ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকারের মতোই প্রেমিক টেন্ডুলকার এক অবিশ্বাস্য ব্যতিক্রম। ১৭ বছর বয়সে যে নারীর প্রেমে পড়েছিলেন, এই ৫২ বছর বয়সে এসেও তাঁর সঙ্গেই সুখের সংসার। ভারত তো বটেই, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট তারকার খ্যাতি উপভোগ করেছেন একটা সময়, কিন্তু কখনোই অন্য কোনো নারী তাঁকে টানেনি, পারেনি টলাতে। টেন্ডুলকারের জীবনের সেই প্রথম ও শেষ প্রেমের নাম অঞ্জলি। টেন্ডুলকারের ভাষায় যার সঙ্গে হয়েছে তাঁর জীবনের সেরা জুটি! কীভাবে প্রেমে পড়েছিলেন দুজন, পাঁচ বছর কীভাবে লুকিয়ে প্রেম করেছেন, তারপর কীভাবে হলো দুজনের বিয়ে? উত্তর আছে টেন্ডুলকারের আত্মজীবনী প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে-তে।কী লিখেছেন টেন্ডুলকার

আমি তখন সবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের একটু জায়গা বানানোর চেষ্টা করছি। সেই সময়, ১৯৯০ সালের আগস্টে আমার জীবন একটা নাটকীয় মোড় নিল। অঞ্জলির সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হলো। অঞ্জলি—পরে যিনি আমার স্ত্রীও হয়েছেন। আমার জীবনের সেরা জুটিটার শুরু ওখান থেকে।

১৯৯০ সালে ইংল্যান্ড সফর থেকে ফিরছিলাম। মুম্বাই বিমানবন্দরে নেমে ব্যাগ নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। হঠাৎ ভিউইং গ্যালারিতে চোখ পড়ল। অসাধারণ সুন্দরী এক মেয়ে নিচে তাকিয়ে আছে। আমার দিকেই তাকিয়ে আছে বলে মনে হচ্ছিল।

তখনো জানতাম না, এই মেয়েই পরে আমার জীবনসঙ্গী হবে। ওর এক বান্ধবী ড.

অপর্ণা সন্তনমের সঙ্গে সেদিন দাঁড়িয়ে ছিল। অপর্ণা এখন মুম্বাইয়ের বিখ্যাত চর্মরোগবিশেষজ্ঞ। ক্ষণিকের জন্য চোখাচোখি হলো অঞ্জলির সঙ্গে, তারপরই সে যেন হাওয়া হয়ে গেল!

বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় আবার দুজনকে দেখলাম। অঞ্জলি একটা কমলা রঙের টি-শার্ট আর নীল জিনস পরে গেট থেকে দৌড়ে বের হচ্ছিল। কেন জানি মনে হচ্ছিল, আমার পেছনেই ছুটে আসছে। শুধু তা–ই নয়, শুনলাম সে চিৎকার করে বলছে, ‘উফফ, কী মিষ্টি ছেলে!’

আরও পড়ুনবিস্ময়বালকের আজ ৫২: রূপকথার শচীন, শচীনের রূপকথা ২৪ এপ্রিল ২০২০

আমার অস্বস্তি লাগছিল। লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। কারণ, জানতাম, অজিত আর নিতিন (টেন্ডুলকারের দুই ভাই) বাইরে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা দেখলে কী ভাববে! ছোটবেলার বন্ধু সুনীল হর্ষে আমার সঙ্গেই ছিল। ও আমার কানে ফিসফিস করে বলল, ‘খুব সুন্দরী একটা মেয়ে তোর নাম ধরে ডাকছে, তোর সঙ্গে দেখা করতে চাইছে।’
আমি তো আড়চোখে আগেই দেখেছি। মেয়েটাকে ভালোও লেগেছে। কিন্তু সুনীলকে বললাম, ‘অজিত আর নিতিন আশপাশে থাকলে আমার পক্ষে মেয়েটার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব নয়।’

অঞ্জলি আর আমি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫—এই পাঁচ বছর প্রেম করেছি। সেই প্রেম পরে বাগ্‌দান এবং বিয়েতেও গড়িয়েছে। অথচ আমাদের দুজনের ব্যাকগ্রাউন্ড আকেবারে আলাদা ছিল। অঞ্জলি অর্ধেক গুজরাটি, অর্ধেক ইংরেজ। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের খুব ধনী পরিবারের মেয়ে। ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেছে, তারপর জেজে হাসপাতালে ডাক্তারি পড়েছে। ওর কথা বলার ধরন খুব সুন্দর ছিল।

আমার বেড়ে ওঠা আর ওর বেড়ে ওঠা একেবারে আলাদা। ওদের পরিবারে পাশ্চাত্য পোশাক পরাটা ছিল সাধারণ ব্যাপার। আমার পরিবারের পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। আমি তো বলতে গেলে আমার পাড়ার বাইরেই কখনো যাইনি, সব বন্ধুই ছিল ক্রিকেটজগতের।

স্ত্রী অঞ্জলির সঙ্গে শচীন টেন্ডুলকার

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট ন ড লক র র ন ট ন ড লক র আম র জ আম র প র জ বন

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান কি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পথে?

