দর্শক ভালো নাটক দেখতে চায়, সেটা বারবারই প্রমাণ হচ্ছে: হিমি
Published: 29th, April 2025 GMT
জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। অভিনেত্রী ও মডেল। তাঁর অভিনীত ১০৯টি নাটক কোটি ভিউ পার হয়েছে। এরই মধ্যে আগামী ঈদের কাজ শুরু করেছেন। ভিউয়ের সাফল্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।
আপনার অভিনীত ১০৯টি নাটক কোটি ভিউর মাইলফলক স্পর্শ করেছে। এ সাফল্য কেমন উপভোগ করছেন?
রীতিমতো বিস্মিত হয়েছি। কখনও আমার নাটকের ভিউ গোনার অভ্যাস নেই। তবে সহকর্মী-ভক্তরা যখন এ ধরনের খবর জানান, তখন ভালো লাগে। আরও ভালো লেগেছে, সহকর্মীরাও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এটা সত্যিই আনন্দের। দর্শকের ভালোবাসার কারণেই এমন সাফল্য এসেছে। সহকর্মী নিলয় ভাইয়া [নিলয় আলমগীর] প্রথম ফেসবুকে পোস্ট করেন। তাঁর পোস্ট দেখেই খবরটি আমি প্রথম জেনেছি।
অসংখ্য খণ্ড নাটক ও ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন, সেক্ষেত্রে বাছবিচার করার সুযোগ কতটা পান?
বাছবিচার করে কাজ করব বলে ইদানীং ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছি না। খণ্ড নাটকেই কাজ করছি। এটি সত্যি যে, অনেক কাজ করছি, কিন্তু তা বাছাই করেই করছি। কিছু কাজ আছে গল্পের আইডিয়া ভালো, কিন্তু চিত্রনাট্য পছন্দ হয়নি। আলাপ আলোচনা করার পরই ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছি। অনেক বেশি কাজ করতে হবে, এটি কখনই মনে করি না। যেটা ভালো লাগে, সেটাতেই অভিনয় করি।
ঈদে আপনার এক ডজনের বেশি নাটক প্রচার হয়েছে। কোন নাটকে বেশি সাড়া পেয়েছেন?
‘একান্নবর্তী’ নাটকটি দর্শক বেশি পছন্দ করেছেন। এ ছাড়া ‘নীল রঙের সাইকেল’ নাটকটিও দর্শক দেখেছেন। এই দুটি কাজ গতানুগতিকতার বাইরে নির্মাণ হয়েছে। সিনিয়র শিল্পীরা এতে অভিনয় করেছেন। সবার কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছি। দর্শক সবসময় ভালো গল্পের নাটক দেখতে চায়। সেটা বারবারই প্রমাণ হচ্ছে। এ ধরনের কাজ করতেও ভালো লাগে।
কোরবানি ঈদের কাজ শুরু করেছেন…
দুই ঈদের মাঝে গ্যাপ খুব কম। এ কারণে কোরবানির ঈদের কাজ বেশ আগেভাগেই শেষ হয়ে যায়। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি নাটকের কাজ করেছি। গত ঈদেরও বেশ কয়েকটি কাজ আছে। সে নাটকগুলো প্রচার হয়নি। কোরবানির ঈদে তা প্রচার হবে।
উপস্থাপনায় এখন আর আপনাকে দেখা যায় না। কারণ কী?
নাটকে ব্যস্ততার কারণে উপস্থাপনা করছি না। দুটো কাজ একসঙ্গে করা কঠিন। উপস্থাপনা ঠিকঠাক করতে পারি, কিন্তু অভিনয়ের মতো এতটা উপভোগ করি না। তবে নতুন আইডিয়ার অনুষ্ঠান পেলে উপস্থাপনায় আপত্তি নেই।
অভিনয়শিল্পী সংঘের নতুন কমিটি এসেছে। নবনির্বাচিত কমিটির কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?
শিল্পীদের জন্যই তো শিল্পী সংঘ। শিল্পীদের পাশে সংগঠন দাঁড়াবে– এটাই বড় চাওয়া। সংগঠনটি এগিয়েছে অনেক দূর। আরও এগিয়ে যাবে, এটিই প্রত্যাশা।
অভিনয়ের পাশাপাশি গানও করছেন। নতুন গান নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করছেন?
গান নিয়ে নিজের কোনো পরিকল্পনা নেই। ‘ইত্যাদি’ ও ‘পরান পাখি’ নাটকের জন্য দুটি মৌলিক গান করেছিলাম। আগামীতে যদি ভালো গানের প্রস্তাব পাই, অবশ্যই করব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন টক অভ ন ত র কর ছ ন ক জ কর করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।