খেয়াঘাটের ইজারা প্রথা বাতিলের দাবিতে চরবাসীর সমাবেশ
Published: 27th, April 2025 GMT
পদ্মা নদীতে খেয়াঘাট ইজারা দেওয়ার প্রথা বাতিল করার দাবিতে রাজশাহীতে সমাবেশ করেছেন চরের বাসিন্দারা।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে বিশাল ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চর আলাতুলি ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার মানুষ অংশ নেন।
তারা বলছেন, ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়ো এই ইউনিয়ন দুটিতে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। পদ্মা পাড়ি দিতে তারা খেয়াঘাটের ঘাটিয়ালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ৫৪ বছর ধরে ঘাটিয়ালরা ঘাটের বাড়তি টোল আদায় করছেন। মালামাল পরিবহনে নেওয়া হয় অতিরিক্ত টাকা। তারা এখন থেকে ঘাটের ইজারা চান না। শুধু মাঝিরাই নৌকা চালাবেন ঘাটে।
কয়েকদিন ধরে শুধু চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের বাসিন্দারা এ দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। তারা গোদাগাড়ী উপজেলার ফুলতলা ভাটোপাড়া, বিদিরপুর এবং প্রেমতলী খেয়াঘাটের ইজারা বাতিলের দাবি জানাচ্ছিলেন। তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রবিবারের কর্মসূচিতে অংশ নেন চর আলাতুলির বাসিন্দারাও। তারাও এ চরে পারাপারের ভগবন্তপুর ও আলাতুলি ঘাটের ইজারা বাতিলের দাবি জানান।
মানববন্ধন চলাকালে অংশগ্রহণকারীরা ‘জেগেছে রে জেগেছে, চরবাসী জেগেছে’; ‘চাঁদাবাজের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘ঘাটের নামে চাঁদাবাজি, চলবে না চলবে না’; ‘ঘাটের ইজারা বাতিল করো, করতে হবে করতে হবে’; ‘আমরা মরি অত্যাচারে, প্রশাসন কেন এসি ঘরে’; ‘চরের মানুষ জিম্মি কেন, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘সংগ্রাম সংগ্রাম, ঘাট বাতিলের সংগ্রাম’সহ নানা ধরনের স্লোগান দেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল্লাহীল কাফি। তিনি বলেন, ‘‘ইজারাদাররা ঘাটের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে সাধারণ মানুষকে বছরের পর বছর হয়রানি করে আসছেন। সরকারি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আদায় করা হয়, নৌযান চলাচলে বাধা দেওয়া হয় এবং মাঝেমধ্যে চরবাসীকে মারধরের মতো ঘটনাও ঘটে। এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া হবে না। অবিলম্বে ইজারা প্রথা বাতিল করতে হবে।’’
মোশারফ হোসেন ইমন নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘‘এই ঘাট ইজারা বাতিল চাই, আমাদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে, আমরা এই ঘাট চিরদিনের জন্য বাতিল চাই। আমাদের অঞ্চলে সাধারণ মানুষদেরকে তারা জিম্মি করে টাকা আদায় করে নিচ্ছে। চরের মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল সে সকল দুর্বল মানুষদেরকে নিয়ে তারা জোর করে ভয় দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে আমরা এই ঘাট থেকে মুক্তি চাই।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও চরের বাসিন্দা ইমাম হোসেন বলেন, ‘‘আমরা ঘাটের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে গেলে হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়। আমাদের সঠিক নিয়মে ঘাটের টাকা নিতে বার বার বলেছি, কিন্তু তারা জোর করে সাধারণ মানুষ কাছে টাকা আদায় করে। তাই আমরা চিরদিনের জন্য ঘাট বাতিল চাই।’’
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলা বলেন, “আমরা ‘ঘাটিয়ালকে বলেছি আমাদের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা যাবে না। কিন্তু তারা শোনেনি। আমাদের এই অঞ্চলে ঘাটের কোন প্রয়োজন নেই। তাই ঘাট জ্বালা থেকে মুক্তি চাই।’’
সমাবেশ শেষে চরবাসীর পক্ষ থেকে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। পরে তিনি চরের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু.
তিনি জানান, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একমাসের জন্য খেয়াঘাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। আগামী ১১ মে তাদের সময় শেষ হবে। এই সময়ের মধ্যে ইজারাদার অতিরিক্ত টোল আদায় করবে না। কোনরকম হয়রানিও করবে না। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে খেয়াঘাট চলবে।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘চরের বাসিন্দারা আজ এসে খেয়াঘাট ইজারা প্রথা বাতিলের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারা ঘাট রাখতে চাচ্ছেন না। তবে এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা একটা কমিটি করব। কমিটি মতামত দেবে। তারপর প্রতিবেদনটি স্মারকলিপিসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।’’
ঢাকা/কেয়া/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঘ ট র ইজ র স ম রকল প ঘ ট ইজ র আম দ র চরব স
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার
ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।
আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।
বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।
অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।
আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।