গত সপ্তাহে কাশ্মীরের পেহেলগামের একটি মনোরম তৃণভূমিতে ২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হলো। মূলত ধর্মের ভিত্তিতে ঘাতকরা তাদের বেছে বেছে হত্যা করে। আমরা ঘটনার হৃদয়বিদারক সাক্ষ্য পড়েছি। কীভাবে কাছ থেকে পুরুষদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে– পরিবারের সদস্যদের সেই দৃশ্য দেখতে হয়েছে। এতে প্রায় সবাই ছিল হিন্দু। এসব হত্যাকাণ্ড ছিল অযৌক্তিক। এ ছাড়া আমরা পড়েছি, কীভাবে কাশ্মীরি ট্যুরিস্ট গাইড ও শিশুদের বিনোদন রাইডের পনি অপারেটররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক ভারতীয় পর্যটককে উদ্ধার করেছিলেন।

এই হামলা কারা ঘটিয়েছে, তা মৃতদের পরিবারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়– সেটা পাকিস্তানি কিংবা স্থানীয় কাশ্মীরি হোক, অথবা উভয় সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। তাদের জীবন নিঃশেষ হয়ে গেছে। পাশাপাশি ভারত সরকারের চতুরতার সঙ্গে গড়ে তোলা স্বাভাবিকতার মুখোশও ধ্বংস হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটনের উত্থানের ফলে এই মুখোশ টিকেছিল। 

আমরা আগেও অনেকবার এখানে এসেছি। প্রায় চার দশক ধরে কাশ্মীর রক্তপাতের চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝে মাঝে শান্ত থাকে। স্বাভাবিকতার জয়ধ্বনিপূর্ণ ঘোষণা এবং শান্তির সঙ্গে নীরবতার ইচ্ছাকৃত মিশ্রণের মধ্যে কেটেছে, যাতে এখানে আবারও ভ্রমণে যাওয়া যায়। ২০১৯ সালেও এখানে বিরাজমান স্বাভাবিক অবস্থা এবং সংঘাতের অবসানের কথা বলা হয়েছিল। 

কিন্তু সেই ভাবমূর্তি ভেঙে যায় ফেব্রুয়ারিতে, যখন জইশ-ই-মোহাম্মদ নামে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী একটি আধাসামরিক বাহিনীর গাড়িতে আক্রমণ করে। এতে ৪০ ভারতীয় সৈন্য হত্যা করা হয় এবং দুই দেশকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। ১৯৪৮ সাল থেকে তারা যে তিনটি যুদ্ধ করেছে, তাতে বহু দিক থেকে দেশ দুটি সর্বদা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ছিল। নির্দিষ্ট সময় পরপর তারা যুদ্ধের চারপাশে ঘুরতে থাকে; তারপর ফিরে আসে এবং অস্ত্র ও বাগ্‌বিতণ্ডা চলে। 

এই বিপর্যয়কর বৈপরীত্যের মধ্য দিয়ে একটি প্রজন্ম এখন শেষের দিকে, যার বেশির ভাগ ক্ষতি কাশ্মীরিদের গুনতে হয়েছে। তাদের ৭০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে, প্রায় ১০ হাজার হয়েছে নিখোঁজ এবং ২ লাখের বেশি কাশ্মীরি পণ্ডিত (হিন্দু) বাস্তুচ্যুত। এর কারণ ১৯৮৯ সালে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং বোমা বিস্ফোরণ বা পেহেলগামের মতো হামলায় ভারতীয় নাগরিকের নিহত হওয়ার ঘটনা। এটা বলা অযৌক্তিক– এ ধরনের সহিংসতা শূন্য থেকে উদ্ভূত। কারণ ব্যাপক সহিংসতার উৎস আমাদের ইতিহাস ও রাজনীতি উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে। যেমন ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় ভিত্তিতে দেশভাগের এখনও জ্বলন্ত ক্ষত এবং কাশ্মীর নিয়ে বিরোধের অমীমাংসিত প্রকৃতি।

২০১৮ সাল থেকে ভারত দিল্লির নিযুক্ত করা গভর্নরের মাধ্যমে সরাসরি এ অঞ্চল শাসন করে আসছে। পরের বছর মোদি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের সীমিত স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে। যদিও এখন একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী আছেন, তবু পদকে কার্যকরভাবে নামমাত্র করে তোলা হয়েছে। সরকারের এসব সিদ্ধান্ত এতটাই বিকৃত হয়ে ওঠে, এই মাসের শুরুতে একটি উচ্চস্তরের নিরাপত্তা সভায় বর্তমান ক্ষমতাসীন এক কাশ্মীরিকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। অঞ্চলটির ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে ভারত কাশ্মীরের অভ্যন্তরে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান সীমান্তে প্রায় পাঁচ লাখ সৈন্য নিয়ে একটি বিশাল সামরিক বাহিনী বলবৎ রেখেছে। স্থানীয় বা পাকিস্তানি পৃষ্ঠপোষকতায় সশস্ত্র গোষ্ঠীদের জন্য এসব উর্বর ভূমি অবাক করার মতো কিছু নয়।

মির্জা ওয়াহিদ: ইংল্যান্ডভিত্তিক কাশ্মীরের লেখক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

সম্পর্কিত নিবন্ধ