অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল কিন্তু নেতা নন বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শক্তি, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ এক হয়ে লড়েছিল। কিন্তু ড.

ইউনুস আমাদের জুলাই ঘোষণাপত্র দেননি। এজন্য আমাদের হাতে বিপ্লবের কোনও দলিল নাই। ড. ইউনূস জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দিতে দেননি। এটা তিনি মহাভুল করেছেন। আগামী দিনে জনতাকে এর ফল ভোগ করতে হবে।

সোমবার বিকেল ৫টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘গণঅভ্যুত্থান : বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ শীর্ষক সভাটি আয়োজন করে সেন্টার ফর হেরিটেজ স্টাডিজ।

গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র না থাকায় আমরা দুর্বল হয়েছি উল্লেখ করে এই চিন্তক বলেন, এই অভ্যুত্থানের গণ অভিপ্রায় হচ্ছে গণসার্বভৌমত্ব। এর প্রথম ধাপ হবে সংবিধানে গণসার্বভৌমত্ব উল্লেখ করা। কিন্তু আমরা হাসিনার সংবিধানটাই ছুড়ে ফেলতে পারিনি। এর বদলে আমরা করেছি একটি সংস্কার কমিশন। এর নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তারা অভ্যুত্থান যারা ছিলেন না তারা। কমিশনগুলো জনগণের কাছে থেকে তাদের কথা শোনেনি। এতে আমরা ক্রমশ দুর্বল হয়েছি। ফলে, যারা আপনাদের অশান্তিতে রেখেছে আপনারা তাদের বিচার করতে পারবেন না। তাই গণ সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাষ্ট্রে নতুন স্বাধীন গঠনতন্ত্র লাগবে। 

জনগণের সার্বভৌমত্বকে মূল্যায়ন করে বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং নতুন সংবিধানে তিনটি বিষয় উল্লেখ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ৭২ সালের সংবিধান জনগণ করেনি। ৭১ এর ১০ এপ্রিলের ঘোষণাপত্রের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার বাদ দিয়ে ‘সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ’সহ ৪টি মূলনীতি করা হয়েছিল। এই সংবিধানকে বাতিল করে জনতার অভিপ্রায়ের নতুন গঠনতন্ত্র চাই। জনতার অভিপ্রায়ের জন্য ৩টি বিষয় সংবিধানে উল্লেখ করতে হবে।

দাবি তিনটি হলো- প্রথমত, রাষ্ট্র এমন কোন আইন বা নীতি করতে পারবে না যাতে ব্যক্তির অধিকার হরণ করা হয়। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র এমন কোন আইন বা নীতি করতে পারবে না যাতে প্রাণ- প্রকৃতি- পরিবেশ ধ্বংস হয়। তৃতীয়ত, রাষ্ট্র এমন কোনো আইন বা নীতি গ্রহণ করতে পারবে না যাতে জীবন ও জীবিকা ধ্বংস হয়।

পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও সেখানে ধর্মের প্রসঙ্গে চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা আধুনিক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রে ইসলামের খোঁজ করি। আধুনিক রাষ্ট্র ক্যাপিটাল দিয়ে চলে। আমরা সারাক্ষণ ক্যাপিটালের অধীনে থাকি। পুঁজিবাদের অধীনে থেকে ধর্ম প্রতিষ্ঠা হবে না। আগামী দিনের লড়াই হবে এই পুঁজির বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ে জাতীয়তাবাদে বিভক্ত করে আলাদা হওয়া যাবে না। কারণ দুনিয়াতে জাতীয়তাবাদের যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে। এই সময়ের লড়াই হবে সেটা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে, সেখানে কোনও জাতিবাদ থাকবে না।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান বলতে আসলে কী বুঝায়, এটা আসলে আমাদের সমাজে পরিষ্কার ধারণা নেই। সর্বশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সামনের সাড়িতে অনেক মেয়ে ছিল, কিন্তু তারা হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেল? তারা আর রাজপথে নেই। কারণ, তারা রাজপথে আর নিরাপদবোধ করছে না। আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে রাষ্ট্র আর সরকারের পার্থক্য স্পষ্ট না। ফলে দেশ সামনের দিকে এগোতে পারছে না।

দেশে স্টারলিংক আনার সমালোচনা করে লেখক ফরহাদ মজহার বলেন, ড. ইউনুস স্টারলিংক দেশে এনেছেন। এতে কী লাভ হবে? আপনার নিরাপত্তা, আপনার সিকিউরিটি কোনও কিছুই আর আপনার থাকবে না। সবকিছু ইলন মাস্ক জানবে। আর ইলন মাস্ককে জানেন তো? তিনি ট্রাম্পের সমর্থক। আর ট্রাম্প ইসলাম ঘৃণা করেন। উনি ঘোরতর ইসলামবিরোধী। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের কথা বলে ভাবছেন- আমি চাকরি পাবো! অনেক বেতন পাবো! 

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসঊদ। উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আফরিনা আফরিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড ইউন স গণঅভ য ত থ ন ফরহ দ মজহ র গণঅভ য ত থ ন ফরহ দ মজহ র আম দ র আপন র ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

শামীম ওসমানের ছেলে অয়নের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে হত্যা মামলায় অয়ন ওসমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। 

বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। 

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম জানান, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তাতে এই আটজনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। 

আরো পড়ুন:

নোয়াখালীতে গুলি করে হত্যা: থানায় মামলা, অস্ত্র উদ্ধার

কালীগঞ্জে ‘পেরেক’ মেরে হত্যা 

যদিও আটজনের নাম জানায়নি প্রসিকিউটররা। তবে এই আটজনের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অয়ন ওসমান পালিয়ে রয়েছেন। 

ঢাকা/অনিক/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তরুণ সমাজ দেশপ্রেমে উত্তীর্ণ হয়েছে, বাংলাদেশ উচ্চস্থানে উন্নীত হবে : ডিসি
  • শামীম ওসমানের ছেলে অয়নের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
  • ঐকমত্য কমিশন দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারলে দ্রুত রাজনৈতিক বোঝাপড়া সম্ভব: সাইফুল হক
  • গণঅভ্যুত্থানের তরুণ নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে প্রাণপ্রবাহ
  • জুলাই বিপ্লবী মেয়েরা আজ নিরাপদ বোধ করছে না: ফরহাদ মজহার
  • আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত দুজন শনাক্ত  
  • ড. ইউনূস অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেননি, আমাদের হাতে বিপ্লবের দলিল নেই: ফরহাদ মজহার
  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