‘উফফ, কী মিষ্টি ছেলে’—শুনে কেন লজ্জায় লাল হয়েছিলেন টেন্ডুলকার
Published: 27th, April 2025 GMT
ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকারের মতোই প্রেমিক টেন্ডুলকার এক অবিশ্বাস্য ব্যতিক্রম। ১৭ বছর বয়সে যে নারীর প্রেমে পড়েছিলেন, এই ৫২ বছর বয়সে এসেও তাঁর সঙ্গেই সুখের সংসার। ভারত তো বটেই, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট তারকার খ্যাতি উপভোগ করেছেন একটা সময়, কিন্তু কখনোই অন্য কোনো নারী তাঁকে টানেনি, পারেনি টলাতে। টেন্ডুলকারের জীবনের সেই প্রথম ও শেষ প্রেমের নাম অঞ্জলি। টেন্ডুলকারের ভাষায় যার সঙ্গে হয়েছে তাঁর জীবনের সেরা জুটি! কীভাবে প্রেমে পড়েছিলেন দুজন, পাঁচ বছর কীভাবে লুকিয়ে প্রেম করেছেন, তারপর কীভাবে হলো দুজনের বিয়ে? উত্তর আছে টেন্ডুলকারের আত্মজীবনী প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে-তে।কী লিখেছেন টেন্ডুলকার
আমি তখন সবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের একটু জায়গা বানানোর চেষ্টা করছি। সেই সময়, ১৯৯০ সালের আগস্টে আমার জীবন একটা নাটকীয় মোড় নিল। অঞ্জলির সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হলো। অঞ্জলি—পরে যিনি আমার স্ত্রীও হয়েছেন। আমার জীবনের সেরা জুটিটার শুরু ওখান থেকে।
১৯৯০ সালে ইংল্যান্ড সফর থেকে ফিরছিলাম। মুম্বাই বিমানবন্দরে নেমে ব্যাগ নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। হঠাৎ ভিউইং গ্যালারিতে চোখ পড়ল। অসাধারণ সুন্দরী এক মেয়ে নিচে তাকিয়ে আছে। আমার দিকেই তাকিয়ে আছে বলে মনে হচ্ছিল।
তখনো জানতাম না, এই মেয়েই পরে আমার জীবনসঙ্গী হবে। ওর এক বান্ধবী ড.
বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় আবার দুজনকে দেখলাম। অঞ্জলি একটা কমলা রঙের টি-শার্ট আর নীল জিনস পরে গেট থেকে দৌড়ে বের হচ্ছিল। কেন জানি মনে হচ্ছিল, আমার পেছনেই ছুটে আসছে। শুধু তা–ই নয়, শুনলাম সে চিৎকার করে বলছে, ‘উফফ, কী মিষ্টি ছেলে!’
আরও পড়ুনবিস্ময়বালকের আজ ৫২: রূপকথার শচীন, শচীনের রূপকথা ২৪ এপ্রিল ২০২০আমার অস্বস্তি লাগছিল। লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। কারণ, জানতাম, অজিত আর নিতিন (টেন্ডুলকারের দুই ভাই) বাইরে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা দেখলে কী ভাববে! ছোটবেলার বন্ধু সুনীল হর্ষে আমার সঙ্গেই ছিল। ও আমার কানে ফিসফিস করে বলল, ‘খুব সুন্দরী একটা মেয়ে তোর নাম ধরে ডাকছে, তোর সঙ্গে দেখা করতে চাইছে।’
আমি তো আড়চোখে আগেই দেখেছি। মেয়েটাকে ভালোও লেগেছে। কিন্তু সুনীলকে বললাম, ‘অজিত আর নিতিন আশপাশে থাকলে আমার পক্ষে মেয়েটার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব নয়।’
অঞ্জলি আর আমি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫—এই পাঁচ বছর প্রেম করেছি। সেই প্রেম পরে বাগ্দান এবং বিয়েতেও গড়িয়েছে। অথচ আমাদের দুজনের ব্যাকগ্রাউন্ড আকেবারে আলাদা ছিল। অঞ্জলি অর্ধেক গুজরাটি, অর্ধেক ইংরেজ। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের খুব ধনী পরিবারের মেয়ে। ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেছে, তারপর জেজে হাসপাতালে ডাক্তারি পড়েছে। ওর কথা বলার ধরন খুব সুন্দর ছিল।
