নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পুরুষের অধিকার খর্ব করার নীলনকশ
Published: 2nd, May 2025 GMT
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা বাতিলের দাবি জানিয়েছে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন। এ কমিশনের সুপারিশ পুরুষের অধিকার খর্ব করে নির্যাতনের আইনি ফাঁদ তৈরির গভীর নীলনকশা বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।
শুক্রবার (২ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের ‘সর্বধর্মীয় সংবাদ সম্মেলন’-এ বলা হয়েছে, নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যরা দেশের সব নারীর প্রতিনিধিত্ব করে না এবং তারা নিজেদের মতবাদ দেশের সাধারণ নারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া চেষ্টা করছে।
সর্বধর্মীয় সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যরা দেশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব করেন না। তারা এনজিওদের প্রতিনিধিত্ব করেন। যদি কমিশন করতেই হয়, তাহলে নারীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে করতে হবে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশে পুরুষদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই কমিশন পুরুষদের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই তাদের অধিকার কমানোর সুপারিশ করেছে।
এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে ধর্মীয় বিধির আলোকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত আইন ও অধিকার খর্ব হবে বলেও দাবি করেছে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল কারীম আবরার বলেছেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে প্রকৃত নারী উন্নয়নের কথা আসেনি; বরং সমাজে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। এই রিপোর্ট শুধু ধর্মবিরোধী নয়, এটি অগণতান্ত্রিক, সংবিধানবিরোধী এবং সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। মুসলিমদের বিয়ে, তালাক, অভিভাবকত্ব, সম্পদের বণ্টন সম্পর্কে ইসলামে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু, এই কমিশন গুটিকয়েক মানুষের ব্যক্তিগত মতবাদ এ দেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। অবিলম্বে কমিশন বাতিল করতে হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো কমিশন গঠিত হলে তা যেন এ দেশের মানুষের ধর্মীয় আবেগকে গুরুত্ব দেয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।
বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যালবার্ট পি কস্টা বলেছেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট শুধু ইসলাম ধর্মবিরোধী নয়, একই সাথে এটা খ্রিষ্টান ধর্মসহ যেকোনো ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবে। ধর্ম পালন মানুষের মৌলিক অধিকার। যেকোনো ধর্মের মানুষের পারিবারিক রীতি-নীতি তার নিজ ধর্মের নিয়ম অনুসারে হবে, এটাই স্বাভাবিক। শত শত বছর থেকে তা হয়ে আসছে। কিন্তু, হঠাৎ করে কেউ এসে এই নিয়ম বদলে সিভিল ল করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই কমিশনের রিপোর্টে পুরুষকে নারীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখানো হয়েছে। রিপোর্টে কোথাও সমঅধিকারের কথা বলা হয়েছে আবার কোথাও কোটা চাওয়া হয়েছে, যা দ্বিচারিতার বহিঃপ্রকাশ। এই কমিশনের সদস্যরা সবাই এনজিও-বায়াসড। এরা তাদের ব্যক্তিগত দর্শন সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি প্রদীপ কুমার পাল বলেছেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট একপাক্ষিক এবং পশ্চিমা প্রেসক্রিপশনে তৈরি। এর সাথে নারী উন্নয়নের কোনো সম্পর্ক নেই। নারীর কাঁধে বন্দুক রেখে এরা মূলত এ দেশের মানুষকে ধর্মহীন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কমিশনের রিপোর্টে হিন্দু সম্প্রদায়ের আইনের পরিবর্তে সিভিল ল তৈরির প্রস্তাব করেছে। আমরা তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। হিন্দু সম্প্রদায়ের পারিবারিক আইন কেমন হবে, তা এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ঠিক করবে। আপনাদের এটা ঠিক করার কোনো এখতিয়ার নেই। আমাদের সকল সম্পদ পারিবারিক সম্পদ। কোনো নারী বিয়ের পর যে পরিবারের অংশ হবে, তিনি সেই পরিবারের সম্পদের অংশীদার হবেন। এখানে নারী বা পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পদের কোনো হিসাব নেই। পরিবারের কর্তাব্যক্তি হিসেবে পুরুষরা এই সম্পদের দেখাশোনা করেন মাত্র। কিন্তু, নারী কমিশন কোনো কিছু না জেনে, বিভিন্ন টকশোতে গিয়ে হিন্দু নারীরা সম্পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন।
সভাপতির বক্তব্যে এইড ফর মেনের সভাপতি কাওসার হোসাইন বলেন, এই প্রতিবেদন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তো বটেই, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস ও নৈতিকতার সঙ্গেও বৈসাদৃশ্যপূর্ণ এবং এ দেশের মানুষের ধর্ম পালনের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। প্রস্তাবনায় এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীদের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। প্রতিবেদনের পরতে পরতে আঁকা হয়েছে পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার ও পুরুষের অধিকার খর্ব করে পুরুষ নির্যাতনের আইনি ফাঁদের গভীর নীলনকশা।
তিনি আরো বলেন, ইসলামী আইনে নারীদের পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি দেওয়া হয়েছে। এর অনেক ব্যাখ্যা আছে। তারা সুপারিশে নারীদের সম্পত্তিতে সমানাধিকারের কথা বলেছেন, কিন্তু দায়িত্ব ভাগের বিষয়ে কিছু বলেননি।
কাওসার হোসাইন বলেন, সংস্কার কমিশনে থাকা ব্যক্তিরা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা না বলেই এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, এমন কিছু করা যাবে না, যাতে ধর্মীয় বিধান ও আমাদের হাজার বছরের সমাজ ব্যবস্থায় চলমান প্রথা ভেঙে যায়।
