একটি সম্ভাবনার অপমৃত্যু, একটি ভবিষ্যতের হারাইয়া যাওয়া। এই ক্ষতি শুধু সংশ্লিষ্ট পরিবারের নহে, সম্পূর্ণ সমাজের এবং রাষ্ট্রের। অথচ এহেন মৃত্যু রোধে রাষ্ট্রীয়ভাবেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নহে। প্রতিবেদনমতে, ২০১১ সালের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে পানিতে ডুবিয়া শিশুমৃত্যুর ঘটনাকে জনস্বাস্থ্য সমস্যারূপে চিহ্নিত করিবার পর ২০২২ সালে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮ সহস্র কমিউনিটিবেজড চাইল্ড কেয়ার সেন্টার স্থাপনের ঘোষণা দেয়। উদ্দেশ্য ছিল এক হইতে পাঁচ বৎসর বয়সী শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবেশ ও সাঁতার শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি। বাস্তবে কয়েকটি প্রশিক্ষণ ব্যতীত কিছুই হয় নাই। ২০১৫ সালে স্কুল-কলেজে সাঁতার শিখাইবার নির্দেশনা প্রদান করা হইলেও তাহা এখনও উপেক্ষিত। জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা নির্ধারিত থাকিলেও বাস্তবায়নের চিত্র প্রায় শূন্য। এই অবস্থায় দ্য সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এবং আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় ধরা পড়িয়াছে, দেশে প্রতিবৎসর প্রায় ১৪ সহস্র শিশু পানিতে ডুবিয়া মারা যায়। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৪০টি শিশু প্রাণ হারায়। তাদের ৭৫ শতাংশের বয়স পাঁচ বৎসরের নিচে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে পানিতে ডুবিয়া প্রতিবৎসর আহত হয় অন্তত এক লক্ষ শিশু। ইহাদের মধ্যে প্রায় ১৩ সহস্র পঙ্গু হইয়া যায়। পরিণামে ঐ শিশুরা পরিবারের পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজের বোঝা হইয়া দাঁড়ায়।

বিশেষজ্ঞগণ বলিয়াছেন, দেশে অপঘাতজনিত শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ পানিতে ডুবিয়া যাওয়া। এমনকি নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় যত শিশু মৃত্যুবরণ করে, ততোধিক শিশু মারা যায় পানিতে ডুবিয়া। এতদসত্ত্বেও এই প্রাণহানি লইয়া কোনো তথ্যপ্রবাহ ব্যবস্থা নাই, অতএব সরকারি কোনো তথ্যভান্ডারও গড়িয়া উঠে নাই। অথচ ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তথ্যাদি নথিভুক্তি শুরু হইলে বৎসরান্তে ইহার অন্তত হিসাব মিলিত। বিলম্বে হইলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বোধোদয় ঘটুক, ইহাই আমাদের প্রত্যাশা। এই বিষয়ে প্রয়োজনে ইউনিসেফের ন্যায় সংস্থাসমূহকেও কাজে লাগানো যায় বলিয়া আমরা মনে করি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জীবনের অপচয় রোধ জরুরি