আমার বেড়ে ওঠা আর ওর বেড়ে ওঠা একেবারে আলাদা। ওদের পরিবারে পাশ্চাত্য পোশাক পরাটা ছিল সাধারণ ব্যাপার। আমার পরিবারের পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। আমি তো বলতে গেলে আমার পাড়ার বাইরেই কখনো যাইনি, সব বন্ধুই ছিল ক্রিকেটজগতের।
স্ত্রী অঞ্জলির সঙ্গে শচীন টেন্ডুলকারউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট ন ড লক র র ন ট ন ড লক র আম র জ আম র প র জ বন
এছাড়াও পড়ুন:
এআই দিয়ে শাড়ি পরা ছবি এখন ভাইরাল, সবাই চলে যাচ্ছেন ১৯৯০ দশকে
পুরোনো দিনের অনেক স্টাইল বারবার ফিরে আসে। কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাড়ি পরা অনেক নারীর দারুণ সব ছবি ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। বাস্তবে কেউ শাড়ি না পরেই এআই টুল ব্যবহার করে ১৯৯০ দশকের নারীদের মতো শাড়ি পরার ছবি প্রকাশ করছেন। রেট্রো লুকের এই ছবির জাদু দেখাচ্ছে গুগলের জেমিনি এআই টুল। জেমিনির ন্যানো বানানা টুলের মাধ্যমে ভিনটেজ শাড়ি এআই ট্রেন্ড এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সয়লাব। ভিনটেজ শাড়ি এআই প্রম্পট ব্যবহার করে বিভিন্ন ছবি তৈরি করছেন ব্যবহারকারীরা। ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামে ভিনটেজ শাড়ি এআই ট্রেন্ড এখন খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
যেভাবে তৈরি হচ্ছে শাড়ি পরা এআই ছবি
ন্যানো বানানা হলো গুগলের জেমিনি এআইয়ের একটি সৃজনশীল টুল। এই টুল ব্যবহারকারীরা সাধারণ ছবিকে নিজের মতো করে রূপান্তরিত করতে পারছেন। একটি ছবি প্রকাল করে বিস্তারিত প্রম্পট দিয়ে ব্যবহারকারীরা এআইকে বাস্তবসম্মত ছবি তৈরি করতে কমান্ড দিচ্ছেন। ন্যানো বানানার মাধ্যমে তৈরি ছবি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্সের মতো প্ল্যাটফর্মে। ছবি তৈরির জন্য প্রথমে জেমিনির ওয়েবসাইটে (https://gemini.google.com) ছবি আপলোড করতে হবে। তারপর ইংরেজিতে প্রম্পট লিখে দিতে হবে। বিভিন্ন ব্যবহারকারীর সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, আপাতত ইংরেজি কমান্ডে বেশ ভালো ছবি তৈরি করতে পারছে জেমিনির ব্যানানা টুল।
হঠাৎ ভাইরাল হলো কেন
২-৩ দিন ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ১৯৯০ দশকের মতো করে শাড়ি পরার ছবি প্রকাশ করছেন। ফেসবুকে নিজের দারুণ সব ছবি প্রকাশ করছেন এনজিও কর্মী সুমাইয়া সুমি। তিনি জানান, ‘আমি এআই টুল দিয়ে শাড়ি পরা ছবি তৈরি করেছি। গুগলের জেমিনি টুল, ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি দিয়েই ছবি তৈরি করেছি। আমার ফেসবুকে মনিটাইজেশন চালু আছে। যে কারণে ট্রেন্ডিং কোনো বিষয়ে ছবি তুললে ভালো রিচ মানে ছবি অনেকের কাছে পৌঁছে যায়। শাড়ি পরা ছবিসহ স্কাই জাম্পিংয়ের ছবি, আগের সময়কার নারীদের মতো ছবি তুলেছি। আমাকে কেমন দেখাবে, তা পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রম্পট ব্যবহার করে ছবি তৈরি করেছি। বেশ ভালোই লাগছে নিজেকে অন্যভাবে দেখতে। সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে এবং নতুন কিছু করা আমার একটি পছন্দের কাজ।’
আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ফাহিমা আহমেদ জানান, ‘ফেসবুকে মাঝেমধ্যেই দারুণ কিছু ট্রেন্ড দেখি। এবার জেমিনির ব্যানানা এআই টুল দিয়ে ছবি তৈরি করেছি। আমাদের কল্পনায় আমরা কেমন, তা এআই দিয়ে তৈরি করার চেষ্টার সুযোগ মিলছে। এআই আমাদের প্রম্পট অনুযায়ী আমি কীভাবে নিজেকে দেখতে চাই, তার একটা ছবি তৈরি করে দিচ্ছে। আমি যেমনটা নিজেকে কল্পনায় দেখছি, তা–ই এআই তৈরি করে দিচ্ছে। জেমিনি আপাতত ‘লিমিটেড’ সুযোগ দিচ্ছে এমনভাবে ছবি তৈরির জন্য।’
নতুন আঙ্গিক তৈরি করছে এআই
ক্লিনিক্যাল রিসার্চার সুমাইয়া আতিনা খান জানান, ‘আমি নানা আঙ্গিকে ছবি তৈরি করেছি। ভিন্ন ধরনের লুক দিয়েছি প্রম্পটকে, আর মজার মজার সব ছবি পেয়েছি। হাতে ফুল নিয়ে, ডানে–বাঁয়ে তাকিয়ে অনেক স্টাইল করে ছবি তৈরি করেছি। টিনএজার থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী নারীদের এমন ছবি তৈরি করতে দেখছি। এখানে একটা বিষয় হচ্ছে, আমরা যাঁরা ছবি তৈরি করছি, তাঁরা যেভাবে লিখছেন সেইভাবেই এআই ছবি তৈরি করছে। এআই আমাদের কল্পনাকে কমান্ডের মাধ্যমে অনুসরণ করছে। এআই ও মানুষের দারুণ এক সংযোগ হচ্ছে এই ভাইরাল ট্রেন্ড। অনেক ব্যবহারকারীরা এত দিন এআই টুলস ব্যবহার থেকে দূরে ছিলেন, তাঁরা এই ট্রেন্ডের জন্য কিছুটা হলেও এআই ব্যবহারের চেষ্টা করছেন।’
নিজেকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার সুযোগ দিচ্ছে এআই
মাঝেমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট বা আধেয় ভাইরাল হয়। অধিকাংশ ভাইরাল ট্রেন্ড ইউরোপ বা আমেরিকাতেও বেশ আলোড়ন তৈরি করে। এবারে এআই দিয়ে শাড়ি পরা ছবির ভাইরাল ট্রেন্ড দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেই একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। যাঁরা শাড়ি চেনেন, সেই সব জনগোষ্ঠীর কাছে এই ট্রেন্ড দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে থাকেন চিকিৎসক রেহনুমা আবদুল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যেখানে থাকি, সেখানে কর্মব্যস্ততার কারণে শাড়ি পরা হয় না। আমি দেশে থাকতে বাসাতে শাড়ি পরতাম। প্রায় দুই বছরের জন্য শাড়ি পরা হচ্ছে না। এখানে সেই সুযোগ বা সংস্কৃতি নেই। এআই আমাকে অন্যভাবে সাজার সুযোগ করে দিয়েছে। আমি বেশ কয়েকটি ছবি তুলেছি। নানা রঙের শাড়ি, নানা রঙের আলোতে। কোনোটায় খোঁপায় ফুলও আছে। এটা বেশ অবাক লাগে আমার কাছে, এআই অবিকল একজন মানুষের ছবি তৈরি করতে পারে। বিভিন্ন প্রম্পট ব্যবহার করে নিজের সুন্দর সব ছবি তৈরি করেছি। আমি শাড়ি পরতে অনেক পছন্দ করি। যেকোনো নারীকে শাড়িতে সুন্দর লাগে বলে সবাই এই ট্রেন্ডের দিকে ঝুঁকছেন। বিভিন্ন প্রম্পট ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ছবি তৈরি করছি। বেশ আশ্চর্যজনক কাজই করছে এআই!’
আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ফ্যাশন ডিজাইনার নিশাত আনজুম জানান, ‘সাধারণ সময়ে আমাদের দেখতে যেমন লাগে, এআই সেই দেখার আঙ্গিকে পরিবর্তন আনছে নতুন এই ট্রেন্ডের মাধ্যমে। এখনকার জেন-জি প্রজন্ম ১৯৯০ দশকে নিজেদের রেট্রো লুকে কেমন লাগত, তা জানতে জেমিনি এআই টুলস ব্যবহার করছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, সাজগোজ কিংবা স্টাইলের জন্য অনেক সময় দিতে হয়, এখন ব্যস্ত জীবনে সেই সময় বা সুযোগ অনেক কম। এই সুযোগে এআই ব্যবহার করে নিজেকে কেমন লাগবে, তা দেখার চেষ্টা করছেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা।’