ঢাকা/রায়হান/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বল ছ ন ত ব কর পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পুরুষের অধিকার খর্ব করার নীলনকশ
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা বাতিলের দাবি জানিয়েছে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন। এ কমিশনের সুপারিশ পুরুষের অধিকার খর্ব করে নির্যাতনের আইনি ফাঁদ তৈরির গভীর নীলনকশা বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।
শুক্রবার (২ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের ‘সর্বধর্মীয় সংবাদ সম্মেলন’-এ বলা হয়েছে, নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যরা দেশের সব নারীর প্রতিনিধিত্ব করে না এবং তারা নিজেদের মতবাদ দেশের সাধারণ নারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া চেষ্টা করছে।
সর্বধর্মীয় সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যরা দেশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব করেন না। তারা এনজিওদের প্রতিনিধিত্ব করেন। যদি কমিশন করতেই হয়, তাহলে নারীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে করতে হবে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশে পুরুষদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই কমিশন পুরুষদের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই তাদের অধিকার কমানোর সুপারিশ করেছে।
এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে ধর্মীয় বিধির আলোকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত আইন ও অধিকার খর্ব হবে বলেও দাবি করেছে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল কারীম আবরার বলেছেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে প্রকৃত নারী উন্নয়নের কথা আসেনি; বরং সমাজে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। এই রিপোর্ট শুধু ধর্মবিরোধী নয়, এটি অগণতান্ত্রিক, সংবিধানবিরোধী এবং সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। মুসলিমদের বিয়ে, তালাক, অভিভাবকত্ব, সম্পদের বণ্টন সম্পর্কে ইসলামে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু, এই কমিশন গুটিকয়েক মানুষের ব্যক্তিগত মতবাদ এ দেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। অবিলম্বে কমিশন বাতিল করতে হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো কমিশন গঠিত হলে তা যেন এ দেশের মানুষের ধর্মীয় আবেগকে গুরুত্ব দেয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।
বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যালবার্ট পি কস্টা বলেছেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট শুধু ইসলাম ধর্মবিরোধী নয়, একই সাথে এটা খ্রিষ্টান ধর্মসহ যেকোনো ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবে। ধর্ম পালন মানুষের মৌলিক অধিকার। যেকোনো ধর্মের মানুষের পারিবারিক রীতি-নীতি তার নিজ ধর্মের নিয়ম অনুসারে হবে, এটাই স্বাভাবিক। শত শত বছর থেকে তা হয়ে আসছে। কিন্তু, হঠাৎ করে কেউ এসে এই নিয়ম বদলে সিভিল ল করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই কমিশনের রিপোর্টে পুরুষকে নারীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখানো হয়েছে। রিপোর্টে কোথাও সমঅধিকারের কথা বলা হয়েছে আবার কোথাও কোটা চাওয়া হয়েছে, যা দ্বিচারিতার বহিঃপ্রকাশ। এই কমিশনের সদস্যরা সবাই এনজিও-বায়াসড। এরা তাদের ব্যক্তিগত দর্শন সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি প্রদীপ কুমার পাল বলেছেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট একপাক্ষিক এবং পশ্চিমা প্রেসক্রিপশনে তৈরি। এর সাথে নারী উন্নয়নের কোনো সম্পর্ক নেই। নারীর কাঁধে বন্দুক রেখে এরা মূলত এ দেশের মানুষকে ধর্মহীন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কমিশনের রিপোর্টে হিন্দু সম্প্রদায়ের আইনের পরিবর্তে সিভিল ল তৈরির প্রস্তাব করেছে। আমরা তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। হিন্দু সম্প্রদায়ের পারিবারিক আইন কেমন হবে, তা এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ঠিক করবে। আপনাদের এটা ঠিক করার কোনো এখতিয়ার নেই। আমাদের সকল সম্পদ পারিবারিক সম্পদ। কোনো নারী বিয়ের পর যে পরিবারের অংশ হবে, তিনি সেই পরিবারের সম্পদের অংশীদার হবেন। এখানে নারী বা পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পদের কোনো হিসাব নেই। পরিবারের কর্তাব্যক্তি হিসেবে পুরুষরা এই সম্পদের দেখাশোনা করেন মাত্র। কিন্তু, নারী কমিশন কোনো কিছু না জেনে, বিভিন্ন টকশোতে গিয়ে হিন্দু নারীরা সম্পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন।
সভাপতির বক্তব্যে এইড ফর মেনের সভাপতি কাওসার হোসাইন বলেন, এই প্রতিবেদন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তো বটেই, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস ও নৈতিকতার সঙ্গেও বৈসাদৃশ্যপূর্ণ এবং এ দেশের মানুষের ধর্ম পালনের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। প্রস্তাবনায় এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীদের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। প্রতিবেদনের পরতে পরতে আঁকা হয়েছে পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার ও পুরুষের অধিকার খর্ব করে পুরুষ নির্যাতনের আইনি ফাঁদের গভীর নীলনকশা।
তিনি আরো বলেন, ইসলামী আইনে নারীদের পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি দেওয়া হয়েছে। এর অনেক ব্যাখ্যা আছে। তারা সুপারিশে নারীদের সম্পত্তিতে সমানাধিকারের কথা বলেছেন, কিন্তু দায়িত্ব ভাগের বিষয়ে কিছু বলেননি।
কাওসার হোসাইন বলেন, সংস্কার কমিশনে থাকা ব্যক্তিরা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা না বলেই এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, এমন কিছু করা যাবে না, যাতে ধর্মীয় বিধান ও আমাদের হাজার বছরের সমাজ ব্যবস্থায় চলমান প্রথা ভেঙে যায়।
ঢাকা/রায়হান/রফিক